পবনকুমার বনশলের রেল বাজেটের মধ্যেই পালানিয়প্পন চিদম্বরমের আগামী কালের বাজেটকে এক ঝলক দেখতে পেল শেয়ার বাজার ও শিল্পমহল। আর, তা হল অর্থনীতির হাল ফেরাতে চিদম্বরমও সম্ভবত পেশ করতে চলেছেন ভারসাম্যের বাজেট, ব্যয়সঙ্কোচের বাজেট। অস্থির বাজারে সেনসেক্স অবশ্য দিনের শেষে পড়েছে প্রায় ৩১৭ পয়েন্ট।
লাগামছাড়া খরচে কাটছাঁট করে রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে আনাই রেলমন্ত্রীর মতো অর্থমন্ত্রীরও লক্ষ্য হবে বলে তাঁদের ধারণা। তবে রেলের কোষাগার নিয়ে দীঘর্কালীন রাজনীতি তার স্বাস্থ্যের উপরে ছাপ ফেলেছে। দুর্বল স্বাস্থ্য ফেরাতে যে-ধরনের পদক্ষেপ করেছেন রেলমন্ত্রী, তাকে ভারসাম্য আনার প্রয়াস হিসেবেই দেখছে শিল্পমহল।
সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এ বারের রেল বাজেট বাহুল্যবর্জিত। তিনি বলেন, “রেলকে লাভজনক করতে আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরানোয় জোর দেওয়ার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।” একই সঙ্গে ব্যয় ও আয়ের অনুপাত অপারেটিং রেশিও কমিয়ে আনার উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। বেঙ্গল চেম্বারের সেক্রেটারি জেনারেল পি রায়েরও বক্তব্য, রেলমন্ত্রী বাস্তববাদী ও ভারসাম্যের বাজেট তৈরি করেছেন।
তবে শিল্পমহলের একাংশের মতে, বাজেট সবাইকে সন্তুষ্ট রাখতে গিয়ে দিশা হারিয়েছে। অ্যাসোচ্যাম-এর রাজকুমার ধুত বলেন, “কয়লা, আকরিক লোহার মতো পণ্য পরিবহণে রেল প্রায় একচেটিয়া ব্যবসা করে। ফলে সমস্যাও তৈরি হয়েছে। এ দিকে নজর দিতে রেলের উচিত নীতির সঠিক রূপায়ণ।” তবে ‘জনমোহিনী’ বাজেটের পথে না হেঁটে ‘গোঁড়া’ বাজেট করার জন্য রেলমন্ত্রীকে বাহবা দেন ভারত চেম্বারের অশোক আইকত। পরিষেবায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে মার্চেন্টস চেম্বার, বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার। তবে তাদের আশঙ্কা, পণ্য মাসুল বাড়লে মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে। কয়লা, বিদ্যুৎ ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কিত ইন্ডিয়ান চেম্বার। রাজ্যের ঝুলি বিশেষ ভরেনি বলে ক্ষোভ জানান ওরিয়েন্টাল চেম্বারের আলি আব্বাস শিরাজি। একই মত ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন্সেরও। ছোট শিল্পের সংগঠন ফসমি-র মতে, বাজেটকে বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়েছে। আয়ের পথ না-থাকলে বিপুল ক্ষতির জেরে নয়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ে আর এক সংগঠন ফ্যাক্সি-ও।
তবে শেয়ার বাজ্যরের একাংশের মতে মঙ্গলবার সূচককে গত তিন মাসের মধ্যে সব থেকে নীচে টেনে নামানোর জন্য মূলত দায়ী বিশ্ব বাজার, বিশেষ করে ইতালিতে ত্রিশঙ্কু সরকার হওয়ার ইঙ্গিত। যা ইউরোপের সঙ্কট আরও ঘোরালো করতে পারে। বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটস-এর এমডি অজিত খণ্ডেলওয়াল বলেন, “রেল বাজেটে যা হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। ইউরোপের পতনই ইন্ধন জুগিয়েছে সূচকের পতনে।” সুমেধা ফিসকাল সার্ভিসেস-এর ডিরেক্টর বিজয় মুরমুরিয়া-ও একই সুরে বলেন, “বাজেট থেকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক, কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। তা ছাড়া ২৮ ফেব্রুয়ারি ডেরিভেটিভ লেনদেনে শেয়ার হস্তান্তরের দিন। ওই দিনই কেন্দ্রীয় বাজেটও। তাই মঙ্গলবার অনেকেই শেয়ার বেচে দিয়েছেন।” অন্য দিকে ওয়াগন শিল্পের জন্য বড় কোনও প্রকল্প রেলমন্ত্রী ঘোষণা না-করায় এই শিল্প হতাশ। বিভিন্ন ওয়াগন সংস্থার শেয়ার তাই পড়েছে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। |