নগর-উপান্তে শিল্পগ্রাম
চাঁদের হাট
ভাবনাটি দানা বেঁধেছিল প্রায় বাইশ বছর আগে। তার পর শুরু সলতে পাকানো। সরশুনায় তখন জঙ্গল। শিল্পী তরুণ দে’র নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ১২-১৪ জনের একটি দল ‘এনভায়রনমেন্টাল আর্ট’। উদ্দেশ্য ছিল শিল্পচর্চাকে শহরের বাইরে নিয়ে আসা। ছাত্র-শিক্ষক যেন গুড়-পিঁপড়ের সম্পর্ক বলছিলেন তরুণবাবু। সে সম্পর্কের মাধুর্যকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলা। সঙ্গে আর এক শিল্পী-দম্পতি ভবতোষ এবং মল্লিকা সুতার। ইচ্ছে ছিল নিজেদের কাজ আর শিল্প-আড্ডার জন্য একটি নিজস্ব গ্রাম গড়ে তোলা। অতঃপর সরশুনায় ক্ষুদিরাম পল্লিতে ৩৫ কাঠা জমি কেনা হল ৬ বছর আগে। পরে আরও ২৩ কাঠা। প্রথমে তৈরি হল কাজের বাড়ি (সঙ্গের ছবি) এবং শিল্পীদের থাকার জায়গা। নির্মাণপর্বে অন্যদের সঙ্গেই হাত লাগিয়েছেন অঞ্জন, পলি, পিন্টু, প্রদীপ, রাজু বা সংহিতার মতো দলের শিল্পীরা। তবে কোনও বাইরের সাহায্য আসেনি এই প্রকল্পে।
ওঁরা নজর দিয়েছিলেন থিমের দুর্গাপুজোর দিকে। ভবতোষ নিজেই এখন যে ক্ষেত্রে নজির সৃষ্টি করে ফেলেছেন। এ ছাড়া রয়েছে অর্ডার মতো ছবি, ভাস্কর্য বা ম্যুরাল ইত্যাদি জোগানের কাজ। এই সব কাজের লভ্যাংশ থেকেই এখানে গড়ে উঠেছে ‘চাঁদের হাট’। গত বছর শিলিগুড়ি সহ কলকাতায় ১১টি পুজোর কাজ করেছেন দলের শিল্পীরা। এখানকার শিল্পীরা ছাড়াও কাজ পেয়েছেন গ্রামবাংলার হস্তশিল্পীরা। ‘চাঁদের হাটে’ কেবল ছবি-ভাস্কর্যই নয়, থাকছে আলোচনা, গান, নাচ, আড্ডা, আরও অনেক কিছু। সবটাই প্রকৃতির কোলে। গড়ে উঠেছে একটি সহায়ক গ্রন্থাগার, গড়ে তোলা হচ্ছে একটি সংগ্রহালয়। সেখানে থাকবে নানা ধরনের শিল্পনমুনা, ভবিষ্যতের গবেষণার প্রয়োজনে। আরশিনগরের মাটির মঞ্চে শোনা যাচ্ছে বাউল, বাংলা গান ইত্যাদি। সম্প্রতি হয়ে গেল ওঁদের তিন দিনের বার্ষিক উৎসব। শিল্পচর্চার সঙ্গে কমিউনিটি আর্ট নিয়ে বললেন শিল্পী ছত্রপতি দত্ত, মানবাধিকার নিয়ে প্রবীর দত্ত। অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন হিরণ মিত্র, পরাগ রায় ও তপতী গুহঠাকুরতা। গান শোনালেন ফকিরা শংকর ও উদয় সরকার। সঙ্গে ছিল চাঁদের হাটের শিল্পীদের প্রদর্শনী।

গুরুদক্ষিণা
শিষ্যদের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত ডিগ্রি পেলেন গুরু। একটু দেরি হল অবশ্য প্রায় দেড়শো বছর। গুরু বেথুন কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ, চন্দ্রমুখী বসু। ‘আনরেজিস্টার্ড ক্যান্ডিডেট’ রূপে ১৮৭৬-এ এন্ট্রান্স দেন তিনি। কারণ, সে কালে মেয়েরা পরীক্ষার্থী হতে পারতেন না। তাই তাঁর সাফল্য কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতিও পায়নি। অথচ সেই ফলের ভিত্তিতেই তিনি এফ এ, বি এ ও এম এ পাশ করেন। চন্দ্রমুখী বসু ও কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মের সার্ধশতবর্ষে বেথুন কলেজে এক আলোচনাচক্রে সুনন্দা ঘোষ বিষয়টি তুললে উদ্যোগের সূচনা হয়। পুষ্পা মিশ্র, সুনন্দা ঘোষ ও শ্যামলী সরকার তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠান। রেকর্ড খুঁজে দেখা যায় যে চন্দ্রমুখী বসু ‘অ্যাজ আ পার্সন’ ১৮৭৬-এই এন্ট্রান্স উত্তীর্ণ হন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম মহিলা রূপে এই কৃতিত্ব তাঁর। রাজ্যপালের অনুমতিসাপেক্ষে আগামী সমাবর্তনে চন্দ্রমুখী দেবীকে মরণোত্তর এন্ট্রান্স সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এই উপলক্ষে ২২ ফেব্রুয়ারি বেথুন কলেজের প্রাক্তনী সম্মিলনী অনুষ্ঠানে এই তিন প্রবীণ শিষ্যকে বিশেষ সম্মান জানানো হবে।

সংস্কৃতি চর্চা
ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-উপাচার্য। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের নিবিড় পাঠক, বাচিক শিল্পী ভারতী রায় তুলনায় কম পরিচিত। তাঁর সংস্কৃতি চর্চার আর এক বর্তমান পরিচয়, তিনি আইসিসিআর-এর সহ-সভানেত্রী। সম্প্রতি অডিয়ো বুক বা ‘কানে-শোনা বই’ হিসেবে প্রকাশিত হল তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের দু’টি ছোটগল্পের পাঠ ‘শাস্তি’ ও ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ (সারেগামা)। অক্সফোর্ড বুক স্টোরে এটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন তপন রায়চৌধুরী। ছিলেন নবনীতা দেবসেন ও বরুণ চন্দ। এমন আরও অডিয়ো বুক তৈরির ইচ্ছে আছে, জানালেন ভারতী।

প্রয়াণ
‘পুনশ্চ’ পঞ্চাশে পড়বে আগামী বছর। তার আগেই চলে গেলেন তার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক দীপংকর চক্রবর্তী। অবশ্য ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্যাপন নয়, নীরবে নিজের কাজটা করে যাওয়াতেই বিশ্বাস ছিল তাঁর। ফরিদপুরে জন্ম। ছোটবেলাতেই পরিবারের সঙ্গে চলে আসা বহরমপুরে। অর্থনীতিতে বি এ পড়তে কলকাতায়। তখনকার সেন্ট্রাল কলেজ (এখন মৌলানা আজাদ) থেকে স্নাতক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতেই স্নাতকোত্তর। ১৯৬৪-তে কৃষ্ণনাথ কলেজে শিক্ষকতা শুরু। সে বছরই ‘পুনশ্চ’ পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। দু’বছর পরে নথিভুক্তির কারণে তারই নাম হয় ‘অনীক’। ‘বিপ্লবের গান’ অনুবাদ করলেন দীপংকর, সিকিম নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনায় লেখা প্রকাশ করে জরুরি অবস্থার সময় ১৯ মাস জেলে থাকলেন। ’৭৭-এর পরে ‘অনীক’ ক্রমে হয়ে উঠল বামপন্থী বিতর্ক আর বিপ্লববাদের গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। বাংলার রেনেসাঁ, রামমোহন তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। বইমেলায় প্রকাশিত হল তাঁর শেষ সম্পাদিত বই আজকের চীন। ‘মান্থলি রিভিউ’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধের অনুবাদের এই সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছে পিপলস বুক সোসাইটি থেকে, তারও প্রতিষ্ঠাতা তিনি, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি’র মুর্শিদাবাদ শাখার প্রতিষ্ঠাতা, পাশাপাশি ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনকেও কলকাতার বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

ওদের অনুষ্ঠান
মৌমিতা, মাধবী, অমৃতা, মিনু, সুদীপ্ত, রিয়া। ওরা সকলেই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়ে। ২০০৯ থেকে রূপম ইসলাম ওদের গান শেখাতে শুরু করেন। পরে নাচ ও আঁকার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। রূপম বলছিলেন, ‘আমার আড়াই বছরের ছেলেরও গিটার, কি-বোর্ড রয়েছে, কিন্তু এই ছেলেমেয়েরা এ সব কোনও দিন ছোঁওয়ার সুযোগ পায় না। অথচ অনেকেই দারুণ প্রতিভাবান।’ এদের ১৩ জনকে নিয়ে রূপম তৈরি করেন অ্যালবাম ‘কন্ডিশন ফ্রি’। শর্ত ছিল যারা এটি প্রকাশ করবে, ওরা যাতে ভবিষ্যতে গান গাইতে পারে, সে দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। কেউ এগিয়ে আসেনি। সম্প্রতি জি ডি বিড়লা সভাঘরে এরাই গান-নাচে ভরিয়ে তুলল এক সন্ধে। ওদের সঙ্গেই একই মঞ্চে ছিল ১২ বিয়ন্ড বিলিভ-এর সদস্য, যারা ‘প্রতিবন্ধী’ বলে চিহ্নিত। আয়োজনে কলকাতা সুকৃতি ফাউন্ডেশন এবং লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল।

বসন্ত-উৎসব
বসন্তের শুরুতেই এক ঝাঁক বিদেশি ছবি মাত করতে চলেছে কলকাতার দর্শককে। ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস-এর পক্ষে গৌতম ঘোষ জানাচ্ছেন, তাঁদের আয়োজনে ২৩-২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় জাদুঘরের আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে: ‘স্প্রিং ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। থাকবেন বরুণ চন্দ, অনুপ মতিলাল, অশোক বিশ্বনাথন। অন্য দিকে ম্যাক্সমুলার ভবনে সম্প্রতি হয়ে গেল ডকেজ কলকাতা এশিয়ান ফোরাম ফর ডকুমেন্টারি। সারা সপ্তাহ ধরে দুনিয়ার নানা তথ্যচিত্র দেখানোর সঙ্গে ছিল আলোচনাও, যোগ দিয়েছিলেন নানা দেশের বিশিষ্ট ছবি-করিয়ে ও তাত্ত্বিকেরা। অন্য দিকে,আকিরা কুরোসাওয়াকে বিশ্ব চিনেছিল ওঁর ‘রশোমন’ ছবিটির জন্য। ওঁকে নিয়েই ২২-২৫ ফেব্রুয়ারি নন্দন ২-এ উৎসব। নিও ফিল্ম ফাউন্ডেশন অব বেঙ্গলের সঙ্গে এর আয়োজক কনস্যুলেট জেনারেল অব জাপান এবং দিল্লির জাপান ফাউন্ডেশন। আলোচনায় স্বপন মল্লিক, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ও বীরেন দাশশর্মা। দেখানো হবে বেশ কিছু বিখ্যাত ছবি।

চৈতন্যদেব
বাংলার সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিতে চৈতন্যদেবের ভূমিকা বহু আলোচিত। তবু, বিশেষ ভাবে মূর্তি ও টেরাকোটা ভাস্কর্য, কি চিত্রকলায় মধ্য থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তাঁর প্রভাব আজও আলাদা অনুসন্ধানের অপেক্ষায়। অঞ্জন সেন সে কাজ কিছুটা এগিয়ে দিলেন তাঁর বঙ্গশিল্পে চৈতন্যদেব (পত্রলেখা, ১৫০.০০) বইয়ে। রঙিন ও সাদাকালো বেশ কিছু দুর্লভ ছবি এই বইয়ের সম্পদ। আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীচৈতন্য ও শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মদিন। শ্রীচৈতন্যের ৫২৭-তম জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতা পুরসভা ঢাকুরিয়া সেতুর নামকরণ করেছে তাঁর নামে। এই উপলক্ষে ‘শ্রীচৈতন্যদেব ও শ্রীরামকৃষ্ণ’ বিষয়ক আলোচনাসভার উদ্বোধন করবেন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়। আজ বিকেল ৫টায় ঢাকুরিয়া দক্ষিণাপণের সামনে।

সীমান্ত
সীমান্ত কি শুধু রাজনীতির আর ভূগোলের? নাকি, সেই সীমান্তে, তার নিজস্ব ভূ-নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্রের কারণেই, গড়ে ওঠে নিজস্ব সংস্কৃতির এক ধারা? গঠিত হয় স্বতন্ত্র গোষ্ঠী? যে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত, তাদের মূলধারার সংস্কৃতি কী করে মিলেমিশে যায় সীমান্তের বিভাজিকায়? এই প্রশ্নগুলি বিভিন্ন দিক থেকে জরুরি, আন্তঃসীমান্ত আদানপ্রদান, বাণিজ্য এবং সামাজিক মেলবন্ধনের ক্ষেত্রে তো বটেই। ভারতের তিন প্রান্তের তিন সীমান্তের উত্তর-পশ্চিম হিমালয়সংলগ্ন সীমান্ত, উত্তর-পূর্বের সীমান্ত এবং তট সীমান্ত সাংস্কৃতিক বৈচিত্র নিয়ে কলকাতায় এক প্রদর্শনী ও আলোচনাসভার আয়োজন করেছে ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ ও ইন্দিরা গাঁধী রাষ্ট্রীয় মানব সংগ্রহালয়, ভোপাল। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে সর্বেক্ষণের দফতরে (ই এন ৭৯) ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায় তিন দিনের আলোচনাসভার উদ্বোধন, বিকেল ৩টেয় প্রদর্শনীর, চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে।

অর্ধেক আকাশ
নকশালবাড়ির ইতিহাসে সেই অর্ধেক আকাশটা মেঘলাই থেকে গিয়েছে এত কাল। এক জেলখানায় থার্ড ডিগ্রির প্রসঙ্গ ছাড়া সে ভাবে কখনও উঠে আসেনি মেঘে ঢাকা তারাদের কথা। অথচ, এই আন্দোলনে মেয়েরা লড়াই করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন ঘরে বাইরে। নির্যাতনকারীর ভূমিকায় শুধু সরকারি দমননীতি নয়, কখনও পার্টি কমরেড, এমনকী আশ্রয়দাতাও। ‘বিপ্লব’-এর ইতিহাসের সেই না-বলা কথা সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জেনে বিশ্লেষণ করেছেন শ্রীলা রায়। নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্বের শিক্ষক শ্রীলা এ নিয়ে কথা বলবেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবীবিদ্যা চর্চা কেন্দ্রের পরিচালক শমিতা সেনের সঙ্গে, আগামিকাল, অক্সফোর্ড বুকস্টোরে। উপলক্ষ শ্রীলার বই রিমেম্বারিং রেভলিউশন: জেন্ডার, ভায়োলেন্স অ্যান্ড সাবজেক্টিভিটি ইন ইন্ডিয়াজ নকশালবাড়ি মুভমেন্ট (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। “ব্যক্তিগত স্মৃতি থেকেই আমার উৎসাহটার শুরু। কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়া মিত্রের লেখাও আমাকে খুব উৎসাহিত করেছে,” বলছেন শ্রীলা।

আশ্চর্য কাহিনি
এখনও নতুন কোনও ছবির কাজে হাত দিতে গেলে বড় ভয় লাগে, মনে হয় পারব তো?’ দীর্ঘকাল ছবি করা, কবিতা লেখা, বা সে সুবাদে বহুবিধ সম্মান ও পুরস্কার পাওয়ার পর আজও এমন একটা ভয় তাড়া করে ফেরে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে। ‘আরে পুরস্কার-টুরস্কার তো আর ভয়গুলোকে নিয়ে যেতে পারে না। ছবি শুরুর আগে আই অ্যাম অলওয়েজ চেজড বাই ফিয়ার সাইকোসিস। তবে আমি চাই এ-ভয়টা থাকুক... ।’ আসলে সৃজনশীল মানুষ মাত্রেই তাঁর নতুন সৃষ্টির জন্যে যখন উন্মুখ হন, তখন তাঁকে ওই ভয়টা তাড়া করে ফেরে। নতুন ছবি ‘আনোয়ার কা আজব কিসসা’র কাজ শুরু হবে মার্চে, ব্যস্ত বুদ্ধদেব শীত-বসন্তের সন্ধিতে ১১ ফেব্রুয়ারি, তাঁর জন্মদিনের (জ. ১৯৪৪) বিকেলে বলছিলেন নওয়াজ সিদ্দিকি-র কথা: ‘আনোয়ার-এর চরিত্রে ওকে অভিনয় করানো নিয়ে কথায়-কথায় বুঝলাম, পাগলের মতো ভাল কাজ করতে চায় ও। এই স্পৃহারই বড় অভাব দেখি আজকাল, কী কবিতা, কী সিনেমায়, অনেকেই যেন বড় তৃপ্ত। অথচ গভীর অসুখ বা অতৃপ্তিই কিন্তু জন্ম দেয় সৃষ্টির মুহূর্ত।’ ছেলেবেলায় চোঙওয়ালা গ্রামাফোনে চোঙের ভিতরে যে দীর্ঘ ঘন অন্ধকার দেখেছিলেন, ‘সে অন্ধকারই এ-ছবিতে একটা জার্নি হয়ে উঠবে। চেনা বাস্তব অন্য কোনও গহন বাস্তবের চেহারা নেবে।’ আনোয়ারের ‘জার্নি’ তাই হয়ে উঠবে তার আশ্চর্য কাহিনি।


গবেষক
সাপের বিষ তো আসলে কুবুদ্ধি আর অহঙ্কার মঙ্গলকাব্যকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করলেন ডেভিড লিথ কার্লে। মঙ্গলকাব্য নিয়ে ওঁর গবেষণা মান্যতা পেয়েছে সারা বিশ্বে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ পাশ করে সে সময়ের নিয়মে সামরিক চাকরি নিয়ে যেতে হয় ভিয়েতনাম। মানুষের সঙ্গে মিশে এ সময়েই উৎসাহ জাগে এশিয়ার জনজীবন সম্পর্কে। দেশে ফিরে ১৯৭৪-এ এম এ করেন দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস নিয়ে। ১৯৮০-তে পিএইচ ডি, বিষয় রুলার্স অ্যান্ড মার্চেন্টস ইন এইটিন্থ সেঞ্চুরি বেঙ্গল। ২০০৭-এ অধ্যাপনা শুরু ওয়েস্টার্ন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির লিবারাল স্টাডিজ বিভাগে। গবেষণার কাজে ঘুরেছেন ভারত-বাংলাদেশের নানা প্রান্তে। শিখেছেন বাংলা ও সংস্কৃত। পোয়েট্রি অ্যান্ড হিস্টরি/ বেঙ্গলি মঙ্গলকাব্য অ্যান্ড সোশ্যাল চেঞ্জ ইন প্রিকলোনিয়াল বেঙ্গল ওঁর সুপরিচিত বই। সাম্প্রতিক প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন মঙ্গলকাব্যের ভাষ্য এবং রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে। কার্লে একদা উৎসাহী হন এখানকার পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে। ’৭৫-এ বালিগঞ্জ থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ, তার পর ট্রামে সাহিত্য পরিষদে গিয়ে গবেষণাও করেছেন বহু দিন। তখনই নজরে আসে মঙ্গলকাব্য। ডিসেম্বরে অবসরের পর আবার এ শহরে এক অসমাপ্ত সূত্রের খোঁজে। এখন তিনি বেনারস-কলকাতা ঘুরে কাজ করছেন খিদিরপুর-ভূকৈলাসের গোকুল এবং জয়নারায়ণ ঘোষালকে নিয়ে। ‘করুণানিধানবিলাস’ পড়েই এই আগ্রহ। উচ্ছ্বসিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সংগ্রহশালা-পুথিঘর দেখে। ১৯ ফেব্রুয়ারি মহিষাদল রাজ কলেজে বলবেন ‘মঙ্গলকাব্য: ইতিহাসের এক অমূল্য সূত্র’ বিষয়ে। রয়েছে এ শহরে আরও কিছু কাজ, তার পর আমেদাবাদ-দিল্লি হয়ে ঘরে ফেরা।

ছবি: গোপী দে সরকার



Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.