সূর্য থেকে ছড়িয়ে পড়া তড়িদাহত কণার স্রোতের মুখে পড়ে মাঝেমধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন যায় মেরু অঞ্চল দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের। কখনও বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় মহাকাশে ভেসে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহও।
বিজ্ঞানীরা জানান, সৌরঝড় (ওই তড়িদাহত কণার স্রোত) মহাকাশের এক আকস্মিক ঘটনা। যার ফলে এর যথাযথ পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, সূর্য নিয়ে গবেষণায় নাসার নয়া আবিষ্কারের ফলে সেই সমস্যা এ বার তা কাটতে চলেছে। কী ভাবে?
বিজ্ঞানীরা জানান, সম্প্রতি নাসার টেলিস্কোপে সূর্যের বহিঃস্তরে (করোনা) এক বিরাট চৌম্বকক্ষেত্রের ছবি ধরা পড়েছে। যা থেকে সৌরঝড়ের নানা অনাবিষ্কৃত রহস্য জানা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসার হেলিওফিজিক্স (সৌরপদার্থবিদ্যা) বিভাগের বিজ্ঞানী মধুলিকা গুহঠাকুরতা। তিনি বলছেন, “এই আবিষ্কার সূর্য সংক্রান্ত গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” শুধু তাই নয়, সৌরঝড়ের অজানা তথ্য মহাকাশের আবহাওয়া সংক্রান্ত পূর্বাভাসেও সাহায্য করবে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি।
কী এই সৌরঝড়?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের বহিঃস্তরে থাকা উচ্চতাপযুক্ত প্লাজমার আবরণ (করোনা) থেকে মাঝেমধ্যেই তড়িদাহত কণার স্রোত বেরিয়ে আসে। তা ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। তাকেই বলা হয় সৌরঝড়। শুধু মহাকাশ-ই নয়, সেই কণার স্রোত প্রভাবিত করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকেও। কী ভাবে?
গবেষকেরা জানান, পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে ভূ-চৌম্বক শক্তি কাজ করে। আর সেই কারণেই ওই তড়িহাদত কণার স্রোত পৃথিবীর মেরু অঞ্চল দিয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে প্রবেশ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই কণার স্রোত বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার ফলে ওই এলাকার আকাশে রং-বেরঙের খেলা (অরোরা) দেখা যায়। পৃথিবীর পরিমণ্ডলে ওই তড়িৎগ্রস্ত কণা ঢুকে পড়ার ফলেই মেরু এলাকায় বিমান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। |
|
সূর্যের বহিঃস্তর থেকে বেরিয়ে আসা তড়িদাহত কণার স্রোত
|
প্রভাব পড়ে |
• মেরু এলাকা দিয়ে
উড়ে যাওয়া বিমানে। |
• মহাকাশে ভাসমান
কৃত্রিম উপগ্রহে, মহাকাশযানে। |
প্রথম পর্যবেক্ষণ |
• ১ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৯
সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ*
২৪ অক্টোবর, ২০১২
|
* এ দিন পর্যন্ত নথিভুক্ত হিসেব |
|
এক বিমানচালক জানিয়েছেন, মেরু অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত সৌর বিকিরণ হলে বিমানের সঙ্গে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হয়। অল্প পরিমাণে বিকিরণে বিমান চলতে পারলেও বিমানে থাকা মানুষজনের শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থাগুলির নিয়ম অনুযায়ী, এক জন বিমানচালক মাসে এক বারের বেশি মেরু অঞ্চল দিয়ে যেতে পারেন না। বিমানচালকেরা জানিয়েছেন, সাধারণত আমেরিকার একটি আবহাওয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে মেরু অঞ্চলের আবহাওয়ার পূর্বাবাস দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও অনেক সময় আচমকা সৌরঝড়ের মুখে পড়তে হয় তাঁদের।
তড়িদাহত কণার সংস্পর্শে এসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মহাকাশযান ও কৃত্রিম উপগ্রহ। তড়িদাহত কণার প্রভাবে সেগুলির আয়ুও কমে যেতে পারে বলে গবেষকদের দাবি।
বিজ্ঞানীদের দাবি, নাসার সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতে মহাকাশে সৌরঝড় সংক্রান্ত নানা গবেষণা ও পূর্বাভাস তুলনায় সহজ হবে। সৌরঝড়ের আগাম সতর্কতা পেলে মেরু অঞ্চলে বিমান চলাচল এবং কৃত্রিম উপগ্রহের রক্ষণাবেক্ষণেও সাহায্য মিলবে বলে তাঁদের অভিমত। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৭০০ কেলভিন অথচ বহিঃস্তরে তা প্রায় ১০ লক্ষ কেলভিন! কেন?
মধুলিকা বলছেন, সাম্প্রতিক আবিষ্কারই এই সব রহস্যের সমাধানে দিশা দেখাতে পারে। তাঁর কথায়, “সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকা বিশাল পরিমাণ শক্তি রয়েছে। সেগুলি নিয়ে আরও গবেষণার মধ্য দিয়েই এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।”
সূর্যের বহিঃস্তর ও সৌরঝড় নিয়ে অনেক দিন গবেষণা চালাচ্ছে ভারতও। সরকারি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সৌরঝড় নিয়ে গবেষণার জন্য দেশের প্রথম কেন্দ্র তৈরি হতে চলেছে কল্যাণীর মোহনপুরে। সৌর অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ইসরোও। ২০১৬ সালে করোনার উপরে নজরদারি চালাতে ‘আদিত্য’ নামে একটি মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
|
পরমাণু বর্জ্যের ট্যাঙ্কে ছিদ্র
সংবাদসংস্থা • ওয়াশিংটন |
পরমাণু বর্জ্য ফেলার ভূগর্ভস্থ ট্যাঙ্কে ছ’ছ’টি বড় ছিদ্র! তাও আবার বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্র হ্যানফর্ডে! ঘটনায় স্বভাবতই মাথায় হাত তামাম পরিবেশবিদদের।
উত্তর-পশ্চিম আমেরিকার ওই পরমাণু কেন্দ্রটিতে ১৭৭টি ট্যাঙ্ক রয়েছে। প্লুটোনিয়াম উৎপাদনজাত গ্যালন গ্যালন উপজাত দ্রব্য জমা হয় ওই ট্যাঙ্কগুলিতে। গত সপ্তাহের গোড়ার দিকে হ্যানফোডের্র সেক্রেটারি চু জানান ট্যাঙ্কগুলির একটিতে একটি ছিদ্র দেখা গিয়েছে। তবে শনিবার তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি কর্তৃপক্ষের তথ্যে কিছু ভুল ছিল। বর্জ্য ফেলার ট্যাঙ্কে ছিদ্র থাকার দরুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত গ্যাস, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই ক’দিনেই হ্যানফর্ডের মাটিতে মিশেছে প্রায় ১০ লক্ষ গ্যালন পরমাণু বর্জ্য। তবে ওয়াশিংটনের গর্ভনর জে ইনস্লির দাবি এখনই ভয় পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। তাঁর আশ্বাস, কলম্বিয়া নদী থেকে হ্যানফর্ড পরমাণু কেন্দ্রের দূরত্ব ৫ মাইলেরও বেশি তাই কাছাকাছি এলাকাগুলির বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যহানি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাঙ্কগুলি থেকে বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন। |