মৌলবাদী তাণ্ডব, প্রতিরোধের ডাকে বিস্ফোরক বাংলাদেশ
মৌলবাদী শক্তি পাল্টা আঘাত হানায় ভয়াবহ সঙ্ঘাতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। শুক্রবার সকাল থেকেই ইসলামি দলগুলির তাণ্ডবে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহি থেকে যশোর, বগুড়া, সিলেট। শাহবাগের চেতনায় সর্বত্র যে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছে, মৌলবাদী দুষ্কৃতীদের প্রধান নিশানা ছিল সেগুলি। হাঙ্গামায় এক মাদ্রাসা শিক্ষক-সহ ৪ জন মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ মানুষ। ১২টি ইসলামি দলের নামে রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। এ দিকে পাড়ায় পাড়ায় জোট বেঁধে জামাতের হামলা-হরতাল মোকাবিলার ডাক দিয়েছে শাহবাগ। উঠেছে একেবারে নতুন একটি স্লোগান, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো, জামাত-শিবির ধোলাই করো!’

হিংস্র জামাত কর্মীদের মার পুলিশকে। শুক্রবার ঢাকায়।
জামাতে ইসলামির নেতৃত্বেই সর্বত্র হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগির। আওয়ামি লিগ ও বামপন্থী দলের শাসক জোট ১৪ দল এ দিন বিকেলে বৈঠকের পরে দাবি করেছে, বিএনপির প্ররোচনায় জামাতের নেতৃত্বে পরিকল্পনা করেই দেশজুড়ে এই হামলা হয়েছে। হরতাল ও হাঙ্গামা মোকাবিলায় জোট বাঁধার ডাকও দেওয়া হয়েছে। রাজশাহির সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “এই লড়াইয়ে পরাজয়ের অর্থ বাংলাদেশকে তালিবানের হাতে ছেড়ে দেওয়া। সুতরাং জয় ছাড়া পথ নেই।” অন্য দিকে ‘ইসলামি কর্মীদের ওপর পুলিশি সন্ত্রাসের’ নিন্দা করেছেন বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। অর্থাৎ, প্রথম দিকে শাহবাগ চত্বরে কিছু নেতাকে পাঠিয়ে সমর্থন কুড়োনোর চেষ্টা করলেও এখন পুরোপুরি মৌলবাদী শক্তির পাশে এসে দাঁড়াল বিএনপি।
গত কাল সমাবেশে জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে ২৬ মার্চ সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রাত থেকে একটু ঢিলেঢালা হয়েছিল শাহবাগ চত্বর। ১৭ দিন পরে আজ প্রথম চত্বরের একাংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু দুপুরে হঠাৎই মৌলবাদীদের একটি সশস্ত্র মিছিল ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকরমের সামনে জড়ো হয়। তারা মসজিদে চড়াও হলে পুলিশ বাধা দেয়। তখনই পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মৌলবাদীরা। সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদের ওপরও বোমা ও ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। গুলিও চলে কয়েক রাউন্ড। পুলিশও তাদের সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে। প্রায় এক ডজন সাংবাদিক রক্তাক্ত হন। দুষ্কৃতীরা জাতীয় মসজিদে ঢুকে নমাজ পড়ার বিশাল কার্পেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। মসজিদের কর্মীরা জল ঢেলে তা নেভান। এর পরে মৌলবাদীরা শাহবাগের উদ্দেশে এগোলে ব্যারিকেড গড়ে, ধরপাকড় করে পুলিশ তা আটকায়।
দেশের প্রায় সর্বত্র একই ভাবে ঝটিতি হামলা চালায় মৌলবাদীরা। সব শহরে গড়া হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ, যেখানে প্রতি সন্ধ্যায় লাখো মানুষ জড়ো হয়ে রাজাকারদের ফাঁসি ও জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন। বগুড়া, সিলেট, রাজশাহি ও চট্টগ্রামে এই মঞ্চ ভাঙচুর হয়। রাজশাহির সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা জানান, জামাতের নেতৃত্বে এই হামলায় বহু বিএনপি কর্মীকেও দেখা গিয়েছে, যাতে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট। তিনি জানান, মনে করা হচ্ছিল গণজাগরণে মৌলবাদী শক্তি দমে গিয়েছে। আজকের হামলা মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। বাদশা জানান, বিকেলেই অজস্র মানুষ পথে বেরিয়ে সমাবেশ করেছেন রাজশাহিতে।

ঢাকার রাস্তায় মারমুখী মৌলবাদীরা।
চট্টগ্রামে মঞ্চ ভাঙার পরে মৌলবাদীরা প্রেস ক্লাবেও ভাঙচুর করে। হামলায় বহু সাংবাদিক আহত হয়েছেন। কক্সবাজারে গণজাগরণ মঞ্চের পাশাপাশি আওয়ামি লিগের দফতরও ভাঙচুর করা হয়।
সকালের ঢিলেঢালা শাহবাগ চত্বর দুপুরের পর থেকেই ফের সরগরম হয়ে ওঠে। হাজারো মানুষ জড়ো হন প্রজন্ম চত্বরে। বিকেলের পরে ঢেউ আরও বাড়তে থাকে। মৌলবাদীদের হরতালের মোকাবিলা করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার ডাক দেওয়া হয় শাহবাগ থেকে। ঠিক হয়, ফের ২৪ ঘণ্টা সেখানে চলবে অবস্থান। সন্ধ্যা থেকে ছাত্ররা বাঁশের লাঠি নিয়ে দলে দলে এসে পাহারায় বসেন। পুলিশি ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।

শুক্রবার উমাশঙ্কর রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.