মিছিলেই ভাসল হরতাল, সংঘর্ষে নিহত ৫
গ্নিপরীক্ষায় সফল, এ এক আধুনিক বাংলাদেশ! হাতে জাতীয় পতাকা। মাথায় বাঁধা জাতীয় পতাকা। উত্তাল মিছিলে মৌলবাদীদের ডাকা হরতাল বানচাল করে দিলেন বাংলাদেশের নতুন, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল প্রজন্ম।
শুক্রবার জামাতে ইসলামির সমর্থক ১২টি মৌলবাদী দল অতর্কিত হামলা চালিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক অশান্তি বাধায়। ঢাকার শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনের সমর্থনে বাংলাদেশের প্রতি জনপদে যে গণজাগরণ মঞ্চ গড়া হয়েছিল, মৌলবাদী দুষ্কৃতীরা সেগুলি নিশানা করে ভাঙচুর করে। কয়েক জায়গায় ভাষা শহিদ মিনারও ভাঙা হয়, ছেঁড়া হয় জাতীয় পতাকা। তার পরেই রবিবার হরতালের ডাক দেয় মৌলবাদীরা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামাতে ইসলামি হরতালকে সমর্থন করে।
অন্য দিকে শাহবাগের বিক্ষোভকারীরা এই হরতাল উপেক্ষা করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আবেদন জানায়। গত কাল শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধে শপথ নিয়ে শাহবাগের বিক্ষোভকারীরা বলেন, “লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে একাত্তরে যে পতাকা আমরা অর্জন করেছিলাম, তাতে ওরা আগুন দিয়েছে, অসম্মান করেছে আমরা এর বিচার চাই আমাদের প্রাণের পতাকার, সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে চাই।”
অন্য বার হরতালের আগের সন্ধে থেকেই জামাতের দুষ্কৃতীরা যানবাহন পুড়িয়ে সন্ত্রাস শুরু করে।
রবিবারের ঢাকা। —নিজস্ব চিত্র
হরতালের দিন সকালেও তারা পথচলতি মানুষ ও গাড়ির ওপর হামলা চালায়। এর আগে গত সোমবার মানুষ রাস্তায় নেমে জামাতের ডাকা হরতাল ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। তার পরে এ দিন। হরতালকারীদের বদলে সকাল থেকেই ঢাকা-সহ গোটা দেশের পথের দখল নেন জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলের মানুষ। তাঁদের অনেকের মাথাতেও জাতীয় পতাকা বাঁধা। কোথাও কোথাও মৌলবাদীরা জড় হওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ ও বিজিবি তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মানিকগঞ্জে সশস্ত্র জামাত কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন কক্সবাজারেও সংঘর্ষে ১ জন মারা গিয়েছেন।
ঢাকায় সকালে মানুষ যে ভাবে পথে নামেন, সেই অনুপাতে গাড়িঘোড়া ছিল কম। তার পরে বেলা একটু গড়াতে হরতালকারীরা একেবারেই উধাও হয়ে যান। ট্রেন ও লঞ্চ চলে স্বাভাবিক ভাবে।
এই প্রথম হরতালের দিনেও চালু ছিল হাইকোর্ট। ব্যাঙ্ক ও অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। শেয়ারবাজারে লেনদেনও হয়েছে আর পাঁচ দিনের মতোই।
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, এমনকী সমস্ত প্রাথমিক স্কুলও এ দিন ছিল খোলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা শান্তিতে পরীক্ষা দিয়ে শাহবাগ স্কোয়্যারে এসে জড়ো হন। সকালে শাহবাগের তরুণরা হরতাল বানচাল করার ডাক দিয়ে কয়েক কিলোমিটার মিছিল করেন। সামিল হন বিভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠনের কর্মীরা। এই মিছিলে মেয়েদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
ঢাকার বাইরেও চিত্রটা ছিল একই। মানুষ হরতাল উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছেন। কোথাও কোথাও গাড়িঘোড়া সকালের দিকে কম থাকায় তাঁদের ভোগান্তিও হয়। চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে শুক্রবার প্রেস ক্লাবেও ভাঙচুর করেছিল দুষ্কৃতীরা। আজ সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করেন। নতুন মঞ্চ বানানো হয় খুলনা, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহিতেও। হাজারো মানুষের প্রতিরোধে গোটা দিন মৌলবাদীদের রাস্তায় দেখা যায়নি।
হরতাল বানচাল করার জন্য সরকার ও আওয়ামি লিগ মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুনল ইসলাম বলেন, গণজাগরণের যে ঢেউ উঠেছে, তার বিরোধিতা করে কেউই সুবিধা করতে পারবে না।
মৌলবাদীদের হরতাল সমর্থন করে নিজেদের মুখোস বিএনপি নিজেই খুলে ফেলেছে। কিন্তু বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি অভিযোগ করেছেন, আওয়ামি লিগ ও প্রশাসন সর্বত্র হামলা চালিয়ে শান্তিপূর্ণ হরতাল বানচাল করেছে। হরতালকারীরা অশান্তি এড়াতেই রাস্তায় নামেননি। মানিকগঞ্জে ৪ জনের প্রাণহানির প্রতিবাদে মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।
হরতালের সমর্থন করলেও বিএনপি-র কর্মীরা তা সফল করতে কেন সে ভাবে মাঠে নামেনি, সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান রিজভি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.