শহরে খেলার মাঠের অভাব থাকা নিয়ে অভিযোগ ছিল বাসিন্দাদের। সে কথা মাথায় রেখে ভাগীরথীর চরে খেলার মাঠ ও পার্ক তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে কালনা পুরসভা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, জঞ্জাল ফেলে চরের জমি উঁচু করে তার উপরে পলি ফেলে মাঠ তৈরি হবে। আর এ নিয়েই আপত্তি তুলেছেন কালনার ডাঙাপাড়া ও শশীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা। জঞ্জাল ফেলার ফলে এলাকা দূষিত হচ্ছে, এমন অভিযোগে পুরসভায় একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন কিছু বাসিন্দা। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, ওই বাসিন্দাদের খেলাধুলোর উন্নয়নের জন্য মাঠ তৈরির গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
কালনা শহরে খেলার মাঠ রয়েছে তিনটি। তার মধ্যে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে সারা বছর ধরেই নানা প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠান হয়। এ ছাড়া রয়েছে রাজবাড়ি ও মহিষমর্দিনী এলাকার মাঠ। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, খেলাধুলোর জন্য মাঠের চাহিদা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু শহরের মধ্যে মাঠ তৈরির জন্য আর কোনও ভাল জমি নেই। সে জন্যই পুরসভা ভাগীরথীর চরে একটি ফুটবল মাঠ ও একটি বিনোদন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা নেয়। এ জন্য ডাঙাপাড়া ও শশীগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৫০ বিঘা জমি চিহ্নিত করা হয়। অনুমতি নেওয়া হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছেও। |
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, মাঠ ও পার্ক তৈরির জন্য প্রথমে পুর এলাকায় জমা জঞ্জাল ট্রাক্টরে করে নিয়ে গিয়ে ফেলা হবে চরে চিহ্নিত জমিতে। তার পরে আশপাশের পলিমাটি ফেলা হবে জঞ্জালের উপর। তাতে চরের জমির উচ্চতা অন্তত দেড় ফুট বাড়বে। ক্রিকেট ও ফুটবলের দু’টি আলাদা মাঠ হবে। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের বিশ্রামাগার ও বসার জায়গা তৈরি হবে। মাঠ ও পার্ক তৈরির জন্য মোট এক কোটি টাকা খরচ হবে বলে পরিকল্পনা হয়েছে।
কিন্তু এই চরের জমিতে জঞ্জাল ফেলা শুরু হতেই বাধ সেধেছেন এলাকার মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। চরে জঞ্জালের আশপাশে খেলতে যাওয়া ছেলেমেয়েদের রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন বিশ্বাস, অজিত মাঝি, দেবাশিস বিশ্বাসদের বক্তব্য, “ভারী বৃষ্টি হলে দূষণ আরও বাড়বে। পুরসভাকে তাই প্রকল্প বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।” তাঁদের আরও দাবি, চরের জমি অনেকটা নীচে হওয়ায় বৃষ্টিতে জল জমার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সে সময়ে ওই মাঠে কতটা খেলা যাবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। এলাকার ৭৬ জন বাসিন্দার তরফে এ সব জানিয়ে কালনার পুরপ্রধান তথা স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।
পুরসভা অবশ্য কাজ থামাতে নারাজ। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “এলাকার মানুষকে বোঝানো হয়েছে, খেলাধুলোর সার্বিক উন্নয়নের জন্য চরে মাঠ ও পার্ক গড়া প্রয়োজন। শীঘ্রই জঞ্জালের উপরে মাটি ফেলা হবে। ফলে বেশি দূষণ ছড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই।” তাঁর দাবি, পুরসভার তহবিল ছাড়াও বিধায়ক তহবিলের টাকায় এই প্রকল্প রূপায়ণ হবে। এ ছাড়া মাঠের পরিকাঠামো উন্নত করতে ক্রীড়া দফতরকে অনুরোধ জানানো হবে। বর্ষায় জলে জমে যাওয়ার ব্যাপারে বাসিন্দাদের আশঙ্কা প্রসঙ্গে বিধায়কের দাবি, গত প্রায় বারো বছর ধরে এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |