লাভে টান পড়ার আশঙ্কা
আধার ঘিরে প্রশ্নচিহ্ন ব্যাঙ্কিং মহলে
প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশয় নেই কারও। তবে ‘আধার’ নিয়ে বছর পুরো না-ঘুরতেই একটা ‘কিন্তু’র জায়গা তৈরি হতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
সাধারণ নাগরিকের জন্য পরিচয়পত্রকে তাঁর দৈনন্দিন জীবনের সব কাজে ব্যবহার করার কথা ভেবেই আধার প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। আর সেই নানা কাজের অন্যতম ছিল প্রত্যেক নাগরিককে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা।
কিন্তু ব্যাঙ্কিং মহলেই এই প্রকল্পকে ঘিরে সব থেকে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। তাদের ভয়, এটাও ‘গরিবি হটাও’-এর মতোই তাদের লাভের টাকায় ভোটের স্বার্থরক্ষার প্রকল্প না-হয়ে ওঠে।
এ ছাড়াও তাদের প্রশ্ন, শুধু ভর্তুকির টাকার জন্য একটা অ্যাকাউন্টকে টিঁকিয়ে রাখার খরচ আছে। যদি ওই সব অ্যাকাউন্টে লেনদেন না-হয়, ব্যাঙ্কগুলি এই প্রকল্পে শুধু খরচেরই ভাগীদার হবে।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরি আমলাতন্ত্রকেই দুষছেন। তাঁর অভিযোগ, স্বাধীনতার ছ’দশক বাদেও সাধারণ মানুষের জন্য একক নাগরিক পরিচয়পত্র নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সরকার।
তবে উপদেষ্টা সংস্থা প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স (পিডব্লিউসি) অবশ্য তা মানতে নারাজ। ঠিক মতো ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখলে আধারই ব্যাঙ্কের ভবিষ্যতের বাজার হয়ে উঠবে বলে তাদের দাবি।
হয়তো। কিন্তু উল্টো দিকে প্রতীপবাবুর যুক্তিও স্পষ্ট। যে-ভাবে প্রকল্প চাপানো হচ্ছে, তাতে এই প্রকল্পে লাভের মুখ দেখা সমস্যা হয়ে যাবে। বাজার ধরতেই আধারের প্রস্তাব আসার আগে থেকে ব্যাঙ্কগুলি সাধারণ মানুষের জন্য বায়োমেট্রিক কার্ডের রাস্তায় হেঁটেছিল। কিন্তু আধার আসায় সেই ব্যবস্থা ফেলে নতুন করে চাকা আবিষ্কারের মতো ব্যাঙ্কগুলিকেও আধার প্রকল্পকে মেনে নিয়ে এগোতে হচ্ছে।
তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই মোবাইল সংযোগ ৮০ কোটির কাছাকাছি। সেখানে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ২৫-৩০ কোটি। ফলে মোবাইল ফোন ভিত্তিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা একটা বড় সমস্যার সমাধান করতে পারে। একই সঙ্গে এটিএম-ও মেটাতে পারে অনেক সমস্যা। কিন্তু ভারতের নিয়মরক্ষকেরা নিরক্ষর মানুষকে ডেবিট কার্ড দেওয়ার ব্যাপারে সহমত নন।
তাঁর যুক্তি, ব্যাঙ্ককে তার ব্যবসার জায়গা থেকে এগোতে দিলে এ’সব সমস্যা উঠতই না। কিন্তু তা হওয়ার নয়।
তাঁর দাবি, যাঁদের ডেবিট কার্ড দিতে আপত্তি, সেই মানুষেরাই কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অনেক কিছুই করে ফেলছেন। এই পরিস্থিতিতে নীতি নির্ধারকদের একটু অন্য ভাবে ভাবা উচিত। “ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট আমরা নিয়োগ করেছি। কিন্তু দোরগোড়ায় পৌঁছনোরও একটা খরচ আছে। তা মেটানোর মতো ব্যবসা কি এখান থেকে এই ভাবে হবে?” গভীর সংশয়ে প্রতীপবাবু।
২০১১ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে শুরু আধার প্রকল্পের। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই আশাবাদী। কিন্তু নীতি নির্ধারকদের লাল ফিতেই হয়ে উঠেছে সংশয়ের উৎস।
ন্যাশনাল পেমেন্টস কমিশন, যার মাধ্যমে ভর্তুকির এই টাকা মানুষের হাতে সরাসরি পৌঁছনোর কথা, তাতে দশটি ব্যাঙ্ক যুক্ত। স্টেট ব্যাঙ্ক ছাড়া অপর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার আশার উপর জোর দিয়েই অবশ্য হতাশার কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, দু’বছরের মধ্যেই যদি ২০ কোটি কার্ড দিয়ে দেওয়া যেতে পারে, তা হলে বাকিটাও সময় মতো হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা কত তাড়াতাড়ি হবে, তা নিয়ে তাঁর সংশয় রয়েছে।
তাঁর বক্তব্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও কেন্দ্রীয় সরকার যদি যৌথ ভাবে চেষ্টা করে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য পরিচয়পত্রের নানা জটিল দাবি সহজতর করে তোলে, তা হলে এই সমস্যা অনেকটাই মেটানো যাবে।
বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে সহমত হয়ে বলেন, “দেশের পূর্বাঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে যে প্রকল্পের শুরু, তা ঠিক মতো ছড়াতে পারলে ব্যাঙ্কিং শিল্পের পক্ষে একটি লাভজনক বাজার তৈরি হবে।”
এ ব্যাপারে একমত ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের সদ্য প্রাক্তন হওয়া শীর্ষকর্তা ভাস্কর সেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অন্য আরও একটি ব্যাঙ্কের মতোই ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট নিয়োগ করে আধারের ধাঁচে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করেছিলাম। অনেকটা কাজ এগিয়েছিল। তারপরই নির্দেশ আসে নতুন নিয়ম মেনে ফের ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট নিয়োগের ব্যবস্থা করার।” তাঁর যুক্তি, আধারের সঙ্গে তাঁদের চালু প্রকল্প মিলিয়ে দিলে একই কাজ দু’বার করে করতে হত না।
১৯৯০ সালে ভর্তুকি সরাসরি নাগরিকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করে মেক্সিকো। সে দেশে নাগরিক সংক্রান্ত তথ্য ভারতের থেকে অনেক বেশি সুসংহত থাকায় এই কাজ সহজতর হয়। মোবাইল ব্যাঙ্কিং-এর পথিকৃৎ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাঙ্কের হাত ধরে এই কাজ ভালই এগোচ্ছে বলে দাবি। মনমোহন সিংহ বলছেন, ভর্তুকি সরাসরি নাগরিকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া দরকার। প্রশ্ন, যে দেশে আধারের তথ্যভাণ্ডারের যাবতীয় কাজ মিটে যাওয়ার পরে নাগরিকের কাছে পরিচয়পত্র এক বছরেও পৌঁছয় না, সেই ব্যবস্থায় ২০১৭ সালের মধ্যে সব নাগরিকের অ্যাকাউন্ট খুব কঠিন স্বপ্ন নয় কি? সংশয় মেটানোর বল এখন সরকারের কোর্টে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.