মহাকরণে ফ্যাক্স পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। তাই লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ বাতিল ও প্রধান সচিবের পদ থেকে সৌমিত্র মোহনকে সরানো নিয়ে রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) চিফ বিমল গুরুঙ্গ। একই সঙ্গে ওই চিঠিতে জিটিএ-র প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহনকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত ‘সিনিয়র’ অফিসারকে চাওয়া হয়েছে।
তবে চিঠিচাপাটি, মামলার প্রস্তুতি নিলেও আপাতত ভরা পর্যটন মরসুমে তারা যে পাহাড়ে বন্ধ ধর্মঘটের পথে হাঁটছে না এ দিন মোর্চা নেতৃত্ব তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “এখনই ধর্মঘটের কথা ভাবছি না। তাই ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক সংগঠনগুলি দেশ জুড়ে যে সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে, তা সমর্থন করছি না।”
মোর্চা সূত্রের খবর, দলের আইনজ্ঞদের পরামর্শসাপেক্ষে দ্বিতীয় দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। দু’দফায় জানিয়েও সাড়া না মিললে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি নিতেই ওই
চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে মোর্চা সূত্রের দাবি।
শনিবার জিটিএ-র সহ সভাপতি প্রদীপ প্রধান বলেন, “আমরা লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের ব্যাপারে গোড়া থেকেই আপত্তি করেছি। প্রধান সচিব পদে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে সরানোর জন্যও বলেছি। জিটিএ-র তরফে সে কথা জানিয়ে ফ্যাক্সও করা হয়েছে। সাড়া না মেলায় এ বার চিঠি দেওয়া হল। এতেও কাজ না-হলে আমরা শীর্ষ আদালতে যাব।’’
রাজ্য সরকার অবশ্য পাহাড়ের শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “পাহাড়ের বিষয়টি সংবেদনশীল। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন। আগামী দিনেও করবেন। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধন ও উন্নয়নের গতি আরও বাড়াতে বদ্ধপরিকর। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
বস্তুত, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাংকে খুনের মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন মোর্চা নেতাকে গ্রেফতারের জন্য গত কয়েকদিন
ধরে পাহাড়ে তল্লাশি চলছিল। সেই সময়ে মোর্চার তরফেও ওই মামলাকে সামনে রেখে শাসক দল তৃণমূল রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছে বলে অভিযোগ করে।
এমনকী, খোদ বিমল গুরুঙ্গ একাধিক সভায় বলে দেন, ‘‘শুধু ধরছি-ধরব বলে ভয় না দেখিয়ে উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে দেখানো হোক।’’
এর পরেই দু’দিন আগে মোর্চার আরও পাঁচ জন নেতা-কর্মী ওই মামলায় গ্রেফতার হন। মোর্চার অন্দরের খবর, ওই মামলা নিয়ে কিছুটা কোণঠাসা হওয়ার আশঙ্কা করেই রাজ্যকে চাপে রাখতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন গুরুঙ্গ। সে কথা মাথায় রেখেই আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
সরকারি সূত্রের খবর, এ বারের চিঠিতে বলা হয়েছে, জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত দফতর তাদের হাতে রয়েছে। সেই কারণে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার বিষয়টি জিটিএ-র হাতেই থাকা উচিত বলে মোর্চা নেতাদের অভিমত।
বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও চিঠি পাঠানো হবে বলে মোর্চা নেতারা জানান। পাশাপাশি, প্রধান সচিব পদে বসানোর জন্য অন্তত পাঁচ জনের তালিকা চেয়েছে জিটিএ। ওই তালিকা দেখে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরে কাকে প্রধান সচিব করা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় জিটিএ। এ দিনই মদন তামাং হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার ধৃত পাঁচ মোর্চা নেতা অসুস্থ দার্জিলিং সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। |