তৃণমূল নেতা ধৃত রাতে
ভাইরাই গ্রেফতার, আতঙ্কে কাঁপছেন বারাসতের তরুণী
রাত দেড়টা। শুনশান এলাকায় একতলা বাড়িতে বসে আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপছেন মাঝবয়সী এক মহিলা। পাশেই কলেজ-ছাত্রী মেয়ে। বার বার বমি করছেন তিনি। রবিবার রাতে বারাসত থানা এলাকার বামনগাছির ওই বাড়ির ত্রিসীমানায় নেই কোনও পুলিশকর্মী। কয়েক ঘণ্টা আগে, রবিবার বিকালেই ওই তরুণীকে শ্লীলতাহানির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁর দুই ভাই। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। পরে শ্লীলতাহানির পাল্টা অভিযোগে সেখান থেকে তাঁদেরই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আতঙ্ক তাই আরও জমাট হয়ে চেপে বসেছে মা-মেয়ের মধ্যে। মা বলে চলেছেন, “আমার ছেলেরা তো গণ্ডগোলে ছিল না। মেয়ের সঙ্গে অসভ্যতা করছে দেখে বাড়ির লোক বাধা দেবে না? তাতেই তো ছেলেটা মার খেল। আবার পুলিশও ধরল। আমার খুব ভয় করছে। খুব ভয়।”
ভয় কেন?
কারণ, শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্তদের এক জন পুলিশের খাতায় কুখ্যাত সমাজবিরোধী। সোমনাথ সর্দার নামের ওই অভিযুক্ত সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছিল ডাকাতির ঘটনায়। ক’দিন আগেই জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফিরেছে সে। মা-মেয়ের আতঙ্কের আরও কারণ, সোমনাথের মামা নিখিল দাস কাশিমপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। শ্লীলতাহানির ঘটনায় ভাগ্নে সোমনাথের সঙ্গেই অভিযুক্ত নিখিল ও তাঁর ভাই তারক।
সোমনাথ ও তারককে রবিবার গ্রেফতার করা হলেও নিখিলকে গ্রেফতার করা হয় সোমবার রাত এগারোটা নাগাদ। যদিও তাঁর এফআইআরে ওই তরুণী লিখেছেন, ঘটনাস্থলে নিখিল ছিলেন। পুলিশকে জানানো হলে ফল ভাল হবে না বলে তিনিই তাঁদের শাসানি দেন। এমনকী, ভাগ্নে ও ভাইকে ছাড়ানোর জন্য নিখিল পুলিশের চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠছিল। নিখিল অবশ্য বলছেন, “শ্লীলতাহানির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আর আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাদের এ ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ালে রাজনৈতিক আন্দোলনে নামব। আমাকে গ্রেফতার করা হলে থানা ঘেরাও হয়ে যাবে।” পুলিশকর্তারাও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বলছিলেন, ওখানে দু’দলের মধ্যে মারপিট হচ্ছিল। তাতে দুই পরিবারের মহিলারা জড়িয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে নিখিল ছিলেন না বলেই জানা গিয়েছে। তাই তাঁকে ধরা হয়নি। কিন্তু রাতে কেন সিদ্ধান্ত বদল হল, সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
ওই তরুণীর দুই ভাইকে কেন গ্রেফতার করা হল?
রবিবারের ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে নিখিলের পরিবারের লোকেরা ওই তরুণীর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা একটি এফআইআর করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এফআইআরে নিখিলের পরিবারের এক মহিলা ওই তরুণীর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছেন। তাই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি ভাঙড়ের বামনঘাটায় গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে গুলি চালানোর ঘটনায় সিপিএম সমর্থকদের অভিযোগের তির ছিল তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের দিকে। সেই অভিযোগ ওঠার বেশ কিছু ক্ষণ পরে থানায় গিয়ে এলাকার সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন আরাবুলও। পরে সিপিএম নেতাদের জামিনের আবেদনের শুনানির সময় হাইকোর্ট বলে, ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে একটি অভিযোগের পাল্টা হিসেবেই পরের অভিযোগটি করা হয়েছে। এর কোনও সারবত্তা নেই। ওই পাল্টা অভিযোগের কোনও তদন্তও করতে হবে না বলে পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বামনগাছির ঘটনায় এ রকমই পাল্টা এফআইআর করার অভিযোগ উঠেছে নিখিলের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে নিখিল বলেন, “ওঁরা তো মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি তো ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করি।” তা হলে ওই তরুণীর দুই ভাই তাঁর পরিবারের মহিলার শ্লীলতাহানি করলেন কখন? এর কোনও জবাব মেলেনি নিখিলের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে দু’পক্ষের পাঁচ জন করে মোট দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার বারাসত আদালতে তোলা হলে ধৃতদের সকলকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এলাকার তৃণমূল নেতারাও এ দিন নিখিলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বারাসত-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তরুণ দাস বলেন, “এটা সামান্য ঘটনা। অনর্থক জলঘোলা চলছে। নিখিলবাবুকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে।” বারাসতের প্রাক্তন বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকের বীথিকা মণ্ডলের পাল্টা বক্তব্য, “এখন কিছু ঘটলেই অপরাধীর পক্ষ নিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.