হাতির হামলা রুখতে ওল চাষে উৎসাহ বন দফতরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
হাতির হানা রুখতে ওল চাষ করুন। গ্রামে গিয়ে এমন পরামর্শই দিচ্ছেন বনকর্মীরা। মঙ্গলবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরিষডাঙায় পরীক্ষামূলক ভাবে ওল চাষ শুরুও হয়েছে। প্রতি বছর এই এলাকা দিয়ে হাতির পাল যাতায়াত করে। প্রচুর শস্যহানি হয়। ঘরবাড়ি ভাঙে। বন দফতরের দাবি, দশ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে যা লাভ হয়, এক বিঘায় ওল চাষ করে তার দুগুণ বেশি লাভ হতে পারে। সেই আটকানো যেতে পারে হাতির হানায় শস্যহানির আশঙ্কা। মেদিনীপুরের ডিএফও আশিস সামন্ত বলেন, “মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে ওল চাষ শুরু হল। এর ফলে কৃষকদেরই সুবিধে হবে।”
এক সময় গড়বেতা-গোয়ালতোড়ে হাতির হানায় শস্যহানি এড়াতে লঙ্কা চাষে উৎসাহ দিয়েছে বন দফতর। এর সুফলও মিলেছে। যে এলাকায় লঙ্কা চাষ হয়েছে, হাতির দল সেই এলাকা এড়িয়ে গিয়েছে। এ বার আলুর বিকল্প হিসেবে ওল চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপালে এক কর্মশালা হয়। বন দফতরের উদ্যোগে এই কর্মশালায়। উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের এডিএফও মধুসূদন মুখোপাধ্যায়, চাঁদড়ার রেঞ্জ অফিসার গৌতম মণ্ডল, মেদিনীপুরের রেঞ্জ অফিসার অভিজিৎ কর, গুড়গুড়িপালের বিট অফিসার অজয় দণ্ডপাট প্রমুখ। ছিলেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরাও। এখানেই ওল চাষের সুবিধের কথা তুলে ধরেন আধিকারিকেরা। কৃষকদের নানা প্রশ্নের উত্তরও দেন। জানান, যে সব এলাকা দিয়ে হাতি ঢোকে এবং বেরোয়, সেখানে ওল চাষ করা গেলে লাভ কৃষকদেরই। আধিকারিকদের বক্তব্য, ওল অর্থকরী ফসল। দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে উত্তরবঙ্গ তথা উত্তর-পূর্ব ভারতে এই চাষ করে বহু কৃষক উপকৃত হয়েছেন। ওল চাষে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে এক লক্ষ টাকাও আয় করা সম্ভব। |
মেদিনীপুরের এডিএফও বলেন, “মূলত হাতির হানায় ফসলের ক্ষতি এড়াতেই কৃষকদের ওল চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। খাবারের খোঁজে প্রতি বছর এ জেলায় হাতি আসে। আগে রুপনারায়ণ বিভাগের কিছু এলাকায় লঙ্কা চাষ করা হয়েছে। তার সুফলও মিলেছে। আলুর বিকল্প হিসেবে ওল চাষ করলে কৃষকেরাই উপকৃত হবেন।” তাঁর কথায়, “হাতির ঘ্রাণশক্তি খুব বেশি। ওলের পাতা দেখলেই ওরা আর এলাকায় আসবে না। ঘুরপথে অন্যত্র চলে যাবে। আসলে ওরা ওলের গন্ধ সহ্য করতে পারে না।” পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রতি বছর হাতির দল ঢুকে পড়ে। মূলত, খাবারের খোঁজে হাতিরা আসে। যাতায়াতের পথে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল নষ্ট করে। বন দফতরের এক-একটি বিভাগে গড়ে পাঁচশো হেক্টর ফসল নষ্ট করে। দেড়শো-দু’শো ঘরবাড়ি ভাঙে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তখন গ্রামবাসীর একাংশ উত্তেজিত হন। বন দফতরের অফিসে হামলা চালান। এ বছরও দলমা থেকে আসা ১৩০- ১৪০টি হাতির দল জেলার বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করেছে। মঙ্গলবার যে এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ শুরু হল, সেই মেদিনীপুর সদর ব্লকের আমঝর্না, ভাদুলিয়া, হেতাশোল ও তার আশপাশ এলাকাও দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বন দফতরের দাবি, হাতির দলকে জঙ্গলে আটকে রাখতে জঙ্গলের ধারে পরিখা তৈরি করা হয়েছে। কাঁটা গাছ লাগানো হয়েছে। বৈদ্যুতিক তার দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু গাছ লাগানো হয়েছে, যেগুলো হাতি খায়। তবে পরিস্থিতি বিশেষ হেরফের হয়নি বলে অভিযোগ। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “পরিস্থিতি দেখেই ওল চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে হাতির হানায় শস্যহানি হবে না। কৃষকেরা ফসলের দামও পাবেন।” ওই আধিকারিকের কথায়, “আলুও অর্থকরী ফসল। তাই অনেকেই শুরুতে আলু চাষ থেকে মুখ ফেরাতে পারবেন না। তবে বিকল্প হিসেবে ওল চাষ করলে যে কৃষকদেরই লাভ, আমরা তাই বোঝানোর চেষ্টা করছি।” |