কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী • কলকাতা |
ভোটের দিন এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু উনিশ মাসের সরকারে বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অল ইন্ডিয়া খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অ্যান্ড ব্যাকওয়ার্ড পিপলস পাটি। রাজ্যে অন্য সংখ্যালঘু ও দলিতদের দলের সঙ্গেও আসন সমঝোতার চেষ্টা চালাবে তারা।
দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অ্যান্টনি অরুণ বিশ্বাস বলেন, “সরকারের একপেশে মনোভাবের প্রতিবাদে ও নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ৭ হাজারেরও বেশি আসনে প্রার্থী দেব।” মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির রাজ্য ভিত্তিক অন্য দল ও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গেও পঞ্চায়েতে আসন সমঝোতার চেষ্টা চালাবেন তাঁরা। কথা হবে ফুরফুরার পীর ত্বোহা সিদ্দিকির সঙ্গেও। কেন ত্বোহা সিদ্দিকী? অরুণবাবুর বক্তব্য, রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর জোরালো প্রভাব রয়েছে। তাই মুসলিমদের সঙ্গে তিনি যেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রার্থীদেরও সমর্থন দেন সে জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হবে। অরুণবাবুর অভিযোগ, “কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে আমাদের লাভ হচ্ছে না। গত বিধানসভা নির্বাচনে আমরা তৃণমূলকে সমর্থন করেছিলাম। এখন দেখছি, সংখ্যালঘু উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও কাজ করছেন না।”
রাজ্যে প্রথম ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের দল খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ৩০০ জন প্রার্থী দিয়ে ৫০টিরও বেশি আসনে জিতেছিল বলে জানান অরুণবাবু। তাঁর কথায়, “১৯৭৭ সালে আমাদের দল নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত হয়। তার পর থেকে এক বার করে পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তার পরেই সিদ্ধান্ত হয় শুধু খ্রিস্টান নন, রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষকেও আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই পরবর্তীকালে দলের নামের সঙ্গে ‘অ্যান্ড ব্যাকওয়ার্ড পিপলস’ কথাটি যুক্ত করা হয়। এই নতুন দল এ বারের পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী দেবে। আমাদের আশা, তিন হাজারের বেশি আসনে জয়ী হব।” অরুণবাবু জানান, তাঁরা মূলত সেই সব এলাকায় প্রার্থী দেবেন, যেখানে তাঁদের সম্প্রদায় পরিচালিত স্কুল, সেবাকেন্দ্র ইত্যাদি রয়েছে। সেই হিসেবে নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলায় প্রার্থী দেবে খ্রিস্টান দল।
রাজ্যে বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপি-র উল্টো শিবিরে মুসলিম লিগ-সহ একাধিক মুসলিম সংগঠন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এই সব দলের প্রচারে অনেক সময়ই ধর্মীয় ভাবাবেগ গুরুত্ব পেয়েছে বলে রাজনীতিকরা মনে করেন। এ বার মুসলিম সংগঠনগুলি একক ভাবে না লড়ে ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র ছত্রছায়ায় নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও তারা প্রার্থী দিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটেও তার ব্যতিক্রম হবে না। ফলে এ বার আরও একটি দল পঞ্চায়েতে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিল, যারা প্রচারে নিজেদের সম্প্রদায়ের দাবিগুলি তুলতে চায়। তার চেয়েও যেটা তাৎপর্যপূর্ণ, পঞ্চায়েত ভোটে সংখ্যালঘু-দলিত জোট বেধে লড়লে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির ভোটের হিসেব পাল্টে যেতে পারে অনেক জায়গাতেই। |