নতুন পুলিশ কমিশনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর এটি প্রথম ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’। প্রসঙ্গত, গত সাত বছর ধরে, একটি ভিডিয়ো ক্যামেরা সম্বল করে (সৌজন্য তথ্যচিত্রকার দেবলীনা) কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে গিয়ে আমরা সিগনাল, জেব্রা ক্রসিং-সহ রাস্তার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কেন পথচারী ‘সিগনাল না-মেনে’ রাস্তা পার হতে বাধ্য হন। কেনই বা জেব্রা ক্রসিং থাকতে তা ব্যবহার করতে পারেন না। এ সব কিছুই ক্যামেরায় আমরা বন্দি করেছিলাম। তার পর সেই ছবিকে বিশ্লেষণ করে ২০০৬ সালে আনন্দবাজারে একটি উত্তর-সম্পাদকীয় লিখেছিলাম। যার সমর্থনে পাঠকদের বেশ কিছু চিঠি আসে এবং ‘সম্পাদক সমীপেষু’-তে সেই চিঠিগুলো ছাপিয়ে শিরোনাম দেওয়া হয় ‘আপনার নিরাপত্তা আপনার মাথাব্যথা, ট্রাফিক পুলিশের নয়’। আমরা কলকাতা পুলিশ কমিশনার ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে রেজিস্ট্রি করে চিঠি পাঠাই পথ-নৈরাজ্যের বিষয়টি জানিয়ে। উত্তর পাঠানো তো দূরের কথা, চিঠির প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক কোনও চিঠিও পাইনি। তার পর একের পর এক চিঠি লিখে যাই ‘সম্পাদক সমীপেষু’ বিভাগে। তৎকালীন নগরপাল গৌতমমোহন চক্রবর্তী একটি চিঠির উত্তরও দেন এই বিভাগে। যদিও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এর পর ‘পরিবর্তনে’র সরকার ১০০ দিন পূর্ণ করার সময়ে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে কলকাতার বাইরে। সেই দুর্ঘটনায় একটি বাসের মধ্যে আগুন লেগে গেলে নাবালিকা ও তার মা-সহ চার জন ঝলসে পুড়ে মারা যান। এই ঘটনাটি ঘটার পর নতুন সরকারকে আমাদের সঙ্গে বসার অনুরোধ করি পথ-দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য। কোনও লাভ হয় না। |
এ দিকে পুলিশ অফিসাররা যথারীতি পথ-দুর্ঘটনার জন্য পথচারীদের দায়ী করতে শুরু করেছেন। আবার ‘হানি বানি...’ সুরে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর ‘নিয়ম মেনে’ হাঁটতে থাকা বিটল্সদের ছবি দেখিয়ে পথচারীদের ‘সচেতন’ করতে চাইছেন। এবং একই সঙ্গে ‘জে ওয়াকার’ বা স্বেচ্ছাচারী পথচারীদের সবক শেখাতেও চাইছেন। অথচ আমরা প্রমাণ করে ছেড়েছি, এক দঙ্গল পুলিশের চোখের সামনে কী রকম জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপরেই গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে, আর পথচারী কী ভাবে ‘গাড়িঘোড়ার ফাঁক’ দিয়ে বিপন্ন ভাবে রাস্তা পার হতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যে-কোনও জায়গায় যা ঘটে, জেব্রা ক্রসিংয়ে পা-রাখা মাত্রই দূর থেকে ছুটে-আসা গাড়ি তার গতি কমিয়ে দেয়, তা কিন্তু এখানে আদৌ ঘটে না। আমাদের একবার এক গাড়িচালক বলেছিলেন, আমাদের এই নিয়ে কোনও ট্রেনিং দেওয়া হয় না। এমনকী লাইসেন্স পাওয়ার সময়েও জেব্রা ক্রসিং ব্যাপারটাকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আর সিগনাল? যত কম বলা যায় ততই ভাল। পথচারীদের জন্য বিশাল চওড়া রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে কোথাও মাত্র চার সেকেন্ড, কোথাও বা মাত্র এক সেকেন্ড সবুজ থাকে। এমনকী কোথাও কোথাও একই সঙ্গে পথচারী ও গাড়ির সিগনাল সবুজ থাকে (চাইলে প্রমাণ দিতে পারি)।
এই ক’দিন আগে, ২০০৫ সালের পর আবার কলকাতায় বাসে-বাসে রেষারেষিতে এক যাত্রীর হাত কেটে গিয়ে রাস্তায় পড়ে। অথচ, কমিশন প্রথা এখনও চলছে রমরমিয়ে। আর হ্যাঁ, রাস্তায় গাড়িতে-গাড়িতে রেষারেষি বন্ধ করার জন্য বাসে ‘স্পিড গভর্নর’ বসানোর প্রস্তাবটি আজ অবধি মহাকরণের ঠান্ডা ঘরে পড়ে রয়েছে।
সবুজ মুখোপাধ্যায়। পথ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ মঞ্চ, কলকাতা-৩৯
|
পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘স্বামীজির জন্মোৎসব’ (২৮-১)-এর পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, অভিনেতা দেব বিবেকানন্দ সেজেছিলেন এটা নিয়ে কটাক্ষ করাটা সমীচীন হয়নি। দেব হলেন অভিনেতা। অভিনয় তাঁর পেশা। পরিচালক, নির্দেশক যেমন ভাবে বলেন, তিনি তেমন ভাবেই অভিনয় করার চেষ্টা করেন। তাঁকে কোনও মহামানবের ভূমিকায় অভিনয় করতে বললেও করবেন। সিনেমায় যা করেন, তা কিন্তু ওঁর জীবন নয়।
পরেশকুমার নন্দ। কলকাতা-৫৪ |