প্রকল্পের রিপোর্টেই (ডিপিআর) গলদ। তাই বেড়ে গিয়েছে অপচয়। টাকা খরচও হয়েছে অহেতুক। ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম)-এর টাকা খরচের ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে এমনই নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (সিএজি)।
পুরসভা সূত্রের খবর, বিভিন্ন প্রকল্পে পুরসভাকে দেওয়া জেএনএনইউআরএম-এর আর্থিক সাহায্য খরচের হিসেব অডিট করে ক্যাগের ‘এগজামিনার অফ লোকাল অ্যাকাউন্টস’ শাখা। ওই খাতে প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় পুরসভা। এর মধ্যে ৮০০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে। মূলত পুরসভার নিকাশি ও বস্তি উন্নয়নে খরচ হয়েছে অধিকাংশ বরাদ্দ।
পুরসভার নথি থেকে স্পষ্ট, ২০১১-’১২ আর্থিক বছরের শেষে ক্যাগের পক্ষ থেকে পুরসভাকে টাকা খরচের অনিয়মগুলির কথা জানিয়ে তার উত্তর চাওয়া হয়। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, পুর-প্রশাসনের দেওয়া জবাব সন্তুষ্ট করতে পারেনি ক্যাগকে। এ বার ওই রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানোর আগে নিয়মমাফিক এগ্জিট কনফারেন্স করে ক্যাগ। গত মঙ্গলবার ওই বৈঠকে ক্যাগের সংশ্লিষ্ট কর্তারা ছাড়াও হাজির ছিলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন, কলকাতা পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ-সহ বিভিন্ন পুরকর্তা। ক্যাগের তোলা নানা প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়েন পুর-আধিকারিকেরাও। ক্যাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোথাও টাকার অপচয়, কোথাও বেহিসেবি খরচ, কোথাও বা ভুলভাল পরিকল্পনার জন্য অনেক টাকা অযথা নষ্ট হয়েছে। কোনও প্রকল্প আবার শুরুই করা যায়নি।
বৈঠকে ডিপিআর গলদ নিয়ে অফিসারদের সামনে অন্য এক যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ার। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক নেতাদের চাপে পড়ে অনেক সময়ে তড়িঘড়ি ডিপিআর বানাতে হয়েছে। অভিযোগ, নেতারা বলেন, এখনই করে দিতে হবে। সময়ও দেন না। যদিও ত্রুটিপূর্ণ ডিপিআর বানানোর পিছনে ওই যুক্তি অমূলক বলে দাবি করেছে পুর-দফতরের।
কোন কোন প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ক্যাগের রিপোর্টে?
পুরসভা সূত্রের খবর, নিকাশি উন্নয়নে পলি তুলে ফেলার জন্য প্রায় ৩৬ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। অথচ সেই পলি কোথায় ফেলা হল, তা পুরসভা দেখাতে পারেনি। আবার হাতে জমিই নেই, অথচ বস্তি উন্নয়নে আর্থিক সাহায্যের জন্য ডিপিআর করে পাঠিয়ে দিয়েছে পুরসভা। ক্যাগের রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, টাকা থাকলেও প্রয়োজন মাফিক বস্তি উন্নয়নের কাজ করতে পারেনি পুরসভা।
এখন জেএনএনইউআরএমের টাকা খরচে অনিয়ম নিয়ে ক্যাগের রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে। আর এতেই অস্বস্তিতে পুর-প্রশাসন। পুরসভা সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে ওই ভুল যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সব অফিসারদের সতর্ক করে দিয়েছেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এগ্জিট কনফারেন্সে কী হয়েছে, এখনও জানি না।”
তবে কেন্দ্রের সহায়তায় এডিবি থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা জানান মেয়র। তিনি জানান, কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের নিকাশি ও জল সরবরাহের উন্নয়নে ওই টাকা খরচ করা হবে। |