সবে তখন ভোরের আলো ফুটছে। ঘুম জড়ানো চোখে-মুখে স্পষ্ট বিস্ময়ের আভা। আর হবে না-ই বা কেন! নরম সূর্যের আলো গায়ে মেখে এ যেন ফিরে যাওয়া চার হাজার বছর আগে। ফ্যারাওদের দেশে। ইতিহাসের পাতায় পড়া কার্নাক মন্দির, ভ্যালি অফ কিংস রাতের চাদর সরিয়ে জেগে উঠবে ঠিক পায়ের নীচেই। উত্তেজনা আর অদম্য কৌতূহল নিয়েই ফানুসে চেপে বসেছিলেন তাঁরা। ব্রিটেন, ফ্রান্স, হংকং, জাপান নানা দেশের প্রায় জনা কুড়ি পর্যটক। কিন্তু বেলুন ভ্রমণ শেষ হওয়ার আগেই পুড়ে খাক হয়ে গেল তাঁদের স্বপ্ন। মাঝ আকাশে এক হাজার ফুট উচ্চতায় আগুন ধরে গেল ফানুসে। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জন বিদেশি পর্যটকের। ফানুসটির চালক ও আর এক মিশরীয় প্রাণে বাঁচলেও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
মিশরের লাক্সরে ফানুস ভ্রমণ বহু দিন ধরেই বেশ জনপ্রিয়। নীল নদের পাশে এখানে থরে থরে সাজানো রয়েছে ফ্যারাওদের মমি। সূর্যোদয়ের সময় আকাশ থেকে তা পর্যটকদের দেখার সুযোগ করে দেয় নানা সংস্থা। |
পড়ে রয়েছে অগ্নিদগ্ধ সেই ফানুসের অংশ। লাক্সরের কাছে আল-ধাবা গ্রামে। ছবি: এ পি। |
মিশরের সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আজ যে ফানুসটিতে আগুন লেগেছে তা ‘স্কাই ক্রুজ’ সংস্থার। অন্য একটি ফানুসে সে সময় ছিলেন চেরি তহ্মি। তাঁর কথায়, “আমাদের ফানুসটা তখন সবে নামছে, হঠাৎ খুব জোরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। পেছনে তাকিয়ে দেখি, প্রায় সাততলা বাড়ির সমান উুঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মানুষ।”
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, ফানুসটির গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের ফলেই আগুন ধরে যায় তাতে। লাক্সরের নিরাপত্তা সচিব এম খালেদ জানান মতদের বেশির ভাগই এশীয় ও ইউরোপীয়। হংকং থেকে এসেছিলেন ন’জন, জাপানি ৪ জন, ব্রিটেনের ৩ জন, ফরাসি ২ ও হাঙ্গেরির ১ জন।
লাক্সরে ফানুস দুর্ঘটনা অবশ্য আগেও বহু বার হয়েছে। ২০০৯ সালে মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে ফানুসের ধাক্কায় আহত হন ১৬ জন। তার আগের দু’বছরেও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পর্যটকদের ফানুস। তবে এক সঙ্গে এত জনের মারা যাওয়ার ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। একেই ২০১১ থেকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে মার খায় পর্যটন শিল্প। সবে যখন চেনা ছন্দে ফিরছে মিশর, তখনই এই দুর্ঘটনা ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গাঢ় করে তুলল। |