তৃণমূলের ঝান্ডা হাতেই থানায় হামলা, মহিলা-সহ আহত চার
বাধ্য পঞ্চায়েত কর্মীর কান-কাটা বা সিটু সমর্থকের চোখে আঘাত করাতেই শেষ নয়। এ বার একেবারে থানায় চড়াও হয়ে তাণ্ডব চালালো তৃণমূল।
জেলায় জেলায় বন্ধ-সমর্থকদের উপর তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে গত দু’দিন ধরে। যার জেরে বৃহস্পতিবারই জলঙ্গিতে কান কাটা গিয়েছে পঞ্চায়েত কর্মীর। কুলপিতে চোখে মারাত্মক চোট পেয়েছেন সিটু সমর্থক। শুক্রবার বনগাঁ থানায় হামলার ঘটনার সঙ্গে অবশ্য বন্ধের যোগ নেই। দুর্নীতির অভিযোগে সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি দিতে গিয়েই বে-লাগাম হয়ে পড়েন তৃণমূল সমর্থকেরা। দলের ঝান্ডা নিয়েই থানা ভাঙচুরে নেমে পড়েন তাঁরা। গণ্ডগোলে জখম হন থানার তিন কর্মী। চোট পান ডায়েরি করতে আসা এক মহিলাও।
দলের পতাকা হাতে এই গণ্ডগোলের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূলের নেতারা। ঘটনার পরেই এলাকায় খবর নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “জেলায় খবর নিয়ে জেনেছি, যারা থানায় গোলমাল করেছে, তারা তৃণমূলের কেউ নয়।” রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও দাবি করেন, “যারা ভাঙচুর করেছে, দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে যারা তাণ্ডব করেছে, পুলিশকে তাদের ধরতে বলেছি।” বনগাঁর তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস প্রথমে জানিয়েছিলেন, দলের কেউ যদি এই ঘটনায় জড়িত থাকে, তাকে সাসপেন্ড করার জন্য নেতৃত্বকে বলবেন। পরে সুর বদলে তিনি বলেন, “আমাদের দলের কেউ এতে যুক্ত ছিলেন না। উচ্ছৃঙ্খল কিছু লোক পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এটা করেছে। পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” তবে রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানকেও গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

বনগাঁ থানায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ভাঙচুর। শুক্রবার পার্থসারথি নন্দীর তোলা ছবি।
কী থেকে গণ্ডগোলের শুরু? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত অগস্টে স্থানীয় ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান পরিতোষ অধিকারীর বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজে রাস্তা তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধান ও দুই পঞ্চায়েত কর্মীর বিরুদ্ধে বনগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বনগাঁর বিডিও সুশান্তকুমার বসু। ‘পলাতক পঞ্চায়েত প্রধানকে দেখতে পেলেই পুলিশের হাতে তুলে দেবেন’ বলে মাইকে প্রচারও চালায় তৃণমূল। এ দিন প্রধানকে গ্রেফতারের দাবিতেই থানায় অভিযান চালানো হয়।
তৃণমূলের একাংশ আবার দাি করছে, দলেরই একটি গোষ্ঠীর কিছু প্রভাবশালী নেতার সাহায্য নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রেফতার না করার জন্য সিপিএম পুলিশকে চাপ দিচ্ছিল। এই নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভও ছিল। সে কারণেই সকাল ১১টা নাগাদ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সন্তোষ দাস ও কিছু স্থানীয় নেতার সঙ্গে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক মিছিল করে থানায় যান। যদিও বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের গোবিন্দ মণ্ডলের দাবি, “প্রধান পালাননি। অসুস্থ থাকায় ছুটি নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। এ দিনের ঘটনায় বরং প্রমাণ হল, ওরা জোর খাটিয়ে প্রধানকে গ্রেফতার করাতে চাইছে।”
এ দিন বেলা ১টা নাগাদ তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বেশ কিছু লোক থানায় ঢুকে পড়ে। অভিযোগ, গেটে থাকা পুলিশকর্মী কার্তিক দাস বাধা দিলে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। আছড়ে ভেঙে ফেলা হয় থানার টেবিল-চেয়ার-বেঞ্চ। ছিঁড়ে ফেলা হয় নথিপত্র। কাঠের টুকরো ছিটকে এসে চোট পান এএসআই বিনয় জোয়ারদার এবং এনভিএফ কর্মী সুভাষ মণ্ডল। সচিত্র পরিচয়পত্র হারিয়ে ডায়েরি করতে এসেছিলেন আরামডাঙার এক মহিলা। তিনিও জখম হন।
পুলিশ সুপার জানান, ওই সময়ে জয়ন্তীপুর এলাকায় যশোহর রোড অবরোধ তুলতে গিয়েছিলেন আইসি। ফোন পেয়েও তিনি ফিরে আসতে না পারায় উত্তেজনা ছড়ায়। তবে কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়নি। কিছু ক্ষণ তাণ্ডবের পরে ঝান্ডাধারীরা ফিরে যায়। বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা সন্তোষবাবু দাবি করেন, “কারা ভাঙচুর করেছে, দেখিনি।” তাঁর অনুগামীদের দাবি, সন্তোষবাবুর অঞ্চল সভাপতি হওয়া না-পসন্দ হওয়ায় দলেরই একাংশ ছক কষে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
সিপিএমের দাবি, পুলিশের উপরে হামলা চালানো তৃণমূলের ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির’ অঙ্গ। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল, কারও নাম না করে এ দিন সে প্রসঙ্গ তোলেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। বর্ধমানে নিহত নেতা প্রদীপ তা-এর স্মরণসভায় তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “কে পুলিশের গালে থাপ্পড় কষিয়েছিল? কে ওসির চেয়ারে বসে থানা অচল করে দিয়েছিল?”
সিপিএমের বক্তব্য, এ দিনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। বরং গার্ডেনরিচ-কাণ্ডেই এর আগাম ইঙ্গিত ছিল বলে দাবি করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেন, “সবে তো শুরু হয়েছে। যে দলের নীতি-আদর্শ বলতে কিছু নেই, তাদের পাওনাগণ্ডা না মিটলে গোলমাল তো হবেই। যদি পুলিশ দলের তল্পিবাহকে পরিণত না হয়, সকলকেই তাপস চৌধুরী হতে হবে।” রঞ্জিত পচনন্দার নাম না করে নিরুপমবাবুর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় যিনি খালি পায়ে প্রসাদ বিলি করেছিলেন, সহকর্মী খুনের পরে নিষ্ক্রিয় হয়ে না থাকায় তাঁকে সরে যেতে হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.