পক্ষিনিবাস সংলগ্ন কুলিক নদীতে দূষণ বেড়ে চলায় উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ও পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বন দফতরের সামনে ওই ঘটনা চললেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অথচ দুর্গন্ধের জন্য পক্ষিনিবাসে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। দূষিত জল খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে পাখি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পক্ষিনিবাস চত্বরে কয়েকটি মৃত পাখিও তাঁরা উদ্ধার করেছে। অন্য দিকে দূষণের জন্য নদীর জলে মাছ খুব কমে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা বিপাকে পড়েছে। কুলিক দূষণের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বনমন্ত্রী বলেন, “পক্ষিনিবাস এলাকার নদী দূষণের ঘটনা কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। যে ভাবে হোক সেটা বন্ধ করতে হবে। দফতরের অফিসারদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” প্রশাসনের কর্তারাও সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “বাসিন্দারা সচেতন না হলে প্রশাসন অথবা বন দফতরের পক্ষে কুলিক নদীর দূষণ ঠেকানো সম্ভব নয়। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে বন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
কুলিকে কাচার পর নদীর চরে শুকোনো হচ্ছে প্যান্ডেলের কাপড়। ছবি: তরুণ দেবনাথ। |
পক্ষিনিবাসের পেট চিরে বয়ে গিয়েছে কুলিক নদী। পক্ষিনিবাসের পরিযায়ী পাখিরা সেখানে জল খায়। জল থেকে গুগলি, মাছ শিকার করে খায়। পরিবেশপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, গত একমাস থেকে ওই নদীতে দূষণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বাসিন্দাদের একাংশ রাতে মৃত গবাদি পশুর দেহ সেখানে ফেলছে। সেগুলি পচে দূষণ ছড়াচ্ছে। দিনভর চলে গরু ও মোষ স্নান করানো, কাপড় ধোয়া, বাসন মাজার কাজ। শুধু কী তাই! স্থানীয় ডেকোরেটরদের কর্মীরা প্রতিদিন বস্তা বোঝাই করে প্যান্ডেলের কাপড় নদীতে যাচ্ছেন। সেখানে কাপড় কাঁচার কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহন ধোয়া হচ্ছে। ওই কারণে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় নদীর জলে মাছের সংখ্যা কমেছে। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৫০ জনেরও বেশি মৎস্যজীবী কুলিক নদীতে মাছ ধরে। পিপল ফর অ্যানিম্যালের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া বলেন, “বন দফতর ও জেলা প্রশাসনের নজরদারির অভাবে নদী দূষণের ঘটনা বেড়েছে। কিছুদিন আগে বন দফতরের কর্তাদের সমস্যার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। নাকে রুমাল চেপে তবেই পক্ষিনিবাসে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব হচ্ছে। দূষণ ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আন্দোলন শুরু হবে।” হিমালয়ান অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পীযূষকুমার দাস বলেন, “নদী দূষণের জন্য কুলিক পক্ষিনিবাস চত্বরে প্রকৃতি পাঠ শিবির করা যায় না। সেখানে পাখি ও মাছ কমছে। বন দফতরের কর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।” |