মোতেরায় ৭৭ রান করার জন্য সহবাগদের আবার দ্বিতীয় ইনিংসে নামতে হয়েছিল।
চিপকে এর মধ্যেই ৪০ রানে পিছিয়ে থাকা সহবাগদের কত করার জন্য আবার দ্বিতীয় ইনিংসে নামতে হবে?
মোতেরায় ১-০ জেতার পর দিগ্নির্দেশের ভুলে গোটা সিরিজ ভুলভুলাইয়া হয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার জন্য।
চিপকে মঙ্গলবার খুব সম্ভাব্য ১-০ জয়ের পর আবার দল নির্বাচনের ভুলে-টুলে টিম ইন্ডিয়ার জন্য অভিশপ্ত ইংল্যান্ড সিরিজ ফিরে আসবে না তো!
একটা ঘোর শীত। একটা গরম।
একটা দেশের পশ্চিমাঞ্চল। একটা দেশের দক্ষিণাঞ্চল।
একটা নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার। একটা জয়ললিতার এআইডিএমকে।
একমাত্র মিল দু’টোই দেশের সবচেয়ে শিল্পসমৃদ্ধ দুই রাজ্যের রাজধানী। আর একাধিক মিল ক্রিকেট মাঠেও। অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক ওখানে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এখানে সেঞ্চুরি করেছেন মাইকেল ক্লার্ক। গোঁয়ার্তুমি করে ইংল্যান্ড ওখানে এক পেসার বাড়তি খেলিয়ে মন্টি পানেসরকে বসিয়ে রাখে। গোঁয়ার্তুমি করে এখানেও অস্ট্রেলিয়া বাড়তি পেসার খেলিয়ে জেভিয়ার ডোহার্টিকে নামায়নি।
|
স্পিনার-রাজ
|
• টেস্ট ইতিহাসে এক বারই কুড়িটা অস্ট্রেলীয় উইকেট নিয়েছেন স্পিনাররা।
১৯৫৬-তে ম্যাঞ্চেস্টারে এই কীর্তি ইংরেজ স্পিনারদের।
• টেস্ট ইতিহাসে দু’বার ভারতীয় স্পিনাররা বিপক্ষের কুড়িটা উইকেট নিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালে চেন্নাইয়ে এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অকল্যান্ডে ১৯৭৬ সালে। |
|
হায়দরাবাদে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট থেকে যেটা দেখার, মোতেরা পরবর্তী যে সব ভুল আর আত্মতুষ্টিতে ভুগে ইংরেজদের কাছে ভারত অপ্রত্যাশিত ভাবে সিরিজ ১-২ সমর্পণ করেছিল সেটা আর হবে না তো? ধরেই নেওয়া যায়, অস্ট্রেলিয়া দুই স্পিনারের ছকে চলে যাবে। তারা বেশ বুঝে গিয়েছে বাকি সফরে কী ধরনের সারফেস অপেক্ষা করে রয়েছে! ভারতধোনির ভারত কী করবে?
চিপক পিচ যে অবস্থায় সোমবার পাওয়া গেল তা সপ্তাহের প্রথম দিন অফিস গিয়ে সাফসুতরো না হওয়া নোংরা ডেস্কের মতো। মনে হবে ঝাড়ুদার বুঝি পরিষ্কার করেনি। ক্রমাগত ধুলো উড়ছে। দু’টো উইকেট তো অতর্কিতে বল লাফিয়েই পাওয়া উপহার। বোলার’স্ ফুটমার্কে পড়ে ঘুরছে। শেন ওয়ার্ন সাধে বলেননি এটা রাফায়েল নাদালের খেলার মাঠ। তবু ৫৭ মিনিট গলার কাঁটার মতো বিঁধে রইল অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট।
তাঁর দেশ যখন দুপুরে ব্যাট করছিল, মেলবোর্ন-সিঙ্গাপুর ফ্লাইটে থাকায় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের চিফ ট্যালেন্ট ম্যানেজারের দেখা হল না, কী জঘন্য টেকনিকে তাঁর এক-এক জন ছাত্র স্পিন খেলছিলেন। কিন্তু পটৌডি স্মারক বক্তৃতা দিতে কলকাতা অভিমুখী গ্রেগ চ্যাপেল যদি বা নিজের দেশের ব্যাটিং না দেখতে পান। ভারতের জাতীয় নির্বাচকেরা তো দেখলেন। আর বুঝলেন বোধহয় যে, উইনিং টিমেও বদল দরকার হতে পারে। প্রজ্ঞান ওঝাকে নিজের রাজ্যের উইকেটে না ফেরালেই নয়।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে চলতি টেস্টে রূপান্তরিত বোলার মনে হচ্ছে। যখনই ধোনি তাঁকে ডাকছেন, মনে হচ্ছে একটা কিছু ঘটতে পারে। ঘটছেও। বোলিংয়ে লক্ষ্য বরাবরই অশ্বিনের সম্পদ। এ বার তার সঙ্গে মিশেছে চিন্তা আর স্মার্টনেস। কখনও কখনও তাঁকে মনে হচ্ছে নিজের রাজ্যের সেই পুরনো বেঙ্কট। কখনও যে প্রতিবেশীর সঙ্গে এত বছর কাবেরীর জল ভাগাভাগি নিয়ে তামিলনাড়ুর এত গণ্ডগোল চলছিল, সেই রাজ্যের কুম্বলে!
কিন্তু যে দিন অশ্বিন মাসের ঢাক বাজবে না, সে দিন কী হবে? কে নেবে ধড়াধ্ধড় উইকেট? অশ্বিনের স্পিন বোলিং সঙ্গীদের তো আদৌ নির্ভরযোগ্য মনে হচ্ছে না। হরভজন সিংহের পুরনো দাপট ফিরে আসার জন্য আরও সময় দিতে হবে। তৃতীয় স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা? একাধিক ফুটমার্ক অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু তিনি নিজে সাড়া দিলে তবে তো ফুটমার্ক? ভারতীয় ক্রিকেটে রবীন্দ্র জাডেজাকে অনেকে ‘ছোটে সেলিম’ বলে ডাকেন। হাই অ্যাকশন আর বলটা ছাড়ায় সেলিম দুরানির সঙ্গে মিল আছে বলে। তা আসল সেলিম ক’দিন আগেই চেন্নাই ঘুরে গেলেন। থুরথুরে হয়ে গিয়েছেন। কে বলবে এক কালে পরভীন বাবির সঙ্গে তিনি সিনেমা করেছিলেন! হোটেলের মধ্যে দু’এক বার পড়েও যান সেলিম দুরানি। তবে এখনও চিপকের এমন ট্র্যাকে বল হাতে দিলে অবশ্যই জাডেজার চেয়ে ভাল ঘোরাবেন।
দুপুরে ক্লার্কের আউট ঘিরে যখন গর্জন উঠল, ভাষ্যকারেরা অনেকেই তখন বক্সের বাইরে। চিপকের ছাদে ঘুরছিলেন কপিল-গাওস্কর-আক্রম-সিধুরা। চিৎকার শুনে সবাই দৌড়লেন টিভির দিকে। জাস্ট চেক করা ক্লার্ক না মোজেস এনরিকে? কে গেল? ক্লার্ক মানে মঙ্গলবারই ফেরার টিকিট কেটে ফ্যালো। এনরিকে মানে টিকিট বদলাতে যেও না। ক্লার্ক শেষ দিনও দাঁড়িয়ে যেতে পারে। |
সফরে ক্লার্কই যে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান হবেন এখনই মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। একটাই কারণ, মুভমেন্টের গতি। ফুটস্পিডে ভীষণ চটপটে। তাই স্পিন এত ভাল খেলেন। এই সাফল্যের যেমন ব্যাকরণ আছে তেমনই এই তথ্যের পিছনে যথেষ্ট ব্যাকরণ নেই যে ক্লার্ক-পরবর্তী ৩৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়াকে কেন অলআউট করা যাবে না! এনরিকে না হয় ভাল খেলছেন। নাথন লিয়ঁকে ৪৭ বলে ফেরানো যাবে না? কলকাতায় মাঝরাতে নামা অতিথি অবশ্য এনরিকের ব্যাটিংটা ইন্টারনেটে দেখতে পেলে গভীর তৃপ্তি পেতেন। তিনিগ্রেগ চ্যাপেলই এনরিকেকে প্রথম বাছেন। আর অস্ট্রেলীয় বোর্ডকে বছরখানেক আগে লিখিত রিপোর্ট দেন, এই ছেলেটি ভবিষ্যতে সুপারস্টার হতে যাচ্ছে। অতএব ভারতীয় স্পিনাররা সিরিজে এখন পার্টনারশিপ ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে। ক্লার্ক প্লাস এনরিকে।
চিপকে জয়ের আগাম পারফিউমের মধ্যেও বোঁটকা গন্ধটা তাই থেকেই যাচ্ছে। কী হত মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের গিরিশৃঙ্গে না পৌঁছলে (রেকর্ড ভাঙল সচিন তেন্ডুলকরের ২১৭ রানের)। ধোনির ইনিংসটা সরিয়ে নিলে তো ভারতই ম্যাচ হারার চাপে পড়ে যায়। হয়তো বা প্রথম ইনিংসে অনেক পিছিয়েই শেষ করে। তার পর চতুর্থ ইনিংসে নিজেরাই নিজেদের ফাঁদে পড়তে পারত। এখন মাত্র ৪০ রান আর হাতে এক উইকেট দেখে যেটায় ভরসা পাওয়া যাচ্ছে সেটাই তো মারাত্মক হয়ে ওঠার আশঙ্কা ছিল।
অবশ্য ভারত টেস্টটা দশ জনে খেলছে। ইশান্ত শর্মাকে দ্বিতীয় ইনিংসে ধোনি বল দিলেন ৭৬তম ওভারে। ঠিক যেমন মেরিনা বিচের সামনে বয়স্করা বালির ওপর ক্রিকেট খেলার সময় অনেকক্ষণ পর খেয়াল হয়। খুদেটা এতক্ষণ গরমে ফিল্ডিং করছে। একবারও হাত ঘোরায়নি। থাক। করুক একটু।
আর ইশান্ত শর্মার সত্যি যা বোলিংয়ের ছিরি, কয়েক কিলোমিটার দূরের মেরিনা বিচেও কেউ আউট হবে না!
|
স্কোর |
প্রথম ইনিংস
অস্ট্রেলিয়া: ৩৮০
ভারত (আগের দিন ৫১৫-৮) |
ধোনি ক ওয়েড বো প্যাটিনসন ২২৪
ভুবনেশ্বর ক ক্লার্ক বো সিডল ৩৮
ইশান্ত নঃআঃ ৪
অতিরিক্ত ৩২
মোট ৫৭২।
পতন:৪০৬, ৫৪৬।
বোলিং: স্টার্ক ২৫-৩-৭৫-০, প্যাটিনসন ৩০-৬-৯৬-৫,
সিডল ২৪.৩-৫-৬৬-১,
লিয়ঁ ৪৭-১-২১৫-৩,
এনরিকে ১৭-৪-৪৮-১,
ক্লার্ক ৮-২-২৫-০, ওয়ার্নার ৩-০-১৯-০।
|
দ্বিতীয় ইনিংস
অস্ট্রেলিয়া
|
কাওয়ান এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৩২
ওয়াটসন ক সহবাগ বো অশ্বিন ১৭
ওয়ার্নার এলবিডব্লিউ হরভজন ২৩
হিউজ ক সহবাগ বো জাডেজা ০
ক্লার্ক এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৩১
ওয়েড বো হরভজন ৮
এনরিকে ব্যাটিং ৭৫
সিডল বো জাডেজা ২
প্যাটিনসন ক সহবাগ বো অশ্বিন ১১
স্টার্ক ক সচিন বো অশ্বিন ৮
লিয়ঁ ব্যাটিং ১২
অতিরিক্ত ১৩
মোট ২৩২-৯।
পতন: ৩৪, ৬৪, ৬৫, ১০১, ১২১, ১৩১, ১৩৭, ১৬১, ১৭৫।
বোলিং: অশ্বিন ২৮-৪-৯০-৫, হরভজন ২৭-৬-৫৯-২,
জাজেডা ২৬-৫-৬৮-২, ইশান্ত ৩-১-২-০। |
|
|