উপনির্বাচনের ফল ২৮শে ফেব্রুয়ারি
অকাল নির্বাচনে উজাড় ভোটে জয় দেখছেন তিন পক্ষই
দেড় বছরের মাথায় ফের নির্বাচন।
‘মন্ত্রিত্বের লোভে বেইমানি’। কংগ্রেসের কটাক্ষে পাল্টা তোপ। জোট ছিঁড়ে যাওয়ায় মাঝখান থেকে বামেদের ‘নেপোয় দই মারার’ সুযোগ। আর সীমান্তে, ধর্মের তাস খেলে ভোট বৃদ্ধির দাবি বিজেপি-র।
দেড় মাস তোপ-পাল্টা তোপের মাঝে, চুপিসাড়ে কখনও বা সাড়ম্বরে প্রচার সেরে ক্লান্ত রাজনৈতিক ‘দাদা’রা হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে ২৮ তারিখের দিকে। মাসান্তে ওই দিনেই প্রকাশ হবে তিন উপ-নির্বাচনের ফল।
উপ-নির্বাচনে ভোটারদের টেনে এনে লাইনে দাঁড় করানো বেশ কষ্টের। সে দীর্ঘ লাইনই হোক কিংবা ঘন ঘন ভোটের বিরক্তি, মানুষ এ সময়ে কিঞ্চিৎ উদাস হয়েই ভোটকেন্দ্রে পা-বাড়াতে বিশেষ ইচ্ছুক থাকেন না। বস্তুত রাজ্যে উপ-নির্বাচনে এ ছবিই দেখে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। ছবিটা বদলেছে রেজিনগর, ইংরেজবাজার, নলহাটিতে। রাজনীতির কারবারিরা এমনকী নির্বাচন কমিশন ঈষৎ অবাক। ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, বেশি ভোট সুবিধা করে দেবে বিরোধীদেরই। সাধারণত প্রার্থীর মৃত্যু হলেই উপ-নির্বাচন, এটাই দেখতে অভ্যস্থ ছিলেন ভোটাররা। কিন্তু এ বার তিনটি উপ-নিবার্চন নিছক কোনও আটপৌরে কারণে হচ্ছে না। তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, ক্ষোভ এবং ক্ষমতা, লোভ এবং প্রাপ্তি কিংবা বিশ্বাসঘাতকাতা ও বৈইমানির মতো কিছু চোখা শব্দ।
দু’টি উপ-নির্বাচনের স্পষ্ট কারণ যে ‘লোভ’ তা নিয়ে রাজনীতিকদের বিশেষ সন্দেহ নেই। নেই আমজনতার। বিধানসভা ভোটের দেড় বছরের মধ্যে রেজিনগর ও ইংরেজবাজারের কংগ্রেস প্রার্থী দল বদল করে শাসকদলে যোগ দিয়েছেন নিছক মন্ত্রিত্বের লোভে। বীরভূমের নলহাটিতেও উপ-নির্বাচনের কারণ মন্ত্রিত্ব লোভ না হলেও বিধায়ক থেকে সাংসদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ। মোট কথা, রাজনীতিকদের মতে, এই অকাল নির্বাচনে তাঁদের বিরক্তি প্রকাশ করেই মানুষ ‘দু-হাতে’ ভোট দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের রেজিনগরও তার ব্যতিক্রম নয়। চায়ের দোকান থেকে ফেরিঘাট, পাড়ার মোড় থেকে বাড়ির অন্দরমহল সর্বত্রই এ নিয়ে তপ্ত আলোচনা। সেই সঙ্গে, ফল যাই হোক নিতান্তই কম ভোটের ব্যবধানে যে জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হবে, তা নিয়েও নিশ্চিত রাজনীতির কারবারিরা।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৪টি পঞ্চায়েতের ৬টিতে বাম ও ৮টিতে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। লোকসভা এবং গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভোটের নিরিখে অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই সামান্য ভোটে হলেও এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। হিসেবটা পাল্টাতে শুরু করে বিধানসভা নির্বাচনের পরেই। জোট বাধার আগেই কংগ্রেস-তৃণমূল সদভাব তেমন ছিল না। ভাঙার পরে তা আরও প্রকাশ্যে চলে আসায় বামফ্রন্ট তার হারানো জমি উদ্ধারে নেমে পড়ে। গত দেড় বছরে ওই এলাকায় স্কুল ভোটে তাই ক্রমান্বয়ে জিতেছে বামেদের জয় চোখে পড়েছে। নামমাত্র একটি স্কুল নির্বাচনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস।
শুধু হুমায়ুন নন। উপ-নির্বাচনের প্রাক্কালে বামেদের ঘর ভাঙতেও তৃণমূল ছিল তৎপর। ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে ৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সিপিএমের দখলে থাকা রামনগর-বাছড়া পঞ্চায়েতেও সম্প্রতি থাবা বসিয়েছে তৃণমূল।ওই পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় অনেকেই মনে করছেন বামের সাংগঠনিক অস্ত্রও তাঁর হাত ধরে চলে গিয়েছে তৃণমূলের ঘরে। ফলে ভোটেও তার ফয়দা তুলবে হুমায়ুন। পাশাপাশি, সোমপাড়া-১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েতের লড়াইও বাম-তৃণমূল সরাসরি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এলাকায় সাম্প্রদায়িক তাল খেলেই একটা চাপা উত্তেজনা তৈরি করে এই লড়াই দিইয়ে রেখেছে তৃণমূল। শক্তিপুর পঞ্চায়েতে অবশ্য চেহারা ভিন্ন। সেখানে লড়াই ত্রিমুখী। কামনগর বর্তমানে কংগ্রেসের দখলে থাকায় সেখানে কংগ্রেসই এগিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন এলাকার রাজনৈতিক ‘পন্ডিতরা’। ভাগীরথীর পূর্ব দিকে ৯টি পঞ্চায়েতে দেড় বছরে হুমায়ুনকে ক-বার দেখা গিয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যেই। তবে নির্বাচন ঘোষণার পরে এলাকায় পড়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। তাতে কি ফল হবে? স্থানীয় বাসিন্দারা তা মনে করছেন না। বেলডাঙা-১ ব্লকের বেগুনবাড়ি কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হলেও স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। একটা বড় অংশের ভোট ভাগ হয়ে যাহে বাম ও তৃণমূলের মধ্যে। কাপাসডাঙা, দাদপুর, আন্দুলবেড়িয়া -১ ও ২ এবং রামপাড়া-১ ও ২ অবশ্য কংগ্রেসের চেনা ঘাঁটি বলেই জানান বিশেষজ্ঞরা। মির্জাপুর-১ পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে। আবার কংগ্রেস প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরীর বাড়িও ওই এলাকায়। ভোট বাগ হলে লাভ কিন্তু তৃণমূলের। কাশিপুরেও বামপ্রার্থী এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করছেন অনেকে।
এই জটিল সমীকরণ শেষে?
বামফ্রন্টের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এত ভোট কেন পড়েছে জানেন, মানুষ আমাদের ফিরিয়ে নিতে চাইছে।” কংগ্রেস প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরীর আশা, “ভোটে গণ্ডগোল হয়নি তাই আমরাই জিতব।” আর যাঁর জন্য এই অকাল নির্বাচন, সেই তৃণমূল প্রার্থী হুমায়ুন বলছেন, “ভোটে উৎসবের মেজাজ ছিল। ভোটাররা উন্নয়ন ও পরিবর্তনেই মত দেবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.