বর্ধমান থেকে বলগোনা পর্যন্ত ব্রড গেজে দিব্যি ট্রেন চলাচল করছে। কিন্তু বলগোনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত লাইনের গেজ পরিবর্তন নিয়ে কোনও সাড়াশব্দ নেই। চুক্তির ‘ফাঁসে’ এই কাজ বিশবাঁও জলে পড়ে রইল কি না, রেল বাজেটে কোনও টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় ফের উঠল সেই প্রশ্ন।
রেল সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে সামনে রেখে বর্ধমান-কাটোয়া ন্যারো গেজ লাইন ব্রড গেজে রূপান্তরের কথা ঘোষণা হয়েছিল। রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (পিডিসিএল) ও রেল প্রকল্পের অর্ধেক করে খরচ দেবে বলে চুক্তি হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্পের জন্য টাকা অনুমোদন করেন। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে রাজ্য কয়েক কোটি টাকা রেলের হাতে তুলে দেয়। রেল কর্তৃপক্ষ জানান, মুকুল রায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বর্ধমান থেকে বলগোনা পর্যন্ত ট্রেন চালু হয়। এখন ওই লাইনে প্রতি দিন দু’জোড়া করে ইএমইউ ট্রেন চলে। কিন্তু বলগোনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত এখনও ন্যারো গেজ ট্রেনই চলছে। যাত্রীদের প্রশ্ন, এই ২৭ কিলোমিটার ব্রডগেজ হচ্ছে না কেন?
রেল সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ওই পথ দিয়ে কয়লা আনবে বলে ঠিক করেছিল পিডিসিএল। তাই তারা রেলের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। পরে পিডিসিএলের পরিবর্তে ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে আসে এনটিপিসি। তারা রেলকে জানায়, পিডিসিএলের মতো তারাও বর্ধমান-কাটোয়া রেলপথের গেজ পরিবর্তনে অর্ধেক খরচ দিতে রাজি। সেই মতো গত জুনে রেল কর্তৃপক্ষ ওই পথের কাজ শেষ করার জন্য ১২২ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি পাঠায়।
এনটিপিসি-র এক আধিকারিক বলেন, “জমির প্রশ্নে প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ একটুও এগোয়নি। এই অবস্থায় আমরা নিশ্চয়ই রেলকে টাকা দেব না।” কিছু দিন আগে কাটোয়ায় এসে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও স্বীকার করেন, “একটি চুক্তির কারণে এখনই বলগোনা-কাটোয়া লাইনের গেজ পরিবর্তন করা রেলের পক্ষে অসুবিধা রয়েছে।” রেলের এক আধিকারিক আবার জানান, কাটোয়ার কাছে গাঙ্গুলিডাঙায় জমির সমস্যাও রয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, “জমির প্রশ্নে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় একই অবস্থা হয়েছে ওই রেলপথের। এটাই তো স্বাভাবিক।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চুক্তির কারণেই রেল হয়তো সময় নিচ্ছে। বাকি পথের কাজে রেল এগিয়ে আসবে বলেই আশা রাখি।”
কাটোয়ার মানুষ অবশ্য এত জটিলতার কথা শুনতে নারাজ। তাঁদের শুধু দাবি, যত শীঘ্র সম্ভব গেজ পরিবর্তন করে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হোক। বিএকে লুপ লাইনের নিত্যযাত্রী সংগঠনের সভাপতি পুরবধি মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পুরো রেলপথে ট্রেন চালালে বাসিন্দাদের সঙ্গে রেলেরও তো লাভ হবে।” |