হবু শ্বশুরবাড়ির লোকের অপমান সহ্য হয়নি মেয়েটির। সটান জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই পরিবারে বধূ হিসেবে কিছুতেই যাবেন না। এর পরে হাজার চেষ্টা করেও বিয়ের পিঁড়িতে বসানো যায়নি তাঁকে। বরং মেয়েটির ব্যক্তিত্ব দেখে পড়শি এবং আত্মীয়দের তাঁর সিদ্ধান্তকেই মেনে নিতে হয়। স্থানীয় কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় যৌতুকের টাকা এবং গয়না ফেরত দিয়ে পিঠটানে বাধ্য হয় বরপক্ষ।
বিয়ে ভাঙার দুঃখ অবশ্য পেতে হয়নি সাহসী ওই তরুণীকে। সে দিন আমন্ত্রিত আর এক পরিবারের ছেলের সঙ্গে চটজলদি বিয়ে ঠিক হয় তাঁর। সেই বরের গলায় মালা দেন মেয়েটি, নির্দিষ্ট লগ্নেই।
হুগলির শ্রীরামপুরের তারাপুকুরের হরিজনপল্লির তরুণী চাঁদনি হরির বিয়ে ঠিক হয়েছিল বিধাননগরের এক যুবকের সঙ্গে। কয়েক দিন আগে পণের বেশ কয়েক হাজার টাকা এবং গয়না ছেলের বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ছিল বিয়ের দিন। মেয়ের বাড়ির লোক এবং প্রতিবেশীরা জানান, ওই দিন রাত ১২টা নাগাদ পাত্র বিয়ে করতে আসেন। তার বেশ কিছু ক্ষণ পরে লাক্সারি বাস এবং কয়েকটি গাড়ি বোঝাই হয়ে আসেন দু’শোরও বেশি বরযাত্রী। মাঝরাতে ৭০-৮০ জন বাড়তি লোক দেখে চোখ কপালে উঠে যায় মেয়ের বাড়ির লোকের। |
অত রাতে বাড়তি খাবার জোগাড় করতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু ছেলের বাড়ির লোকেরা বলেন, যত ক্ষণ পর্যন্ত সকলের খাওয়া না হচ্ছে, তত ক্ষণ পাত্র বিয়েতে বসবেন না। বিয়ে
ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় পাত্রপক্ষের লোকজনের হাতে-পায়ে ধরেন মেয়ের বাড়ির লোক। কিন্তু অত্যন্ত কুৎসিত ভাষায় তাঁদের গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত এক বরকর্তা বলে ওঠেন, “সিঁদুর পরিয়ে নিয়ে চল। ওখানে মজা দেখাব।”
এই কথা শুনেই বেঁকে বসেন চাঁদনি। বাবা-মাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যে বাড়ির লোক বিয়ের আগেই এমন আচরণ করেন, সেই বাড়িতে তিনি কিছুতেই বধূ হিসেবে যাবেন না। পাত্রপক্ষ ফিরে যেতে রাজি হলেও যৌতুকের টাকা-গয়না ফেরত দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। শুক্রবার সকাল হতেই বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় কাউন্সিলর পিন্টু নাগকে। শেষমেষ তাঁর মধ্যস্থতায় টাকা-গয়না ফেরত দিয়ে মুচলেকা লিখে ফিরে যান পাত্রপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দা বিক্রম মণ্ডল বলেন, “রাতে হুলুস্থুল কাণ্ড করছিল ছেলের বাড়ির লোকেরা।”
এ দিকে, বিয়ে ভাঙার পরে মুষড়ে পড়েছিলেন সকলে। এই সময়েই এগিয়ে আসেন বিবাহসূত্রে ওই পরিবারের আত্মীয়া পুতুল হরি। নিজের ছোট ছেলে বিনোদকে রাজি করিয়ে তাঁর সঙ্গে চাঁদনির বিয়ের প্রস্তাব দেন। পুতুলদেবী বলেন, “দোষ করল ছেলেবাড়ির লোকজন, আর কষ্ট পাবে মেয়েটা, এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। বউ হিসেবে চাঁদনিকে আমার পছন্দও হয়েছে।”
চাঁদনির মা সীমাদেবী বলেন, “বেয়ান অনেক বড় মনের পরিচয় দিলেন। বুক থেকে যেন পাথর সরে গেল।” নৈহাটির গৌরীপুরে বিনোদের বাড়ি। সেখান থেকে বিনোদের বন্ধুরা শ্রীরামপুরে চলে আসেন। শুক্রবার সন্ধায় ওই মণ্ডপেই বিয়ে হয় চাঁদনি-বিনোদের।
নিমন্ত্রণ বাড়িতে এসে বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার আগে বিনোদ নিজে কী বলছেন?
মায়ের পাশে বসে লাজুক হাসি হাসছিলেন সুদর্শন যুবকটি। শুধু বললেন, “বিয়ের জন্য এত কম সময় পেলাম, দাড়িটাই কাটা হয়নি।” |