১৯৫৩-য় ‘সাত নম্বর কয়েদী’র মুক্তি
সুচিত্রার হীরকজয়ন্তী
ভিনয় জীবনের কয়েকটি সাল আমার কাছে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত হয়ে আছে,’ বলছেন সুচিত্রা সেন, গোপালকৃষ্ণ রায়কে। তার পরেই বলছেন, ‘একমাত্র মরে যাবার পর সেই চিহ্নগুলো মুছে যাবে। তার আগে নয়, ভাই।’ কিন্তু কী আশ্চর্য, উদাসীন কলকাতা দেখাল, তিনি বেঁচে থাকতেই তার স্মৃতি থেকে মুছে যেতে পারে তাঁর অভিনয়- জীবনের হীরকজয়ন্তীর লগ্নটাই! সুচিত্রা সেন-অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদী’র মুক্তির ষাট বছর পেরিয়ে গেল গত মাসে, তাঁরই মতো নীরবে, অলক্ষ্যে। ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ মুক্তি পেয়েছিল সুকুমার দাশগুপ্ত পরিচালিত ছবিটি (ডান দিকে তার পুস্তিকা-প্রচ্ছদ)। নীরেন লাহিড়ীর পরিচালনায় ‘কাজরী’ ছবিতে তাঁর প্রথম অভিনয়, সে ছবিও মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৩-তেই, ১০ এপ্রিল।
তার পরে আড়াই দশকের উজ্জ্বল অভিনয়জীবনে উত্তম-সুচিত্রা জুটি হিসেবে তো বটেই, অভিনেত্রী হিসেবেও কিংবদন্তি হয়ে আছেন তিনি। এখন বহু দিন ধরেই স্বেচ্ছা-অন্তরালে, তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা, কানাঘুষো। কেমন দেখতে হয়েছেন এখন, কী খান, নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যান কি না ইত্যাকার কৌতূহল উড়ে বেড়ায় এ শহরের বাতাসে। কিন্তু তাঁর অভিনয়? তার কতটুকু খবর রেখেছে এ শহর? প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদী’ কিংবা ‘কাজরী’ দুর্লভ-দর্শন, তরু মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘অ্যাটম বম্ব’ ছবিটির খবরই বিশেষ কেউ রাখেন না, যে ছবিতে সেই ১৯৫৪-য় দেখা গিয়েছিল সাহসী সুচিত্রা সেনকে। অথচ অভিনেত্রী হিসেবে জুটি-বিহীন এক আত্মপরিচয় তৈরিতে বরাবরই সচেষ্ট ছিলেন তিনি। তাই, ওই বিশেষ ভাবে চিহ্নিত সালগুলির মধ্যে, তিনি বলছেন গোপালকৃষ্ণ রায়কে, “১৯৬১, ১৯৬৩... ১৯৬১-তে সপ্তপদী মুক্তি পেয়েছিল। ১৯৬৩ সালও আমার কাছে স্মরণীয়, সুচিত্রা সেন ওন দ্য বেস্ট অ্যাকট্রেস অ্যাওয়ার্ড ফর দ্য থার্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, মস্কো।’’ (সুচিত্রার কথা, আনন্দ পাবলিশার্স)। তবু আশার কথা, গসিপমুগ্ধ এ কলকাতাতেই কেউ কেউ সযত্ন এই অভিনেত্রীটির সন্ধান করেন, সংগ্রহ করে চলেন তাঁর অভিনয়ের সামগ্রিক মূল্যায়নের বিচিত্র উপাদানগুলি। তেমনই এক জন সোমনাথ রায়ের সংগ্রহ থেকে সঙ্গের তিনটি দুর্লভ ছবি মিলেছে। বাঁ দিকে ১৯৫৩ ও ১৯৫৪-য় সুচিত্রা সেন (সমসাময়িক ‘রূপাঞ্জলি’ পত্রিকা থেকে)।

শিল্পে স্বামীজি
নরেন্দ্রনাথ দত্ত যখন বড় হয়ে উঠছেন তখন কলকাতার শিল্পধারায় এক শূন্যতার কাল। কোম্পানি স্কুলের দিন গিয়েছে, সরকারি আর্ট কলেজ চালু হলেও জাঁকিয়ে বসেনি। ছবি বলতে কালীঘাট পট। ফলে নরেন্দ্রনাথের শৈশবে শিল্পের বিবিধ ধারার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল না। কিন্তু পরে পরিব্রাজক জীবনে ভারতের সমৃদ্ধ শিল্পঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড় ভাবে পরিচিত হন স্বামী বিবেকানন্দ। পাহাড়ি চিত্রকলা থেকে রাজপুত ঘরানা, মুঘল মিনিয়েচার থেকে ওরিয়েন্টাল বাদ পড়েনি কোনও ধারাই। ক্ষেত্রীতে থাকার সময় খুব কাছ থেকে দেখেন জয়পুরি ফ্রেস্কো। কিন্তু সার্ধশতজন্মবর্ষে তাঁকে নিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে অধরা থেকে যাচ্ছিল এই দিকটি। এ বার সেই অভাব পূরণ করল রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার। স্বামীজির জীবনের নানা সময়, নানা মেজাজ, শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব থেকে শিকাগো সম্মেলন সব নিয়ে যোগেন চৌধুরী, গণেশ পাইন (সঙ্গের ছবি), সনৎ কর, ঈশা মহম্মদ, উমা সিদ্ধান্ত, ইউসুফ আরাক্কাল, রবীন মণ্ডল, পরেশ মাইতি, সুব্রত চৌধুরী, লক্ষ গৌড়, ইন্দ্রপ্রমিত রায়, সুনীল দাস, অশোক ভৌমিক, রামকুমার মান্না, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় সহ অনেকের শিল্পকর্ম আইসিসিআর-এর তিনটি গ্যালারি জুড়ে প্রদর্শিত। ‘রেনেসাঁস অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়র্ল্ড লাইফ অ্যান্ড মিশন অব শ্রীরামকৃষ্ণ অ্যান্ড স্বামী বিবেকানন্দ’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার ও আইসিসিআর কলকাতা আয়োজিত, চলবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত।

এত দিনে
ফিটন চেপে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় চলেছেন রোগী দেখতে। তিনি মেডিক্যাল কলেজের প্রথম মহিলা চিকিৎসক। পেয়েছিলেন বিলিতি ডিগ্রিও। নীলরতন সরকারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্র্যাকটিস জমিয়েছেন। ১৮৮৩-তে কাদম্বিনী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তখন ধারণা ছিল বিজ্ঞান পড়লে নারীত্ব নষ্ট হবে! ক্রমাগত কাদম্বিনীর বিরোধিতা করেছেন শিক্ষক ডা রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র। এম বি পরীক্ষায় অন্য বিষয়ে ভাল ফল করলেও কাদম্বিনীকে তিনি ফেল করান এক নম্বরের জন্য। তার আগে এলএমএস পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। অধ্যক্ষ ডা কোটস কাদম্বিনীকে ‘গ্র্যাজুয়েট অব দ্য মেডিক্যাল কলেজ অব বেঙ্গল’ উপাধি দেন। মেয়ে বলে যে লড়াই কাদম্বিনীকে লড়তে হয়েছিল, সেই লড়াই-ই তিনি আবার লড়লেন, মৃত্যুর পরে, নিজের জন্মশতবর্ষে। বৈধ ডিগ্রি ছিল কি না, তিনি-ই প্রথম মহিলা চিকিৎসক কি না এই বিতর্কে এবারও আটকে ছিল তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি। অবশেষে মেডিক্যাল কলেজের কিছু প্রাক্তনীর চেষ্টায় সম্প্রতি কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রথম মহিলা চিকিৎসক হিসেবে কাদম্বিনীর নামে গড়ে উঠল সদ্যোজাত শিশুদের জন্য ৬০টি শয্যার নিওনেটাল ওয়ার্ড।

নারীর মঞ্চ
ঢাকা থেকে আসছেন রোকেয়া রফিক বেবি, শিমুল ইউসুফ; গুয়াহাটি থেকে পাকিজা বেগম, তাঁদের নির্দেশিত নাটক নিয়ে। কলকাতা থেকে সোহিনী সেনগুপ্ত, ঈশিতা মুখোপাধ্যায়, উমা ঝুনঝুনওয়ালা, অবন্তী চক্রবর্তী নির্দেশিত নাটক। নান্দীপট-এর ‘নারীর মঞ্চ’ এ বার জমজমাট। আন্তর্জাতিক নারীদিবস উপলক্ষে ২০১০ থেকে প্রতি বছরই এ আয়োজন, ‘মেয়েদের নির্দেশিত নাটকের উৎসবে উচ্চারিত হয় মেয়েদের নিজস্ব স্বর’, প্রকাশ ভট্টাচার্য জানালেন নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। ৮-১৪ মার্চ, মিনার্ভা থিয়েটারে প্রতি দিন এ-উৎসব।

সেই লড়াই
মুখতারমাই আত্মহত্যা করেননি, পালিয়ে যাননি কোথাও, রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এগারো বছর আগে পাকিস্তানের মিরওয়ালা গ্রামের মুখতারমাইকে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁর ভাইয়ের ‘অশালীন’ আচরণের শাস্তি হিসেবে। এই অবধি ঘটনাটায় নতুন কিছু নেই। কিন্তু তার পরে শুরু হল আর এক ইতিহাস। মুখতার মামলা করলেন। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আদালতে সেই মামলায় ফাঁসির আদেশ হয় ছয় অভিযুক্তের। পরে তারা ছাড়া পেয়ে যায় লাহোর হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে। সংবাদপত্রে আলোড়ন ফেলা মুখতারের লড়াই এ বার ‘রঙ্গকর্মী’র নতুন নাটক ‘হম মুখতারা’য়। ১০ মার্চ আইসিসিআর-এ পরবর্তী অভিনয়। নির্দেশক উষা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘মেয়েদের প্রতি বেড়েই চলা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শিল্পের মাধ্যমে লড়াইয়ে মুখতারের জীবন আমার প্রেরণা হয়ে এসেছে।’

প্রথা ভেঙে
আলকাপ নিয়ে কাজ করতে নেমে নাজমুল হক-এর ঘনিষ্ঠতা লোকশিল্পীদের সঙ্গে। ক্রমে মুর্শিদাবাদের তরুণ জড়িয়ে গেলেন লোকগানে। কলকাতায় পড়তে এসে সে গানের চর্চা শুধু প্রথায় আটকে থাকল না। ‘লোকগানের আদলটা রেখে তাকে কী করে কথায় ও সুরে এই প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায় সেটা ভেবেই এক সময় কীর্তনের সুরে নাগরিক কথা বসালাম।’ তেমনই কিছু নিরীক্ষামূলক গান নিয়ে প্রকাশিত হল তাঁর গানের সিডি ‘রামধনু’ (টি সিরিজ)। দশটি গানের আটটিই তাঁর কথা ও সুর, বাকি দুটি শিবাশিস দণ্ড ও অসিতবরণ চক্রবর্তীর।

শিক্ষণীয়
সংগ্রহালয় হয়ে উঠতে পারে এক আদর্শ শিক্ষাকেন্দ্র এমনটাই মনে করেন ব্রিটিশ সংগ্রহশালা বিশেষজ্ঞ জেন উইকস। ও দেশে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এ অভিজ্ঞতাই হয়েছে তাঁর। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন লন্ডন অথবা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল মিউজিয়মের উদ্যোগের কথা। নৃতত্ত্বের এই ছাত্রী পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে, তার পর ম্যানেজার হন রয়্যাল অবজারভেটরির। এখন ওঁর পরিচিতি ঐতিহ্য ও সংগ্রহালয় উপদেষ্টা হিসেবে, রয়েছেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে। যুক্ত রয়েছেন নানা প্রতিষ্ঠানে, সংগ্রহশালার উন্নয়নে কাজ করেছেন ব্রাজিল, চিন, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ ইয়োরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে। সম্প্রতি কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিলে জানালেন ওঁর সংগ্রহালয় সংক্রান্ত ভাবনার কথা। কলকাতায় দেখলেন ভারতীয় সংগ্রহশালা, ভিক্টোরিয়া এবং বিড়লা শিল্প সংগ্রহালয়।

উজানি মেয়ে
দৈনন্দিন জীবনে নারীবাদের অনায়াস যাতায়াতের পরিসর তৈরি করতে দীর্ঘদিন কলম ধরেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক শেফালি মৈত্র। তাঁর নতুন বাংলা বই, উজানি মেয়ে: সিমন দ্য বোভোয়ার জীবন দর্শন (এবং মুশায়েরা) বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীবাদ চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন যশোধরা বাগচী। ১৯০৮-এ ফ্রান্সের এক অভিজাত রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম সিমনের। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এই মেয়ের সঙ্গেই যখন পরিচয় হল প্যারিসের নবীন ভাবুক জ্যঁ পল সার্ত্রের, মোড় বদলে গেল সিমনের জীবনে। বিয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করলেন বোভোয়া, থাকলেন সার্ত্রের সঙ্গে, পরস্পরের স্বাধীনতার শর্তে। প্রকৃত পক্ষে দার্শনিক হিসেবে হয়তো সার্ত্রের থেকে অনেক বড় ছিলেন বোভোয়া। সিমন ‘উজানি’- কারণ, যে মেয়ে স্রোতের বিরুদ্ধে চলে, একই তীব্রতায়, তাকেই তো এমন নামে ডাকা যায়, বললেন শেফালি।

বসুমতী
নব্বই বছরের ঐতিহ্য সেই সাময়িকপত্রের। একদা বাংলা সাহিত্যের অনেকটারই ধারক ছিল সে পত্রিকা। কিন্তু এক দিন ‘মাসিক বসুমতী’র সেই বসুধারা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘উপেন তো কিছু চায় না, ও শুধু বলে ওর ছোট দরজাটা যেন বড় হয়। তাই তো হয়েছে, আরও হবে।’ সেই ছোট দরজাটা বড় হয়েছিল, অর্ধশতকেরও বেশি সময় জুড়ে বসুমতী সাহিত্য মন্দির এবং দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক বসুমতী চলেছে রমরম করে। কিন্তু তার পরে ক্রমেই দরজাটা ছোট হতে হতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সরকার অধিগ্রহণ করে সংস্থাটি। এখন আবার নতুন করে বসুমতীর সেই ঐতিহ্যবাহী বাড়ি থেকেই নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ‘মাসিক বসুমতী’। সেই সমৃদ্ধ ইতিহাস এ বার তথ্যচিত্রে। ডিভিডিতে প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকাটির ইতিহাস নিয়ে তথ্যচিত্র ‘ন হন্যতে’। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে মাসিক বসুমতী-র সুনীল-সংখ্যা। পরের সংখ্যার বিষয় বসন্ত, তার পরে বাংলা গান, জানালেন পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক ও বসুমতী কর্পোরেশন লিমিটেডের অধিকর্তা শ্যামল বিশ্বাস।

বিপ্লবে নারী
স্বাধীনতা সংগ্রামে মেয়েদের ভূমিকা বললেই মাতঙ্গিনী হাজরার ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু গাঁধীবাদী আন্দোলনের বাইরে? সেখানেও প্রীতিলতা, বীণা, কল্পনা/ শান্তি আর সুনীতির চেনা ছায়া। কিন্তু বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ইন্টেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চের ফাইলে মোটামুটি ১৯২০-’৪৭ পর্বে এমন দুশোরও বেশি মামলার খবর মিলছে। সন্ত্রাসবাদী বা বামপন্থী আন্দোলনে জড়িত এই মেয়েদের কথা আমরা মনে রাখিনি। কী সামাজিক অবস্থায় তাঁরা এই আন্দোলনে নেমেছিলেন, ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। ‘আর্কাইভ্স উইক’ উপলক্ষে রাজ্য লেখ্যাগারের এ বারের বার্ষিক প্রদর্শনী এঁদের নিয়েই। ৪ মার্চ দুপুর বারোটায় ৪৩ শেক্সপিয়ার সরণি-তে এটি উদ্বোধন করবেন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সঙ্গে আছে ওয়েবসাইট উদ্বোধন এবং ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ বিষয়ক নথিসংকলন উদ্বোধন। বলবেন বিনয়ভূষণ চৌধুরী। প্রদর্শনী ১০ মার্চ পর্যন্ত (১-৭টা), তার পর এক বছর সাড়ে ১১টা- সাড়ে ৪টে।

নবীন প্রতিভা
নতুনদের মধ্যে চোখে পড়ার মতো অভিনেত্রী, দারুণ রেঞ্জ। এক দিকে ‘তৃতীয় আরেকজন’-এ তুলি’র মতো নাগরিক চরিত্রে (সঙ্গের ছবি); অন্য দিকে ‘আলিবাবা’-য় মর্জিনা’র চরিত্রে, তাতে একাই একগুচ্ছ গান গায়। নাচেও পারদর্শী। তূর্ণা দাশ সম্পর্কে বলছিলেন কিশোর সেনগুপ্ত, কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র’র কর্ণধার। তাঁদের অভিনয়পর্বের পনেরো বছর পূর্তি উপলক্ষে ওই দু’টি নাটকই হবে অ্যাকাডেমি’তে ৬ ও ১৫ মার্চ। ৮ মার্চ গিরিশ মঞ্চে তাঁদের অন্য প্রযোজনা ‘মেয়েটি’। কমবয়সিদের ভিতর তূর্ণা যে অনেকটাই এগিয়ে তার সমর্থন অবন্তী চক্রবর্তীর কথাতেও, ‘নতুন প্রজন্মের মধ্যে ও লম্বা দৌড়ের ঘোড়া’, তাঁর ‘চৈতালি রাতের স্বপ্ন’-য় হেলেনা’র চরিত্র করেন তূর্ণা। এ ছাড়া সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘শূন্য শুধু শূন্য নয়’, ‘বিসর্জন’-এ অপর্ণা, অরুণ মুখোপাধ্যায়, উষা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাটকেও। রবীন্দ্রভারতী-র নাটক বিভাগের কৃতী ছাত্রী, এশিয়াটিক সোসাইটিতে ‘প্রাচীন ভারতীয় নাটক’ নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। নিরঞ্জন গোস্বামীর কাছে নাটকের হাতেখড়ি। বয়ঃসন্ধিতে শিখেছেন সোহাগ সেনের কাছে, ‘উনিই আমায় থিয়েটারকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন’, বলছিলেন তূর্ণা। ইচ্ছে ‘ভাল কাজ করা। তবে বাংলার বাইরেও সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছতে চাই।’


স্মরণ
বাংলা সিরিয়ালগুলো একটু দেখো, নইলে আমরা খাব কী! পরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হলে কথাটি বলতেন ইন্দ্রাশিস লাহিড়ী। লখনউয়ে জন্ম ১৯৬২-তে, তার পর এ শহরে। সাংবাদিক পিতা নিখিলেশের কাছে লেখালেখিতে হাতেখড়ি। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। জোছন দস্তিদারের ডাকে সোনেক্স-এ যুক্ত হন চিত্রনাট্য লেখার কাজে। ’৯১-এ যোগ দেন লা মার্টিনিয়র স্কুলে। ২০০৫ নাগাদ চাকরি ছাড়লেন শুধু লেখালেখি নিয়ে। দু’বছর পর আবার শিক্ষকতায়, সেন্ট জেমসে, ছিলেন বর্তমান পর্যন্ত। এখানেই গত বছর অভিনীত হয় ওঁর নাটক ‘অ্যালিস-এর আবোল তাবোল’। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সেই মাউসট্র্যাপ অবলম্বনে লিখেছিলেন ‘মরবে ইঁদুর বেচারা’। ১৯৮৯-এ নান্দীকার উৎসবে চেনামুখ করেছিল ওঁর ‘ইচ্ছেগাড়ি’ নাটকটি। সফল নাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সময় লাগেনি তাঁর। সায়কের ‘পিঙ্কিবুলি’, ‘দৌড়নামা’, ‘বাসভূমি’, চেনামুখের ‘দৃষ্টিকন্যা’, ‘জলজ্যান্ত’ নাটকে ছড়িয়ে আছে ওঁর অনুভূতির স্বাক্ষর। কাজ করেছেন ‘শ্যাওলা’, ‘কনকাঞ্জলি’ ধারাবাহিকে। ইংরেজিতে লিখেছেন ‘লেডি ম্যাকবেথ্স সয়ার’ আর বাংলা নাট্য সংকলন ‘নয় এক্কে নয়’। ১৯৯৭-এ ‘বহিরাগত’-র জন্য নাট্য আকাদেমির শ্রেষ্ঠ নাট্যকার পুরস্কার, ২০১১-য় পেয়েছেন সত্যেন মিত্র পুরস্কার। নিজেই গড়েন ‘কালকূট নাট্যসংস্থা’। এখানেই পরিচয় মেঘনাদেবীর সঙ্গে, পরিণয় ১৯৯০-তে। ইচ্ছে ছিল ছবি পরিচালনা করবেন। জীবনের চিত্রনাট্য অসমাপ্ত রেখে ৫ ফেব্রুয়ারি চলে গেলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি শিশির মঞ্চে কথা আর নাট্যাংশে স্রষ্টাকে অভিবাদন জানালেন নাট্যকর্মীরা। সঙ্গে ইন্দ্রাশিসের ছবি শিল্প নির্দেশক প্রভাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলিতে।

   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.