ছবিটা তেমন স্পষ্ট আসছে না। নায়ক-নায়িকা নাচের তাল মাঝে মধ্যেই সম্প্রচারের বেয়াদপিতে কেটে যাচ্ছে। তবে গানের বিরাম নেই, ‘..সাজান কে আঁখো মে পেয়ার..’। বছর পনেরোর মেয়েটি বই হাতে ঘরে এসে মিনমিন করে বলেছিল, “বাবা একটু আস্তে করবে। আমার তো মাধ্যমিক চলছে, পড়তে..।” কথা শেষ হয় না। মেয়ের অনুরোধে তাঁর ফুরফুরে মেজাজে ছেদ পড়ে। টলোমলো পায়ে এগিয়ে গিয়ে টিভি-র আওয়াজই শুধু বাড়িয়ে দিলেন না, মেয়ের হাত থেকে বই কেড়ে নিয়ে ছুড়ে দিলেন উঠোনে।
নতুন নয়। মদ্যপ কর্তার ‘অমনুশাসনে’ কৃষ্ণনগরের মিশন পাড়ার ওই পরিবার প্রতি দিনই আতঙ্কে থাকে। মদ খেয়ে বাড়ি ঢুকে এই বুঝি শুরু হল ‘অত্যাচার’। তবে বিএসএনএলের ঠিকাদার সংস্থার ওই কর্মীর সব থেকে রাগ, মেয়ের পঠন-পাঠনে। পড়শিরা জানান, বাড়িতে অশান্তি শুরু হলেই মদ্যপ বাবার রাগ গিয়ে পড়ে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ের উপরেই। বাবার অত্যাচারে প্রায়ই তাকে বাড়ির উঠোনে কখনও বা বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়।
কিন্তু সহ্যের সীমা থাকে। মঙ্গলবার সকালে সেটাই ভেঙে গিয়েছিল মেয়েটির। আজ, বুধবার, ইংরাজি পরীক্ষা। মন দিয়ে পড়া তৈরি করছিল ছাত্রীটি। আচমকা বাড়ি ফিরে এলেন বাবা। অসময়ে। এবং অবশ্যই মদ্যপ অবস্থায়। এসেই তারস্বরে টিভি চালিয়ে দিয়েছিলেন। আপত্তি করায় মেয়ের গায়ে হাত তুলতেও কসুর করেননি। কত দিন আর মেনে নেওয়া যায়! মা ও ভাইকে নিয়ে সটান থানায় এসে নালিশ জানায় মেয়েটি।
পুলিশ অবশ্য দায় এড়ায়নি। মিশন পাড়ায় গিয়ে ওই মদ্যপকে তখনই ধরে নিয়ে আসে থানায়। তবে ওই পরীক্ষার্থী জানায়, নালিশ জানালেও বাবাকে গারদে পুরুক পুলিশ, তা-ও চায়নি সে। তাই ‘পুলিশকাকুদের’ কাছে তার অনুরোধ ছিল, “কাকু বাবাকে গ্রেফতার করবেন না। শুধু থানায় নিয়ে এসে একটু বকাঝকা করে বলুন না, অন্তত পরীক্ষার কটা দিন যেন একটু শান্ত হয়ে থাকেন।” ওই ছাত্রীর মা-ও জানান, তাঁদের পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। তিনি বলেন, “বাধ্য হয়েই মেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে। ওর বাবা যায় আয় করেন তার অধিকাংশই নেশায় উড়িয়ে দেন। নেশার জন্য মেয়ের সাইকেলটাও বিক্রি করে দিয়েছেন। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ করেছে। ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। মাধ্যমিক না দিলে ও শেষ হয়ে যাবে।”
কৃষ্ণনগর থানায় আইসি অলোকরঞ্জন মুন্সিও বলেন, “জানিনা নেশা কাটলে কী হবে। তবে ওই লোকটিকে আমরা সাবধান করে দিয়েছি, মেয়ের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। মেয়েটি যাতে ভালো করে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য যে কোনও প্রয়োজনে আমরা আছি।” নেশায় ডুবে থাকা বাবা অবশ্য তখনও বিড় বিড় করে চলেছেন, “বাবার চেয়ে মাধ্যমিক বড় হল তোর। বাবাকে ধরিয়ে দিলি!” অস্ত্র সহ ধৃত। মাসকেট সহ এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত মানিক মণ্ডল রানিনগরের বর্ডারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার রাতে বাড়ি থেকেই পুলিশ তাকে ধরে। |