|
|
|
|
রেলভাড়া কি ফের বাড়বে, প্রশ্ন সেটাই |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
জনমুখী চেনা ছক, না সংস্কার এই চিরন্তন দ্বন্দ্বের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আগামিকাল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ রেল বাজেট পেশ করতে চলেছেন পবনকুমার বনশল।
বহু বছর পরে রেল মন্ত্রক হাতে এসেছে কংগ্রেসের। তার পরেই সংস্কারের রাস্তায় হেঁটে সব স্তরে ভাড়া বাড়ানোর সাহস দেখিয়েছে তারা। কিন্তু দু’মাসের মধ্যে ফের ভাড়া বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে রাত পর্যন্ত দোলাচল রেল মন্ত্রকে। এক দিকে রেলের ক্ষতি কমানোর পক্ষে সওয়াল করছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও যোজনা কমিশন। অন্য দিকে, জনমোহিনী বাজেটের জন্য চাপ দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতাদের অনেকে। ভাড়াবৃদ্ধি নিয়ে এই লড়াইয়ের মীমাংসা করতে আজ সন্ধ্যায় রেল কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বনশল।
সেই বৈঠকের নিট ফল কাজ বাজেট পেশের আগে জানার উপায় নেই। তবে, রাজনীতির কারবারিদের অনেকেরই মতে, এখনই ফের ভাড়াবৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিলেও বৃদ্ধির পরিমাণ নগণ্য হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ডিজেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন করে জ্বালানি সারচার্জ বসিয়ে ঘুরপথে আয়বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রেল মন্ত্রকের একাধিক সূত্র। বসানো হতে পারে স্বাচ্ছন্দ্য করও। তবে বিপুল লোকসানে চলা কলকাতা মেট্রো রেলের ভাড়াবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে রেল মন্ত্রকের একাংশের মত। |
বাজেট ভাবনা |
• মেল-এক্সপ্রেসে বসতে পারে জ্বালানি সারচার্জ, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কর।
• বরাদ্দ কমতে পারে জমিজটে বন্দি রাজ্যের প্রকল্পগুলিতে।
• কলকাতা থেকে মুম্বই, দিল্লি ও চেন্নাইগামী নতুন ট্রেনের সম্ভাবনা কম।
• মিলতে পারে বাড়তি লোকাল ট্রেন। |
ভাড়া বাড়তে পারে মেট্রোর |
আছে |
হতে পারে |
৪ |
৫ |
৬ |
৫ |
৮ |
১০ |
১২ |
১৫ |
|
ভবিষ্যতে ভাড়া বাড়ানোর দায় নিজের কাঁধে না-রেখে ‘রেল ট্যারিফ অথরিটি’ গড়ে ফেলার কথাও কাল বাজেটে ঘোষণা করে দিতে পারেন বনশল। সে ক্ষেত্রে অথরিটির সুপারিশ মেনে বাজেটের পরেও ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির মতো যার দায় অনেকটাই এড়িয়ে যেতে পারবে শাসক দল।
কংগ্রেস নেতাদের অনেকের প্রস্তাব, ভোটের আগে যাত্রিভাড়া না-বাড়িয়ে পণ্য মাসুল বাড়িয়ে অবস্থা সামাল দিক রেল। এবং সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ছাড় দেওয়া হোক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যকে। কিন্তু রেল মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, এমনিতেই রেলে পণ্য পরিবহণ ক্রমশ কমছে। চলতি আর্থিক বছরেই পণ্য পরিবহণ কমেছে প্রায় দেড় কোটি টন। এর পর মাসুল বাড়ালে হিতে বিপরীত হবে।
ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সংশয় থাকলেও আসন্ন বাজেটে রেলের সার্বিক পরিকাঠামোগত উন্নতিতে অতিরিক্ত নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তারা। ওই তালিকায় একবারে উপরে রয়েছে পূর্ব-পশ্চিম পণ্যবাহী করিডর, সেমি হাই স্পিড ট্রেন, নতুন কোচ ও ওয়াগন নির্মাণের মতো ক্ষেত্রগুলি। পরিকাঠামো খাতে অর্থ বরাদ্দ করার লক্ষ্যে এ বার বড় মাপের নতুন প্রকল্প ঘোষণায় কাটছাঁট করতে চলেছেন রেলমন্ত্রী। এমনকী অর্থ বরাদ্দ কমতে চলছে আর্থিক ভাবে লাভজনক নয় এমন প্রকল্পেও। বর্তমানে রেলের হাতে মোট সাড়ে তিনশো প্রকল্প রয়েছে। এগুলি শেষ করতে প্রয়োজন প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে বহু প্রকল্প রয়েছে যেগুলির রেট অফ রিটার্ন নেতিবাচক। তাই মন্ত্রক স্থির করেছে যে প্রকল্পগুলির রেট অফ রিটার্ন ১৫ শতাংশের বেশি, শুধু সেগুলিতেই চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় পরিকাঠামো খাতে এক লক্ষ ডলার বিনিয়োগ হতে চলেছে। যে অর্থের একটি বড় অংশ যাবে রেলে। পূর্ব-পশ্চিম পণ্যবাহী করিডোর ছাড়াও বড় মাপের অর্থ বিনিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে মুম্বই-আমদাবাদ হাই স্পিড করিডোরে। এ ছাড়া আগামী এক বছরে প্রায় ১৬ হাজার ওয়াগন, প্রায় ৪ হাজার নতুন কোচ, ছ’শোর কাছাকাছি নতুন লোকো ইঞ্জিন বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। রাজস্থানের ভিলওড়াতে একটি কোচ তৈরির কারখানা বাজেটে ঘোষণা হওয়ার কথা থাকলেও আজ দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে আগেভাগেই তা জানিয়ে দেন রেলমন্ত্রী।
পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বড় মাপের বিনিয়োগ হতে চললেও এ বছরও আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে ব্যর্থ রেল। গত বাজেটে তৎকালীন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী যে যোজনা আয়তন স্থির করেছিলেন, তা পরে ৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়। ফলে আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও কমে আসে। সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও ছোঁয়া সম্ভব হয়নি। যাত্রিভাড়া বাবদ আয়ের সঙ্গেই কমেছে পণ্য পরিবহণ সূত্রে আয়ও। অন্যান্য অপ্রচলিত সূত্র থেকেও আয়ের লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি রেল।
টাকার টানাটানির মধ্যে বাংলার রেল প্রকল্পগুলির ভবিষ্যত কী?
রেল মন্ত্রক আজ ফের জানিয়েছে, জমি জট থাকায় রাজ্যের প্রকল্পগুলির ভবিষ্যত অনিশ্চিত। রাজ্য জমি না-দেওয়ায় বহু প্রকল্পের টাকা ফেরত আসছে। তাই টানাটানির সংসারে রাজ্যের প্রকল্পগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা অর্থহীন বলেই মনে করছে রেল মন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই আজ বাংলার প্রকল্পগুলি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তবে অধীর শিবিরের দাবি, প্রকল্পগুলি খাতায়কলমে যাতে চালু থাকে, সেই ন্যূনতম আর্থিক বরাদ্দের আশ্বাস তিনি পেয়েছেন। |
সহ প্রতিবেদন: অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|