কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা দিচ্ছেন ২৯ জন বন্দি। সে সবের তোয়াক্কা না করেই রীতিমতো সাউন্ডবক্স বাজিয়ে মেদিনীপুর সংশোধনাগার চত্বরে শনিবার সভা করল তৃণমূল প্রভাবিত ‘বঙ্গীয় কারারক্ষী সমিতি’।
মাধ্যমিক চলাকালীন মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি থাকে। সে সব নিয়মের পরোয়া না করে এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মেদিনীপুর সংশোধনাগার চত্বরে নানা দাবিতে সভা শুরু করে ‘বঙ্গীয় কারারক্ষী সমিতি’। এই সংগঠনটি তৃণমূল প্রভাবিত ‘স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’ (ইউনিফায়েড) অনুমোদিত। দুপুর ১২টায় যখন মাধ্যমিকের ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা শুরু হল, সভা তখন সরগরম। ১টা নাগাদ সভায় যান ইউনিফায়েডের জেলা সম্পাদক অরুণ প্রতিহার, সহ-সম্পাদক অনুপ মান্না। ইতিমধ্যে খবর যায় মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্তের কাছে। তিনি জেল সুপারকে ফোন করেন। এর পরেই সওয়া ১টা নাগাদ সাউন্ড বক্স খুলে ফেলা হয়। |
সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নিরুপম খাঁড়ার দাবি, “জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই সভা করেছি। বক্সের আওয়াজ কম ছিল। ফলে, সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” তবে কেন সভা শেষের আগেই সাউন্ডবক্স খুললেন? নিরুপমবাবুর জবাব, “যখন দেখি বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে, জেল কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানাচ্ছেন, তখন বক্স খুলে ফেলার নির্দেশ দিই।” ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে সিপিএম প্রভাবিত ‘কারারক্ষী সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ’। সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য অতুল সাহার প্রশ্ন, “পরীক্ষার সময় জেল কর্তৃপক্ষ এমন সভার অনুমতি দেন কী করে?” জেল সুপার খগেন্দ্রনাথ বীর অবশ্য ‘‘এ নিয়ে কিছু বলব না’’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে এআইজি (কারা) কল্যাণ প্রামাণিক বলেন, “কেন এমন হল, জেল সুপারের থেকে খোঁজ নিচ্ছি। ”
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী ওই ২৯ জন বন্দির মধ্যে ২০ জন সাজাপ্রাপ্ত। বাকি ন’জন বিচারাধীন বন্দির মধ্যে আট জন মাওবাদী মামলায় ধৃত। ওই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মানস মাহাতো আবার জেলবন্দি জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতোর শ্যালক। গত বছর এই সংশোধনাগার থেকে ১৬ জন মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ১০ জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ৫ জন পাশ করেন দ্বিতীয় বিভাগে। |