বিনোদন: জিতে বিতর্কে ‘আরগো’
অঙ্ক না মেলার রাতে
পাই-এর চার

সুরজ, হোয়ার আর ইউ? ইউ আর আ মিরাকল!!
সেরা পরিচালকের অস্কার হাতে নিয়ে অ্যাং লি খুঁজছেন সুরজ শর্মাকে। দিল্লির পড়ুয়া সুরজ শর্মা। যাকে সারা দুনিয়া এখন চেনে ‘পাই’ বলে।
কোডাক থিয়েটারের ঠাসা ভিড়ের মধ্যে ঠিক সেই মুহূর্তে সুরজের হাত নাড়া অ্যাং দেখতে পেলেন কি না, জানা নেই। তবে ক্যামেরা দেখতে পেল। মুখে হাল্কা লজ্জা মেশানো আনন্দের আভা নিয়ে বসে আছে সুরজ। পুরোদস্তুর ফর্মাল পোশাক। তবে চশমাটা খোলা।
উত্থানে পতন
একটু বেসামাল। সেরা অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স। অস্কার মঞ্চে ওঠার মুখে
হঠাৎ হোঁচট। রবিবার রাতে ডলবি থিয়েটারে। ছবি: রয়টার্স
একটু আগেও চোখে চশমা দেখা গিয়েছে। হ্যাঁ, মোট ৯টা ক্যাটিগরিতে মনোনয়ন পাওয়া ‘লাইফ অফ পাই’-এর নাম যত বার ঘোষণা হয়েছে, তার অনেক বারই ক্যামেরা তাকাচ্ছিল সুরজের দিকে। বরং দেখা গেলই না প্রায়, বম্বে জয়শ্রীকে। সারা ভারতের প্রার্থনা অবশ্য ছিল তাঁর জন্যই। সেরা গানের জন্য গীতিকার এবং গায়িকা হিসেবে মনোনয়ন ছিল কর্নাটকি সঙ্গীতের এই শিল্পীর। একটু আগেই পাই-এর জন্য সেরা সঙ্গীতকারের অস্কার জিতেছেন মাইকেল ডানা। মাইকেল যখন আসন ছেড়ে মঞ্চের দিকে এগোচ্ছেন, তাঁর একটা আসন পরে এক ঝলক দেখা গেল জয়শ্রীকে। লাল শাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে ডানাকে অভিনন্দন জানালেন। তখনই শুরু হয়ে গেল ভারতের বুক ঢিপ ঢিপ। তবে কি স্লামডগ মিলিওনেয়ার-এর রিপ্লে হবে? সে বার এ আর রহমান সেরা সঙ্গীতকারের অস্কার জেতার পরে সেরা গানের পুরস্কারও পেয়েছিল স্লামডগ। সেই সুবাদেই গীতিকার গুলজারের অস্কার আর রহমানের দ্বিতীয় অস্কার আসে। এ বার সেরা গানের শিরোপা কি ছিনিয়ে নিতে পারবে পাই?
ধুকপুকুনি বাড়ছে। মঞ্চে গান গাইতে এসেছেন নোরা জোন্স। পশ্চিমে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের বৃহত্তম ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, সদ্য প্রয়াত রবিশঙ্করের কন্যা। এর পরেই কি তবে ভারতীয় সঙ্গীতের আর একটি বিজয় মুহূর্ত আসতে চলেছে? নাহ, তা আর হল না। জিতল ‘স্কাইফল’। এ বারের অস্কার-চিত্রনাট্য আসলে ইচ্ছাপূরণের অঙ্ক মেনে চলেনি। শুধু একাধিক মুহূর্ত উস্কে দিয়ে গিয়েছে সম্ভাবনার বীজ।

অস্কারে সেরা
আরগো
শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার হাতে আরগো-র পরিচালক বেন অ্যাফ্লেক।
রবিবার ডলবি (কোডাক) থিয়েটারে। ছবি: এএফপি
পরিচালক
অ্যাং লি
লাইফ অফ পাই
অভিনেতা
ড্যানিয়েল ডে লিউইস
লিঙ্কন
অভিনেত্রী
জেনিফার লরেন্স
সিলভার লাইনিংস প্লেবুক
সেরা ছবির কথাই ধরা যাক। মঞ্চে দাঁড়ানো জ্যাক নিকলসন ঘোষণা করছেন, ‘সেরা ছবির নাম ঘোষণায় চমক আছে। আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।’ পর্দায় কাট টু হোয়াইট হাউস। মিশেলের সংক্ষিপ্ত স্বাগত ভাষণ। এবং সেটা একেবারে হুবহু ওবামার ভাষণের মতো এই সেই আমেরিকা যেখানে প্রত্যেকের স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে। আবার জল্পনা। কোন ছবির কথা ভেবে এই মুখবন্ধ? এ বারের ‘নমিনেশনের’ তালিকায় লড়াকু সেনার তো অভাব নেই। আছেন ১৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ১৮৬০-এর আশেপাশে যিনি অ্যাফ্রো-মার্কিন দাসদের মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন (লিঙ্কন)। আছেন সিআইএ এজেন্টরা, ১৯৭৯ সালে তেহরানে নেমে কানাডার দূতাবাসে লুকিয়ে থাকা ৬ মার্কিনকে যাঁরা উদ্ধার করে এনেছিলেন (আরগো)। এবং সেই দলটি, যারা সম্প্রতি পাকিস্তানের মাটিতে নেমে খতম করেন ওসামা বিন লাদেনকে (জিরো ডার্ক থার্টি)।
অনেকেই যখন বাজি ধরছিলেন ‘লিঙ্কন’ বা ‘জিরো ডার্ক থার্টি’র উপরে, বিশেষ করে মিশেলের ভাষণ শোনার পরে, জবাবে এল চমক ‘আরগো’।
প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা বেন অ্যাফ্লেকের ছবিটি এর আগে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। সেরা ছবি এবং সেরা পরিচালনার জন্য পেয়েছে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারও। কিন্তু অস্কার রাতের পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। ইরান প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, আরগো ছবিটি শুধুই সিআইএ-র বিজ্ঞাপন। আধা সরকারি সংবাদসংস্থার অভিযোগ, আরগো-কে পুরস্কার দেওয়ার সময়ে যে ভাবে মিশেল ওবামা দৃশ্যে চলে এলেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
এত সব বিতর্ক অবশ্য রবিবার রাতে ডলবি থিয়েটারের (আগে যার নাম ছিল কোডাক থিয়েটার) মঞ্চে ছিল না। সেখানে শুধুই হিসেবের কড়ি মেলানোর চেষ্টা। কোনওটা মিলেছে। কোনওটা মেলেনি। একটা বড় অংশ কম্পিউটার অ্যানিমেশন, তাই সেরা সিনেমাটোগ্রাফি পাবে না লাইফ অফ পাই মেলেনি। সেরা অভিনেত্রীর দৌড়ে এগিয়ে জিরো ডার্ক থার্টি-র জেসিকা চ্যাস্টেন মেলেনি। লিঙ্কনের জন্য ড্যানিয়েল ডি লুইস অবশ্য সেরা অভিনেতা হলেন! পুরস্কার দিলেন মেরিল স্ট্রিপ। ড্যানিয়েল মজা করে বললেন, ‘আমার তো ম্যাগি থ্যাচার (যে চরিত্রের জন্য গত বার অস্কার পান মেরিল) করার কথা ছিল। আর স্পিলবার্গ লিঙ্কনের জন্য মেরিলকে চেয়েছিলেন!’ ১১টি মনোনয়ন পাওয়া লিঙ্কন সেরা অভিনেতা-সহ দু’টি অস্কারই পেল কেবল। সে দিক থেকে ৯টি মনোনয়ন পেয়ে ৪টি জিতে এ বারের সেরা বাজি কিন্তু ‘লাইফ অফ পাই’-ই। বিশেষ করে সেরা পরিচালক জেতাটা হিসেবের বাইরেই ছিল।

অস্কারের রেড কার্পেটে ‘পাই’
সূরজ শর্মা। ছবি: এএফপি
পাই-এর প্রাপ্তি

• শ্রেষ্ঠ পরিচালক
• শ্রেষ্ঠ আবহসঙ্গীত
• শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফি
• শ্রেষ্ঠ ভিস্যুয়াল এফেক্ট
তবে হ্যাঁ। সেরা ছবি নির্বাচিত হয়ে ‘আরগো’-র কলাকুশলীরা যখন মঞ্চে ভিড় করছেন, তখন আবার স্লামডগের স্মৃতি ফিরল অনেকের মনেই। দেব-ফ্রিডা-অনিল কপূর আর মুম্বইয়ের খুদেরা সে বার ওই ভাবেই মঞ্চে উঠেছিলেন। সুরজরা সেটা পারলেন না। অ্যাং লি-র মুখে ‘নমস্তে’ শুনেই খুশি থাকতে হল। তবে চলচ্চিত্রের বিশ্বায়িত বাজারের কল্যাণে ভারতের কাছে এমন সুযোগ আরও আসবে, ক্রমশ বাড়বে বলেই মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রি ঘনিষ্ঠেরা। অস্কারজয়ী জেফ্রি ব্রাউন তো ক’দিন আগেই কলকাতায় শুট করে গিয়েছেন! কে বলতে পারে, পরের বার সুরজের জায়গায় পরমব্রতরা থাকবেন না?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.