মানুষের বসতের কাছে আর নেই বাবুইয়ের বাসা
ঠিকানা বদলেছে বাবুই।
গ্রামের তালবন, পুকুরপাড় না হয় নারকেল বাগান, কখনও বা গৃহস্থের একেবারে উঠোন ঘেঁষা সারবদ্ধ সুপুরি গাছে আগে তারা বাঁধত তাদের উলটো ঘটের মতো বাসা। রজনীকান্ত থেকে জীবনানন্দ, সকলেই মুগ্ধ হয়েছেন তার শিল্পের সৌকর্যে। এখন আর সেই সহজ-সুন্দর বাসার দেখা পাওয়া সহজ নয়। বাবুই বাসা বাঁধছে লোকালয় থেকে দূরে।
গ্রামের পুকুরপাড়, ধানি-মাঠের চেনা বসত ছেড়ে বাবুই পাখিরা ঠিকানা বদলে ফেলছে কেন?
বিশেষজ্ঞরা যা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে পক্ষীবিদদের।
হালে গ্রাম-বাংলায় জমিতে অত্যধিক কীটনাশক দেওয়ার প্রবণতায় জমি থেকে হারিয়ে গিয়েছে বিভিন্ন রকমের মাঠ-পোকা। হারিয়েছে ফড়িং থেকে উচ্চিংড়ের মতো ‘বন্ধু’ কীটপতঙ্গও। আর, তার ফলে বাবুই তার নবাগত ছানাপোনার প্রয়োজনীয় খাবারই জোগাড় করতে পারছে না। বোম্বে ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটির পক্ষী বিশেষজ্ঞ সিএন অম্বেমডকর দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের আনাচ কানাচ ঘুরে বাবুই পাখির জীবন যাপনের খোঁজ করে চলেছেন। তিনি জানান, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, লোকালয় থেকে বাবুই মুখ ফিরিয়েছে দেশের অন্যত্রও। তিনি বলেন, “কীটনাশকের বহুল ব্যবহার ছাড়াও, বাবুই জাতীয় পাখি (বায়া উইভার্স) লোকালয় ছেড়ে যাচ্ছে গাছের অভাবেও। গ্রামাঞ্চলে তাল, নারকেল কিংবা সুপুরি, খেজুরের মতো যে সব গাছে তারা বাসা বাঁধত সেই সব গাছের হালে বড়ই আকাল। তাই জঙ্গলকেই তারা বেশি পছন্দ করছে আজকাল।” উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞানের শিক্ষক অশোক সাহাও মনে করেন, “রাসায়নিক সারের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সঙ্গে রয়েছে কীটনাশকের দাপট। তারা বন্ধু পোকাও মেরে ফেলে। তারই কু-ফল বাবুইয়ের সর্বনাশ ডেকে আনছে।”
শুধু তাই নয়, অতিফলনশীল ধানও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উত্তরবঙ্গ কষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা পক্ষী বিশারদ সুমিত চক্রবর্তী বলেন, “অতিফলনশীল শস্য খেয়ে চড়ুই, মাঠ-চড়ুই, বাবুই জাতীয় পাখিরা ক্রমেই প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে।” তাই গ্রামের চেনা বসত ছেড়ে ঠিকানা বদলে বাবুই পাখিরা এখন ঘর বাঁধছে লোকালয় থেকে দূরে, জল-জঙ্গলে। উত্তরবঙ্গের অভয়ারণ্য থেকে সুন্দরবনের হেঁতাল জঙ্গল এখন তাই বাবুইয়ের নিশ্চিন্ত ঠিকানা। বর্ষার মুখে তাল-নারকেলের মতো উঁচু গাছ-গাছালিতে ঘর বাঁধতে শুরু করে পুরুষ বাবুই। ২০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার সরু লম্বা ঘাস ছিঁড়ে তাদের পোক্ত ঠোঁটে তাল কিংবা সুপুরি পাতায় নিপুন বুননে বাসা তৈরি শুরু করে বাবুই। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই বাসা প্রায় সম্পূর্ণ করে পুরুষ পাখিটি মন দেয় সঙ্গিনীর খোঁজে। বাসা যার সব চেয়ে উঁচুতে এবং শক্তপোক্ত তারই জোটে সেরা সঙ্গী। তবে বাসার ভিতরের অর্থাৎ অন্দরমহলের কাজটা করে স্ত্রী-পাখি। বিশেষজ্ঞরা জানান, অনেক সময়েই মিলনের পরে স্ত্রী পাখিটি অবশ্য অন্য পুরুষ পাখির বাসাতে গিয়েও ডিম পাড়ে। ২ থেকে ৪টি ডিম, ১৫ থেকে ১৭ দিন তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে আসে নতুন অতিথি। দিন কুড়ির মধ্যেই উড়তে সক্ষম হয়ে ওঠে তারা।
মাস কয়েক সেই বাসায় থেকে তারপর স্বাবলম্বী হয়ে ছেড়ে উড়ে যায় ছানারা। বছরের বাকি সময়টা বাবুইয়ের ঠিকানা ঘন ঘাস-বন, নদীর চরে কাশ বন ইত্যাদি। অনেক সময়ে বাবুইয়ের পরিত্যক্ত সেই ঠিকানার দখল নেয় মুনিয়ার ঝাঁক।
শিলিগুড়ির প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠন ‘ন্যাফ’র পক্ষে অনিমেষ বসু বলেন, “সমস্যাটা কী জানেন, এখন নদীর চরও দখল করে নিচ্ছি আমরা। বাবুই তার চেনা বসতেই ভিটে হারা হয়ে পড়ছে।” বাবুই তাই আর মানুষের প্রতিবেশী রইল না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.