র‌্যালি ছোঁবে চার দেশ
সিল্ক রুটে বাণিজ্যের আশায় কলকাতা থেকে কুনমিং
দেশ থেকে ‘দ্যাশ’-এর উদ্দেশে রওনা দিল গাড়ি। কথা দিয়ে গেল, মানুষের মন ছোঁওয়ার। শুক্রবার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পতাকা নাড়তেই শুরু হয়ে গেল বিসিআইএম র‌্যালি-২০১৩। ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার-চিন ছুঁয়ে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেবে যে র‌্যালি।
বণিকসভা সিআইআই আয়োজিত এই র‌্যালির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন মমতা আর দেশের প্রথম সারির শিল্পপতি তথা সিআইআইয়ের প্রেসিডেন্ট আদি গোদরেজ। কলকাতা থেকে চিনের কুনমিং রওনা দেওয়া ওই র‌্যালিকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে দু’জনেই বললেন, গাড়ির চাকা যত গড়াবে, তত নিবিড় হবে চার দেশের সম্পর্ক। প্রায় নতুন করে আবিষ্কৃত হবে ‘সিল্ক রুট’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর সে ভাবে চাকার দাগ পড়েনি যে রাস্তায়।
মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আমি নিজেও রোমাঞ্চ ভালবাসি। ওই সিল্ক রুট দিয়ে যাওয়ার সময় আপনারা ছুঁয়ে যান উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মানুষের মনও। যাঁরা প্রায়শই বঞ্চিত। মিশুন চার দেশের মানুষের সঙ্গে। ওঁদের বলবেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা বিপুল। জানাবেন, অর্থনৈতিক প্রগতির হাত ধরে আগামী দিনে আরও প্রাণখোলা হাসি হাসবে এই অঞ্চল।”
এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করলেও, অস্বস্তি কিছুটা রয়েই গেল। উদ্বোধনের মঞ্চে র‌্যালির অন্যতম স্পনসর ওএনজিসি-র উপস্থিতি নজরে এলেও, সে ভাবে চোখে পড়ল না আর এক প্রধান স্পনসর টাটা মোটরসের কাউকে। দ্রুত জল্পনা ছড়াল,তবে কি অস্বস্তি এড়াতেই মঞ্চ এড়ালেন টাটা মোটরসের কর্তারা?

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে র‌্যালির
উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র

বাংলাদেশ যাওয়ার পথে পেট্রাপোল সীমান্তে
র‌্যালি দেখতে ভিড়। ছবি: দেবাশিস রায়
বৃহস্পতিবার বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন ওই সংস্থার অন্যতম কর্তা অশেষ ধর। কিন্তু এ দিন মূল অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি তাঁকে। তবে জল্পনা উড়িয়ে অশেষবাবুর দাবি, “বিষয়টি একেবারেই তা নয়। সংস্থার তরফে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাজীব মাধবন আমাদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি প্রবীণ ও উচ্চপদস্থ কর্তা। আর কাজ থাকায় আমাকে আসতেই হয়েছে পুণেতে।”
চার দেশের মধ্যে আত্মিক, সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর স্বপ্ন নিয়েই এ দিন ২০টি গাড়িতে কুনমিংয়ের উদ্দেশে রওনা দিলেন ৭৭ জন সওয়ারি। টানা সাত বছরের প্রস্তুতির পরে ১২ দিনের এই সফরের প্রথম দিনই পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়লেন তাঁরা। যশোর-ঢাকা-সিলেট হয়ে ফের দেশের মাটি ছোঁওয়ার কথা মণিপুরের ইম্ফলে। সেখান থেকে কা লে হয়ে মায়ানমার। বর্মা ছুঁয়ে ঢুকে পড়া জুতো আবিষ্কারের দেশে। ৫ মার্চ চিনের ইওহান প্রদেশের কুনমিংয়ে যাত্রা শেষ।
তবে গন্তব্যে পৌঁছনোর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর সম্ভবত যাত্রাপথই। কারণ, একদা এই সিল্ক রুটই ছিল পৃথিবীর এই প্রান্তে ব্যবসা-বাণিজ্যের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। শুধু ব্যবসাই বা কেন? বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারেও অন্যতম বড় ভূমিকা ছিল এই রাস্তার। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মূলত নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণেই বন্ধ এই রাস্তা। তাই এত দিন পর সেই রাস্তার আগল খুলে ছুটে যাওয়া প্রায় ইতিহাসে ঢুকে পড়ার সামিল।
শিল্পমহল এবং চার দেশের প্রশাসন তাই এই র‌্যালি ঘিরে খুবই আশাবাদী। সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বলছিলেন, “যে চার দেশ ছুঁয়ে এই র‌্যালি, তাদের মোট জনসংখ্যা ২৮০ কোটি। বিপুল সম্ভাবনাময় তার বাজার। যার আয়তন প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা।” তাই ফের সিল্ক রুট দিয়ে গাড়ির চাকা গড়ালে, আক্ষরিক অর্থেই বাণিজ্যে লক্ষ্মী বসবে বলে তাঁর ধারণা।
গোদরেজ আবার মনে করছেন, এর ফলে বিশেষ ভাবে লাভবান হবে কলকাতা। কারণ, উত্তর-পূর্বের সিংহদুয়ার হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যে মূল ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা ও সম্ভাবনা দুই-ই রয়েছে এই শহরের। আগামী দিনে সেই সুযোগ যাতে কাজে লাগানো যায়, তা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে কয়েক দফা ‘দাবি’ও পেশ করলেন তিনি। বললেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধির জন্য আরও বেশি করে সাহায্যের হাত বাড়াক সরকার। মন দিক রাস্তা-ঘাট ও অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নে। সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করে উৎসাহ দানের চেষ্টা করুক। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় এই সব আবেদন মাথায় রাখার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সীমান্তে যাওয়ার পথে রাস্তার দু’পাশে উপচে পড়েছে উৎসাহী মানুষের ভিড়। কেউ গাড়ির কনভয় দেখে হাত নাড়ছেন। কেউ অবাক হয়ে পথ ছেড়ে দিচ্ছেন হুটারের উচ্চকিত আওয়াজে। কিন্তু সিল্ক রুট ‘খুললে’, অর্থনৈতিক প্রগতি একটুও কি মসৃণ করবে এঁদের জীবন? পেট্রাপোল সীমান্তে এক মুখ হাসি নিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন যাঁরা, ‘মেহমান’ বলে হাত ধরলেন যে বাংলাদেশি রক্ষী, তাঁদের জীবনেও কি চুঁইয়ে আসবে বাণিজ্যের জন্য সীমান্তের আগল আরও বেশি করে খোলার সুফল?
র‌্যালিতে রওনা দেওয়ার আগে এক সওয়ারি বলে গেলেন, “নিশ্চয়ই। নইলে আর আসা কেন?” আপাতত এই আশাতেই কুনমিংয়ের দিকে তাকিয়ে কলকাতা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.