প্রায় অচেনা রাজু ভাইকে খুঁজছে পুলিশ
ন্ধান চাই। ছদ্মনাম, রাজু ভাই। আসল নাম, অজানা। পরিচয়, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জঙ্গি।
নিজামের শহরে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে আপাতত এই রাজু ভাইকেই খুঁজছে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
হায়দরাবাদে বিস্ফোরণের পিছনে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের হাত রয়েছে ধরে নিয়েই এগোচ্ছেন তদন্তকারীরা। আর সে পথে এগোতে গিয়েই রাজু ভাইয়ের পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, গত বছরের জুলাই মাসে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের পাণ্ডা রিয়াজ ভাটকলের নির্দেশে কয়েক জন জঙ্গি নাশকতার ছক কষতে প্রথম দিলসুখনগরে গিয়েছিল। সেই দলে ছিল মুজাহিদিন সদস্য সৈয়দ
রাজু ভাই
মকবুল, ইমরান খান ও তাদের সঙ্গীরা। ওই এলাকায় কোথায়, কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়, তার পরিকল্পনা তৈরি করে তারা। এই কাজে তাদের সাহায্য করেছিল রাজু ভাই।
সে দফায় শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদে কোনও নাশকতা ঘটায়নি মকবুলরা। বদলে অগস্টেই পুণেতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ করে। তার জেরে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল তাদের ধরে ফেলে। মকবুলদের জেরা করে জানা যায় দিলসুখনগর-সহ হায়দরাবাদের অন্যান্য এলাকায় যাওয়ার কথা। সেই সঙ্গে রাজু ভাইয়ের কথাও। স্বরাষ্ট্র দফতরের সূত্রের মতে, রাজু ভাই-ই মকবুলদের হায়দরাবাদের গলিঘুঁজি চিনিয়ে বুঝিয়ে দেয়, কোথায় বিস্ফোরণ ঘটালে প্রাণহানির সম্ভাবনা বেশি থাকবে। এখন সত্যিই দিলসুখনগরে বিস্ফোরণ ঘটায় ফের রাজু ভাইয়ের সন্ধানে নামছে পুলিশ।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই হায়দরাবাদের মতো স্পর্শকাতর শহরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি। আফজল গুরুর ফাঁসির পরে সেই চেষ্টা আরও প্রবল হয়। দিলসুখনগরে বিস্ফোরণের ছক আগেই কষা ছিল, তাই সেটাকেই সহজ নিশানা হিসেবে বেছে নেয় জঙ্গিরা।
সন্ধানী বম্ব-স্কোয়াডের অনুসন্ধান চলছে। শুক্রবার হায়দরাবাদের চারমিনারে মক্কা মসজিদের কাছে। ছবি: পিটিআই
এখানেই রাজু ভাইয়ের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়ছে। কারণ মকবুল-ইমরানরা ধরা পড়ে গিয়েছে। কাজেই রাজু ভাইয়ের সাহায্য ছাড়া নাশকতার পুরনো পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব ছিল না। রাজু ভাই সম্পর্কে আরও খোঁজখবর পেতে তিহাড় জেলে ফের মকবুলদের জেরা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, রাজু আসলে এক জন পাকিস্তানি নাগরিক। যার দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের যোগাযোগ তৈরি করা।
জুলাইয়ে মকবুলদের যে হায়দরাবাদে পাঠিয়েছিল, সেই রিয়াজ ভাটকলের ভাই ইয়াসিন এ বারের বিস্ফোরণের পিছনে মূল মাথা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। প্রাথমিক তদন্তের পর তাঁদের অনুমান, ইয়াসিনের নির্দেশে তিন জন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন সদস্য গত কালের বিস্ফোরণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে এক জন উত্তরপ্রদেশ, দ্বিতীয় জন বিহার এবং তৃতীয় জন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। এরা সকলেই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ‘দ্বারভাঙা মডিউল’-এর সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত। এই মডিউল বা দলটি ইয়াসিনের নিজের হাতে তৈরি। দ্বারভাঙার একটি স্কুলের লাইব্রেরিতে স্থানীয় ছেলেদের মগজ ধোলাইয়ের কাজ করত সে।
বস্তুত, ২০০৮ সালে জাল নোটের একটি মামলায় কলকাতা পুলিশ ইয়াসিনকে ধরে। কিন্তু, ছদ্মনামে থাকায় চিনতে পারেননি কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা। ফলে জামিন পেয়ে সে উধাও হয়ে যায়। বর্তমানে রিয়াজ, ইয়াসিন-সহ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের পাণ্ডারা পাকিস্তানে রয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
শুধু বিভিন্ন সূত্র থেকে ষড়য়ন্ত্রীদের সম্পর্কে সংবাদ সংগ্রহ নয়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র কর্তারা। তাঁদের মতে, বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ইউরিয়া, পেট্রোল ও ধারালো পেরেক। বোমায় ব্যবহৃত টাইমারের অংশও মিলেছে।
গত কাল বিস্ফোরণের পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে দাবি করেছিলেন, নাশকতার সম্ভাবনা নিয়ে রাজ্যগুলিকে সতর্ক করা হয়েছিল। তখনই প্রশ্ন ওঠে, সেই সতর্কতা কি সুনির্দিষ্ট, না কি নিছক ভাসা ভাসা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, আফজলের ফাঁসির পরে হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, কোয়ম্বত্তূর, হুবলি শহরে নির্দিষ্ট ভাবে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও রাজ্য সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ করেনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, ঠিক এইখানেই জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি)-র প্রয়োজনীয়তা। এনসিটিসি থাকলে শুধু রাজ্য পুলিশের হাতে গোয়েন্দা-তথ্য তুলে দিয়েই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হত না। এনসিটিসি-ই রাজ্যে গিয়ে জঙ্গিদের সন্ধানে চিরুনি তল্লাশি শুরু করত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা এনসিটিসি রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে আপত্তি তুলেছিলেন। হায়দরাবাদে নাশকতার পরে এখনই এনসিটিসি নিয়ে এগোনোর সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। শিন্দে আজ জানিয়েছেন, তিনি রাজ্যের দাবি মেনে এনসিটিসি-র কাঠামোয় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতেও রাজি। আগামী সপ্তাহে কলকাতায় গিয়ে তিনি এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.