তিন জেলা-শহরে কপ্টার
চালুর ঘোষণা, উঠছে প্রশ্ন
গে চালু হওয়া কোচবিহারের উড়ান এখন মাটিতে। নতুন জোয়ার আসেনি রাজ্যের শিল্প বা পর্যটনে। তার পরেও সুন্দরবন, দিঘা ও শান্তিনিকেতনে হেলিকপ্টার-সার্ভিস চালু করতে চায় রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সাম্প্রতিক ঘোষণায় যুগপৎ বিস্মিত রাজ্যের শিল্পমহল এবং প্রশাসনের বড় অংশ।
মাসখানেক আগে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ওই তিন পর্যটনকেন্দ্রে বিমানবন্দর গড়া হবে বলে ঘোষণা করেন। তাঁর দাবি, সুন্দরবন, দিঘা ও শান্তিনিকেতনে বিমানবন্দর গড়ার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। কলকাতা থেকেও এই সব জায়গায় বিমান বা হেলিকপ্টারে নিয়মিত যাতায়াত করার মতো যাত্রীও রয়েছে।
কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের একটা বড় অংশ ভিন্নমত। মহাকরণের এক কর্তার মন্তব্য, “যে সরকার ভাড়া না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে কার্যত অনড় থাকায় বিভিন্ন রুট থেকে বাস উঠে যাচ্ছে, তারা কী করে জেলা-শহরে হেলিকপ্টার ও ছোট বিমান চালানোর কথা ঘোষণা করে!”
অন্য প্রশ্ন তুলেছে শিল্পমহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিনিয়োগকারীদের বক্তব্য, কম সময়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য হেলিকপ্টার-সার্ভিসের যাত্রী হন সাধারণত শিল্পোদ্যোগী বা শিল্প-সংস্থার বড়-কর্তারা। রাজ্যে নতুন শিল্প এলে তবেই যাত্রীতালিকায় নিয়মিত ভাবে তাঁদের পাওয়া যাবে। কিন্তু এ রাজ্যের সাম্প্রতিক ছবি হল, শিল্পতালুক হলদিয়ায় শাসকদলের একাংশের সঙ্গে সংঘাতের জন্য চলে যেতে হয়েছে শিল্পসংস্থাকে। প্রায় দু’বছরের সরকার এখনও সুসংহত শিল্পনীতি ঘোষণা করতে পারেনি। রাজ্যের জমি-নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়ছে না। রাজ্যে আসছে না নতুন শিল্প। শিল্পোদ্যোগীদের প্রশ্ন, “হেলিকপ্টারে চড়বেন কে।”
মুদ্রার অন্য পিঠে রয়েছে পর্যটন পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্র বলতে দিঘা-মন্দারমণি-সুন্দরবন, শান্তিনিকেতন-মুর্শিদাবাদ-দার্জিলিঙের মতো কয়েকটি জায়গা। প্রত্যেকটি গন্তব্যই কলকাতা থেকে কয়েকশো কিলোমিটারের মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রী দিঘাকে গোয়া বানানোর ঘোষণা করলেও, ঘটনা হল রাজ্যের সমুদ্র উপকূল বরাবর এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে মাঝারি বা সাধারণ মানের কিছু হোটেল, মামুলি কিছু দোকানপাট ছাড়া পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনও আকর্ষণ নেই। পর্যটক টানতে রাজ্যের উদ্যোগে দিঘায় প্যারা-গ্লাইডিং, প্যারাসেলিং চালু হলেও, বন্ধও হয়েছে খুব দ্রুত। বিদেশি বা বড় মাপের পর্যটকদের থাকার জন্য বিলাসবহুল হোটেল নেই। সব মিলিয়ে উন্নত পরিকাঠামো, যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত, ব্যবস্থাপনার অভাবে পর্যটক আকর্ষণেও এ রাজ্য অনেকটা পিছিয়ে । ফলে পর্যটন সংস্থার কর্তাদেরও ধন্দ, “হেলিকপ্টারে কে চড়বেন?”
শিল্প বা পর্যটন মহলের এই আশঙ্কা অমূলক নয়। বছর দেড়েক আগে রাজ্যের আহ্বানে ‘নর্থ-ইস্ট শাট্ল’ নামে একটি সংস্থা ১৮ আসনের বিমান এনে কিছু দিন কলকাতা-কোচবিহার রুটে উড়ান চালায়। কিন্তু যাত্রীর অভাবে বিপুল লোকসান হওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যেই তারা পাততাড়ি গোটায়। নিয়মিত যাত্রী না হওয়ায় কলকাতা থেকে দু’বার হেলিকপ্টার পরিষেবা চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে ‘কার্ট এয়ার’ নামে এক সংস্থা। হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী পেয়েছিল তাদের হেলিকপ্টার। বেহালার ফ্লাইং-ক্লাবের হেলিপ্যাড থেকে তাদের হেলিকপ্টার ছাড়ত। কিন্তু দিঘা-শান্তিনিকেতন-সুন্দরবন যাবেন বলে কেউ উৎসাহ দেখাননি। তবে শিল্পনগরী বলে পরিচিত হলদিয়ায় বার কয়েক ওই হেলিকপ্টারটি যাতায়াত করেছিল। কার্ট-এয়ারের সিইও প্রদীপ বিশ্বাসের কথায়, “ভারী শিল্প না থাকলে ছোট বিমান বা হেলিকপ্টারের জন্য নিয়মিত যাত্রী পাওয়া যাবে না।” এই সংস্থার হেলিকপ্টার দু’টি এখন অন্য রাজ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে।
এখানেই আসছে অন্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা। সূত্রের খবর, এখন দিল্লি বিমানবন্দরে গড়ে ১০টি হেলিকপ্টার প্রায় সব সময় মজুত থাকে। মুম্বইয়ের জুহু বিমানবন্দর থেকে গড়ে ২০টি হেলিকপ্টার রোজ ভাড়া খাটে। নরেন্দ্র মোদীর আমদাবাদেও প্রতি দিন গড়ে চার-পাঁচটি করে হেলিকপ্টার ভাড়ায় চলছে। আমদাবাদের ‘অ্যাডভান্টেজ এভিয়েশন’-এর কর্তা রাজেশ গুজ্জর জানালেন, মূলত বড় সংস্থাই নিয়মিত ভাড়া নেয় হেলিকপ্টার ও ছোট বিমান। আগে মুম্বই থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছিল হেলিকপ্টার। এখন নিয়মিত আমদাবাদে পাওয়া যাচ্ছে। ভদোদরা-সুরাতেও পাওয়া যাচ্ছে হেলিকপ্টার। সেখানে কলকাতায় একটিও হেলিকপ্টার নেই। কেউ ভাড়া চাইলে রাঁচি থেকে তা উড়িয়ে আনতে হবে। ডেকানের একটি ছোট বিমান শহরে রয়েছে। তবে তার ভাড়া জোটে না! এই যেখানে দশা, সেখানে নতুন তিন জেলা-শহরে উড়ান চালুর ভাবনা কতটা সঙ্গত, আর কতটা ফানুস, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.