|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
তবু সন্ত্রাস জয়ী নয় |
হায়দরাবাদে পুনরায় জঙ্গি হামলা। এ বার আক্রমণ সাইকেল-বোমা দিয়া। এ ধরনের বোমা ইতিপূর্বে অসমের আল্ফা জঙ্গিরা অনসমিয়া বিহারি শ্রমজীবীদের সন্ত্রস্ত করিয়া রাজ্য হইতে বিতাড়নের কাজে ব্যবহার করিয়াছে। শহরের জমজমাট এলাকায় ব্যস্ত সময়ে একের পর এক বিস্ফোরণে বহু মানুষের হতাহত হওয়ার সম্ভাবনাকেই জঙ্গিরা ব্যবহার করিয়াছে। সন্ত্রাসবাদ যখন যাবতীয় রাজনৈতিক মতাদর্শ হইতে বিযুক্ত হইয়া পড়ে, তখন জঙ্গি হামলার লক্ষ্য হইয়া ওঠে চমকপ্রদ ও নাটকীয় অ্যাকশন। হায়দরাবাদ আগেও সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য হইয়াছে। ২০০৭ সালের মে মাসে মক্কা মসজিদে এবং অগস্ট মাসে লুম্বিনী পার্ক এলাকায় অনুরূপ বিস্ফোরণ ঘটে। হায়দরাবাদ সন্ত্রাসের সহিত অপরিচিত নয়।
এই ধরনের যে-কোনও জঙ্গি হামলার পরেই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা লইয়া প্রশ্ন উঠিয়া পড়ে। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা নিশ্চয় সরকারের কাজ। কিন্তু এমন সুবৃহৎ দেশের আনাচেকানাচে সন্ত্রাসবাদীরা কবে কোথায় হানা দিবে, তাহা অনুমান করিয়া আগাম প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রায় দুঃসাধ্য। এ কাজে আংশিক সাফল্য অর্জন করা যাইত, যদি গোয়েন্দা দফতর জঙ্গিদের গতিবিধি নজরবন্দি করিতে আরও তৎপর হইত, জঙ্গি সংগঠনগুলির ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে যথাযথ তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে থাকিত। কিন্তু প্রায়শ দেখা যায়, সাধারণ কিছু অনুমানের বাহিরে নির্ভুল সংবাদ কদাচিৎ গোয়েন্দাদের কাছে থাকে। হায়দরাবাদের বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জঙ্গিদের হামলার সম্ভাবনা বিষয়ে সরকারের কাছে যে-সব খবর থাকার কথা বলিয়াছেন, তাহার অনেকটাই ভাসা-ভাসা।
সরকার নিরাপত্তার শৈথিল্যগুলি দূর করিতে পারে, ছিদ্রগুলি বুজাইতে চেষ্টা করিতে পারে। জঙ্গি গতিবিধি বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য তৎক্ষণাৎ বিনিময় করা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির প্রাথমিক কর্তব্য। প্রতিটি শহরের ব্যস্ত, জনবহুল এলাকাগুলিতে ভিডিয়ো ক্যামেরা ও ক্লোজ-সার্কিট টেলিভিশন মারফত নজরদারি এবং রুটিন-বহির্ভূত যে-কোনও গতিবিধি চ্যালেঞ্জ করার পরিকাঠামো সরকারের থাকা চাই। হায়দরাবাদের এ বারের বিস্ফোরণে অকুস্থলে মোতায়েন নজরদারি বন্দোবস্ত জঙ্গিরা আগাম অন্তর্ঘাতে অকেজো করিয়া দিয়াছিল, এমন কথা শুনা যাইতেছে। স্বভাবতই, নজরদারি-ব্যবস্থাটি ঠিকঠাক চালু আছে কি না, তাহার উপর নজর রাখাও জরুরি। সর্বোপরি, ঘরোয়া ভাবে অর্থাৎ প্রায় কুটিরশিল্পের সহজিয়া পথে বোমা বা বিস্ফোরক বানাইবার সুবিধাগুলিও এ বার সঙ্কুচিত করা দরকার। প্রসঙ্গত, হায়দরাবাদ-সহ সমগ্র দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আহ্বান এবং উপদ্রুত হায়দরাবাদ শহরেই ভারত-অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচের আয়োজন জারি রাখিতে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক পর্ষদের সিদ্ধান্ত। সন্ত্রাস ও রক্তক্ষয় যে ভারতকে নত করিতে ব্যর্থ এবং ভারতীয় গণতন্ত্র যে আজ অনেক পরিণত, ইহা তাহারই শ্লাঘনীয় প্রমাণ। |
|
|
|
|
|