মোক্তারকে ধরে ফেলল সিআইডি, গার্ডেনরিচের মুন্না কিন্তু অধরাই
শেষ পর্যন্ত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার আগেই ধরা পড়লেন কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদ।
এডিজি (সিআইডি) শিবাজী ঘোষ বলেন, “গার্ডেনরিচের হাঙ্গামায় অন্যতম অভিযুক্ত মোক্তারকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাওড়া স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে জেরা করা হচ্ছে।” মুন্না ধরা না-পড়লেও সোমবার রাতে গ্রেফতার হয়েছে তাঁর ডানহাত মহম্মদ ইমতিয়াজ। সিআইডি সূত্রের খবর, মোক্তার এবং তাঁর সঙ্গী মুস্তাক ট্রেনে চেপে ভাগলপুর পালানোর চেষ্টা করছিলেন। দু’জনকেই হাওড়া স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের কাছে ভাগলপুর যাওয়ার টিকিট মিলেছে। আর সোমবার রাতে ইমতিয়াজ ধরা পড়ায় মুন্নার গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানান, গার্ডেনরিচের গোলমালের পরে মুন্না এবং তাঁর ডানহাত, তৃণমূলকর্মী ইমতিয়াজ একসঙ্গে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
গ্রেফতারের পরে মোক্তার আহমেদ। ছবি: দেবাশিস রায়।
গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলার দিন গুলি চলার পরে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মোক্তারের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, মোক্তারের দলবল মুন্নাকে লক্ষ করেই গুলি চালিয়েছিল। মুন্নাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। কিন্তু পরে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ওই ঘটনার যে-ছবি দেখানো হয়, তাতে দেখা যায়, গুলি ছুড়েছিল মুন্নার সঙ্গী শেখ সুহান ও ইবনে। সে-রাতেই সুহান ও ইবনেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, ওই গ্রেফতারির জেরেই রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরে যেতে হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সরিয়ে নিয়ে দেওয়া হয় সিআইডি-কে।
ঘটনার পরে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ মহাকরণে বলেছিলেন, “মহম্মদ ইকবাল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে বিশ্বাস করি না।” পুরমন্ত্রী বরং অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন মোক্তারের দিকে। তিনি বলেছিলেন, “ইকবালই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হন তাপস চৌধুরী।” পুলিশ জানায়, তাপসবাবুর মৃত্যুর পরেই ইকবাল এলাকা ছাড়েননি। বরং মন্ত্রীর বক্তব্যের পরেও তিনি নিশ্চিন্তেই ছিলেন। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারেন, পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধেও খুনের মামলা দায়ের করতে পারে, তখনই তিনি গা-ঢাকা দেন।
মুন্নার সঙ্গেই পালিয়ে গিয়েছিল তাঁর শাগরেদ ইমতিয়াজ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এসআই-হত্যায় মূল অভিযুক্ত শেখ সুহানকে গুলি চালাতে প্ররোচিত করেছিল ইমতিয়াজই। ১২ তারিখের গোলমালের পরেই সে গার্ডেনরিচ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় হাওড়ার নাজিরগঞ্জে। সোমবার রাতে নিজের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তার। সেই খবর আগেই পৌঁছে যায় সিআইডি এবং কলকাতা পুলিশের কাছে। গঙ্গা পেরিয়ে বিচালিঘাটে আসামাত্র গভীর রাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় ইমতিয়াজ। সিআইডি জানায়, তৃণমূলকর্মী ইমতিয়াজ এসআই-হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।
ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেওয়া হল কেন?
তদন্তকারীদের দাবি, ইমতিয়াজই ঘটনার দিন শেখ সুহান এবং ইবনেকে গুলি চালাতে প্ররোচিত করেছিল। একই অভিযোগ থাকায় মুন্নার বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ইমতিয়াজকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। আদালতে সিআইডি জানায়, ইমতিয়াজ যে সুহানকে গুলি চালাতে প্ররোচিত করেছিল, ভিডিও ফুটেজে তা ধরা পড়েছে। আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুরতেশ্বর মণ্ডল ধৃতকে ৭ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইমতিয়াজকে জেরা করে মুন্না সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে হলে গোয়েন্দাদের আশা। পুলিশ জানায়, ইমতিয়াজ সে-দিনের হাঙ্গামার পরে বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবালের সঙ্গেই কলকাতা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। হাওড়ার নাজিরগঞ্জে মুন্নারই একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিল সে। গোয়েন্দাদের অনুমান, লুকিয়ে থাকার সময় তার সঙ্গে মুন্নার যোগাযোগ ছিল। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ইমতিয়াজ এলাকায় সক্রিয় তৃণমূলকর্মী হিসেবে পরিচিত। আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অনেক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তার পিছনে মুন্নার মদত থাকায় পুলিশ এত দিন তাকে গ্রেফতার করার সাহস পায়নি।” এসআই-হত্যায় ধৃত শেখ সুহান এবং ইবনেকেও এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সিআইডি-র পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র হাঙ্গামার অভিযোগও আনা হয়েছে। নতুন মামলায় শেখ সুহান ও ইবনেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এসআই খুনের মামলায় ওই দু’জন এত দিন পুলিশি হাজতেই ছিল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.