সম্পাদকীয় ১...
সাহস কিঞ্চিৎ কম
বনকুমার বনশল প্রমাণ করিলেন, দীনেশ ত্রিবেদী ভারতীয় রেলের রোগ নির্ধারণে এবং বিশল্যকরণী প্রয়োগে অভ্রান্ত ছিলেন। যে রেল বাজেট পেশ করিবার ‘অপরাধে’ তিনি দলনেত্রীর কোপে পড়িয়াছিলেন, সেই বাজেটের নীতির অংশবিশেষ প্রয়োগ করিয়াই বনশল মাত্র কয়েক মাসে রেলের স্বাস্থ্য খানিক হইলেও ফিরাইতে পারিয়াছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের অপারেটিং রেশিয়ো অর্থাৎ, কার্যত, আয়ের অনুপাতে দৈনন্দিন ব্যয়ের মাত্রা দাঁড়াইয়াছিল ৯৫ শতাংশ। এই পাপ অবশ্য তাঁহার একার নহে, রেলমন্ত্রকে তাঁহার পূর্বসূরিরাও জনমোহনের খেলায় মাতিয়া এই অনুপাতটিকে পাকাপাকি ভাবে নব্বইয়ের ঘরে তুলিয়া দিয়াছিলেন। অধিকতর রাজনৈতিক ওজনসম্পন্ন রেলমন্ত্রীরা যে কাজটি ভুলিয়াও করেন নাই, ত্রিবেদী সেই কাজটি, অর্থাৎ যাত্রিভাড়া বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। তাহার পর ত্রিবেদী ‘ভ্যানিশ’, মুকুল রায়ের আবির্ভাব। বনশল রেলমন্ত্রী হইয়া সেই ভাড়াবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি আংশিক কার্যকর করিয়াছিলেন। তাহাতেই রেলের অপারেটিং রেশিয়ো কমিয়া ৮৮.৮ শতাংশে দাঁড়াইয়াছে। পরিষেবা যাঁহারা ব্যবহার করেন, তাঁহাদের নিকট পরিষেবার খরচ যথাসম্ভব আদায় করিতে হইবে, এই স্বাভাবিক নীতি প্রয়োগের সুফল ফলিয়াছে।
নূতন বছরের রেল বাজেট রচনার সময়েও বনশলের প্রধান দায়িত্ব ছিল সেই নীতিই অনুসরণ করা। তাঁহার একটি বাড়তি সুবিধাও ছিল; কেন্দ্রে জোট সরকারের চল হইবার পর এই প্রথম কোনও প্রধান শরিকের দলভুক্ত রেলমন্ত্রী বাজেট পেশ করিলেন। কোনও একটি রাজ্যের রেলমন্ত্রী হইবার দায় তাঁহার ছিল না। সর্বভারতীয় দলের রেলমন্ত্রীদের আপন রাজ্যের প্রতি পক্ষপাতিত্বের নজিরও বিরল নয়, গনি খানচৌধুরী স্মরণীয়; কিন্তু সাম্প্রতিক কালে আঞ্চলিক শরিকদের হাতে রেল মন্ত্রক ছাড়িয়া রাখিবার কুফল রেলের সর্বাঙ্গে ছাপ ফেলিয়াছে। সেই ছাপ অপনয়নের দায়িত্ব বনশলের উপর ছিল। তাঁহাকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলা যাইবে না। জানুয়ারি মাসের শেষে রেলের যে ভাড়া বাড়িয়াছিল, তাহার কল্যাণে আগামী অর্থবর্ষে রেলের বাড়তি ৬,৬০০ কোটি টাকা আয় হইবে বলিয়া অনুমান। অঙ্কটি বর্তমান অর্থবর্ষে যাত্রিভাড়া আদায়ের এক-পঞ্চমাংশের বেশি। কিন্তু ইতিপূর্বে দীর্ঘকাল যাত্রিভাড়া বাড়ে নাই, নূতন বাজেটে আরও কিছুটা বাস্তববাদী হইবার সাহস রেলমন্ত্রীর কুলাইল না? তাঁহার যুক্তি, মাত্র এক মাস পূর্বে যাত্রিভাড়া বাড়াইয়াছেন, সেই কারণেই এই বাজেটে ক্ষমা দিয়াছেন। ভাল। কিন্তু তিনিই দেখাইয়াছেন, ভাড়া বাড়াইবার জন্য বাজেটের মুখ চাহিয়া বসিয়া থাকিবার প্রয়োজন নাই। নির্বাচনের কথা না ভাবিয়া তিনি প্রয়োজন অনুসারে বছরের মধ্যপথে ভাড়া বাড়াইতে পারিবেন কি? সাহস হইবে?
দীনেশ ত্রিবেদীর ছায়াটি, বস্তুত, দীর্ঘতর। তিনি তাঁহার বৈপ্লবিক বাজেটে প্রস্তাব করিয়াছিলেন, ডিজেল বা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে রেলের যে খরচ বাড়ে, তাহাকে আলাদা ভাবে ভাড়ার অন্তর্গত করা হউক। বনশল সেই প্রস্তাবটিকে বাস্তবায়িত করিয়াছেন। পূর্বসূরির সূত্র মানিয়াই বলিয়াছেন, জ্বালানির খরচ যে ভাবে বাড়িবে-কমিবে, রেলভাড়াও সেই অনুপাতে বাড়ুক-কমুক। বৎসরে দুই বার ভাড়া সংশোধন করা হইবে। ভাড়ার এই অংশটির নাম ফুয়েল অ্যাডজাস্টমেন্ট কমপোনেন্ট (এফ এ সি)। আপাতত শুধু পণ্য মাসুলের ক্ষেত্রেই এফ এ সি প্রযোজ্য হইবে। সিদ্ধান্তটি এক অর্থে বৈপ্লবিক। রেল ভাড়াকে বাজার ব্যবস্থার আওতায় লইয়া আসিবার কোনও উদ্যোগ ইহার পূর্বে হয় নাই। অর্থনীতির দাবি, অদূর ভবিষ্যতে যাত্রিভাড়ার ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থাটি অনুসৃত হইবে। ডিজেলের দাম যাহাতে আন্তর্জাতিক বাজারের সহিত ওঠানামা করে, কেন্দ্রীয় সরকার তাহার ব্যবস্থা করিয়াছে। পরিবহণের খরচও এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই বাজার-অনুসারী হওয়া জরুরি। বিমানভাড়া যেমন চাহিদা-জোগানের অঙ্ক মানিয়া বাড়ে-কমে, রেলের যাত্রিভাড়ার ক্ষেত্রেও তাহা হইবে না কেন? রেলের স্বার্থেই এই ধরনের সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত জরুরি। বুদ্ধিবিবেচনারহিত সস্তা জনমনোরঞ্জনের পথে চলিয়া রেলের উন্নয়ন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হইয়াছে। রেলমন্ত্রী সেই সর্বনাশের পথে আর অগ্রসর হন নাই, ভাল। কিন্তু এখনও সাহসের অভাব কেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.