ভাজ্জির শরতে অশ্বিনের
কেবল ঢাকে কাঠি
সি ফর ক্যাপ্টেন।
সি ফর কুক।
সি ফর ক্লার্ক।
সি ফর কন্ট্রোল।
শত্রু দুই ক্রিকেট দেশ! সম্ভব হলে বিষদাঁত এবং বাঘনখ - দুটোই বার করে পরস্পরকে মাঠে থেঁতলাতে আসে। অথচ ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক যে ঘরানায় মাত্র কয়েক মাস আগে ভারতে ব্রিটিশ রাজ আমদানি করেছিলেন, সেই মডেল অবিকল ব্যবহারেই যেন অসি যুদ্ধের প্রথম দিনে রাজ করলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক! ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে ক্রিজ ছেড়ে বারবার বার হয়ে। দুটো পা-কে হাতের মতোই নিয়মিত ব্যবহার করে।
চিপকে ভারতীয় আতঙ্কের একমাত্র নাম ক্লার্ক হলে এই পরিমাণ শিরশিরানি দিন শেষে উৎপন্ন হত নাা। অতিথিদের সবাইকে যে কম বেশি দেখা গেল ক্রিজ ছাড়তে। এমনই চললে ওই যে পিছনের পায়ে সিঁটিয়ে থেকে স্পিনারের মায়াজালের শিকার হওয়াসেটাই তো ঘটবে না। আর জাদু শো না হলে ইশান্তের ভারত জেতে কী করে?
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

খালি হাত শততম
টেস্টে নামা হরভজনের।

ছ’উইকেটের নায়ক
অশ্বিন। শুক্রবার।
শুক্কুরবারের উইকেট কেমন ছিল? শুরুর দিকটা তো মনে হচ্ছিল ক্রিকেট পিচ নয়, লিয়েন্ডারদের জন্য গ্রাস কোর্ট। যেখানে বল ক্রমশ নামছে। রোদ্দুর ওঠার সঙ্গে ঝুরঝুরে ভাবটা খানিক কমল। আর কমেও যা দাঁড়াল ঘোর অশ্বিন মাসের ঢাকি-ই স্বয়ং বলে গেলেন, “কুৎসিত পিচ।” সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার আগেই ধড়ফড় করে দৌড়ে গেলেন বোর্ড মুখপাত্র। চেঁচিয়ে বললেন, “বন্ধুরা, কুৎসিত পিচ মানে অশ্বিন বোঝাতে চেয়েছে কাদায় নোংরা উইকেট। অন্য কোনও অর্থ করবেন না যেন।”
অতীতে টেস্টের প্রথম দিন এ সব উইকেটে ভারতে আসা বিদেশিরা এমন সন্ত্রস্ত হয়ে খেলেছে যেন প্রতিটি ডেলিভারিতে সাইকেল বোমা রাখা। অথচ এরা স্পিনের বিরুদ্ধে তথাকথিত অনভিজ্ঞরা তো দিব্যি নার্ভ রাখছেন। ওয়ার্নার। কাওয়ান। আর অবশ্যই ইউসেবিওর দেশজাত মোজেস এনরিকের পায়ের ব্যবহার দেখে দু’দিন আগে স্বচক্ষে দেখা একটা ঝগড়া মনে পড়ে গেল। বেদি বনাম ওয়াড়েকর।
পটৌডি স্মারক বক্তৃতায় জমায়েত প্রাক্তনদের আড্ডায় বেদি ফস করে বলে বসলেন, “কীসের মুম্বই রে। অর্ধেক বার তো রঞ্জি ট্রফি জিততিস ফার্স্ট ইনিংস লিডে। সরাসরি কত বার জিতেছিস হিসেব কর।” ওয়াড়েকর পাল্টা দিলেন, “এখনও ব্যথা যায়নি তোর হেরে হেরে।” আসলে রেষারেষিটা চল্লিশ বছরের পুরনো। আর সেটা রঞ্জি নিয়ে আদৌ নয়। ওয়াড়েকররা কেউ কেউ মনে করেন, সর্দারের নির্বুদ্ধিতায় তাঁদের ১৯৭৪-এর ইংল্যান্ড সিরিজে ভরাডুবি হয়েছিল। কী, না টনি লুইসের এম সি সি-কে ১৯৭২-৭৩ সিরিজে ওয়াড়েকরের ভারত স্পিনে বিধ্বস্ত করে হারিয়ে দেওয়ার পর বেদি নাকি দুই বিদেশি ব্যাটসম্যানকে স্পিন খেলার পাঠ দিয়েছিলেন। ব্রেবোর্নে সিরিজ শেষ হতেই ডেনিস অ্যামিস আর অ্যালান নটকে তিনি টানা এক ঘণ্টা বল করেছিলেন। বলেছিলেন, “স্পিন খেলাটা রপ্ত করো। আমি শেখাচ্ছি।” পরের ইংল্যান্ড সফরে সেই দুই ব্যাটসম্যান-ই কুচিকুচি কেটেছিলেন বেদি-প্রসন্নদের। বিলেত সফরে ০-৩ হেরে অসম্মানের অবসরে যেতে বাধ্য হওয়া ওয়াড়েকর আজও বলেন, “লোকে সর্দারজি জোকস বলে। আমি কেঁদেকেটে বলি, বাস্তবে ঘটা সর্দারজি আত্মহত্যার কথা।”
শুক্রবার স্পিনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান ফুটওয়ার্ক দেখে মনে হচ্ছিল, আইপিএলে নিয়মিত অ্যাংলো স্যাক্সন রক্তের বিদেশিদের ডেকে আনা। আর নাগাড়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ‘এ’-কে এ দেশে খেলতে দিয়ে কি একই রকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের বোর্ড? টার্নারে যে ঘূর্ণি বল ভারতীয় ক্রিকেটের এক রকম আন্তর্জাতিক রহস্য ছিল, সেটারই যেন সহসা সিন্দুক ফাঁক!
নইলে আর কত অর্ডারি পিচ ভারত অধিনায়ককে দিতে পারেন উইকেট প্রস্তুতকারক! এমন প্রথম দিনের টেস্ট পিচ দেখাই যায় না যেখানে সবুজ আবিষ্কার করতে পারলে ঘাসের টুকরো পিছু এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা যায়। উৎসবের মঞ্চে হরভজন সিংহের জন্য একেবারে শরতের আকাশ। একটু বলটা জায়গায় ফেলতে পারলেই অচিরে তাঁর কাশফুলও দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু নিজের শততম টেস্টে ভারতীয়রা প্রণিধান যোগ্য কিছু করতে পারেন না সেই পরম্পরা বজায় রেখে ভাজ্জি ডেলিভারিতে বাড়তি জোর দিতে লাগলেন। যেগুলো লুপ হওয়া উচিত সেগুলো ফাস্ট ফরোয়ার্ড হয়ে যাচ্ছিল। অশ্বিন কিন্তু উলটো দিকে প্রথম ওভার থেকেই বলটা অনেক বেশি আকাশে রাখছিলেন। ফেলছিলেন ঠিক লাইনে। ইংল্যান্ড সিরিজে এই লোকটাই যে উইকেট পিছু পঞ্চাশ রান দিয়েছিল, তখন মনেই হচ্ছে না। এরই মধ্যে তাঁর বলে ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন একমাত্র স্লিপ সহবাগ। ভারত এই জায়গাটা কিছুতেই ভরাট করতে পারছে না --দ্রাবিড়ের ফেলে যাওয়া প্রথম স্লিপ। সহবাগ অ্যাদ্দিন সেকেন্ড স্লিপে দাঁড়াতেন বলে তাঁকেই স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী করা হয়েছে। কিন্তু দু’টো জায়গা পাশাপাশি হয়েও প্রকৃতিগত ভাবে এত আলাদা। দু’টোই বাদ্যযন্ত্র কিন্তু সুরের হেরফেরে একটা যদি সরোদ হয়, একটা বেহালা।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসনের হাত থেকে শততম টেস্টের স্মারক নিচ্ছেন হরভজন সিংহ।
তখন ওয়ার্নারের ক্যাচ পড়া। আর চা-এর ঠিক আগে ক্লার্ককে কুমার ধর্মসেনার নিশ্চিত আউট না দেওয়া আরও যেন প্রথম দিনকে চেন্নাই থেকে সিডনি অভিমুখী করে দিল। হয়তো বা প্রথম টেস্টকেও। ক্লার্কের ৩৯ রানে ইনসাইড এজ হয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগের হাতে গিয়ে ছিল। ধর্মসেনা নিজে অফস্পিনার ছিলেন। এত পরিষ্কার ব্যাট-প্যাড কী করে মিস করলেন, অবিশ্বাস্য! ভারত অবশ্য তার আগে নিজেরাই নিজেদের কবর খুঁড়ে রেখেছে ডি আর এস-এ রাজি না হয়ে। আজ সিরিজে ডি আর এস থাকলে তো ক্লার্কের সেঞ্চুরিই হয় না। সেই ৩৯ রানেই টিভি দেখে তৃতীয় আম্পায়ার তাঁকে আউট ঘোষিত করে দিতেন। ক্লার্ক আর টেস্ট অভিষেকে নামা মোজেস এনরিকের দেড়শো রানের পার্টনারশিপও যে সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে! ক্লার্ক অতীতে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মতোই অনেক সময় আউট হয়েছেন বুঝে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেই লোকটা ছিল নিছক ব্যাগি গ্রিন যোদ্ধা। নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে পারত। এই লোকটা ব্যাগি গ্রিন সেনাপতি। নিজের ইচ্ছেতে সব কিছু করার উপায় নেই। দলের স্বার্থকে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার ওপরে ঠাঁই দিতে হয়। আউট জেনেও সে ক্রিজ ছেড়ে নড়ল না।
চিপকে অনেকের মুখে অবশ্য শুনলাম, এটাই ন্যায়বিচার হল। শ্রীনিবাসনের ভারত ডিআরএস মানব না বলে যে দাদাগিরিটা করে যাচ্ছিল, সেই ঔদ্ধত্য তাঁর নিজের শহর চেন্নাইয়ে বুমেরাং হয়ে ফিরল। এটা যদি বা অদৃষ্টের উপযুক্ত পরিহাস হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জন্য অবশ্যই মন খারাপ হওয়া উচিত।
চিপকে আজ কুম্বলের সোনার সময়কে যেন ফেরত এনে দিয়ে ছিলেন অশ্বিন! ক্লার্কের আউটটা পেলে তাঁর আজ সাত উইকেট হয়ে যায়। তখনকার মতো সাতে সাত। আসলে ধোনির টস হারা থেকে ধর্মসেনার আঙুল না ওঠা ভারতীয় ক্রিকেটের ইচ্ছেপূরণের দিন ছিল না শুক্রবার।
আচ্ছা, এ বার কি বোর্ড প্রেসিডেন্টের পরিচালনায় সে সব তুকতাক হয়নি? বিদেশি অতিথিদের ড্রেসিংরুমে বড় বড় আয়না লাগিয়ে বাস্তু প্রয়োগ হয়নি?

ছবি: পিটিআই

ডনোচিত
শেষ বারো মাসে টেস্টে মাইকেল ক্লার্ক
• ম্যাচ ১৩
• রান ১৭৭৭
• সর্বোচ্চ ৩২৯ নঃআঃ
• গড় ১০৪.৫২
• ট্রিপল সেঞ্চুরি ১
• ডাবল সেঞ্চুরি ৩
• সেঞ্চুরি ২
• হাফসেঞ্চুরি ৪
• বিপক্ষ: ভারত (হোম-অ্যাওয়ে), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (বিদেশে),
দক্ষিণ আফ্রিকা (দেশে) ও শ্রীলঙ্কা (দেশে)

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস
কাওয়ান স্টাঃ ধোনি বো অশ্বিন ২৯
ওয়ার্নার এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৫৯
হিউজ বো অশ্বিন ৬
ওয়াটসন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ২৮
ক্লার্ক ব্যাটিং ১০৩
ওয়েড এলবিডব্লিউ অশ্বিন ১২
হেনরিকে এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৬৮
স্টার্ক বো জাডেজা ৩
সিডল ব্যাটিং ১
অতিরিক্ত
মোট ৩১৬-৭
পতন: ৬৪, ৭২, ১২৬, ১৩১, ১৫৩, ৩০৪, ৩০৭।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ১১-১-৪৮-০, ইশান্ত ১১-২-৪৬-০, হরভজন ১৯-১-৭১-০,
অশ্বিন ৩০-৫-৮৮-৬, জাডেজা ২৪-৫-৫৬-১।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.