লটারির আড়াই লাখ উজাড়, তবু ভিড় পিন্টুবাবুর বাড়িতে
বাম্পার লটারি জেতা বা এক লাফে কোটিপতি হওয়ার জন্য কোনও কালে ছিটেফোঁটাও মাথাব্যথা ছিল না তাঁর।
কিন্তু ভাগ্যে থাকলে তিনিই বা কী করবেন! এক পরিচিত যুবকের পীড়াপীড়িতে জীবনে প্রথম বার লটারির টিকিট কিনেছিলেন। ব্যস তার পরেই বাজিমাত। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর তিন নম্বর স্কিম-এর দিব্যেন্দু (পিন্টু) হালদার হঠাৎ করে আড়াই লক্ষ টাকার মালিক।
টালি-পাথরের সামান্য কারবার। স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে সংসারে ডাল-ভাত দিব্যি জুটে যাচ্ছিল। হঠাৎ অর্থ-বৃষ্টিতে পিন্টুবাবু কী করলেন? রাজা হর্ষবর্ধনের কায়দায় পুরো টাকাটাই অকাতরে উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। লটারির সেই টাকা শেষ দু’-তিন সপ্তাহের মধ্যেই।
কিন্তু নিস্তার নেই তাতেও। চেনা-অচেনা লোকের হানা বাড়িতে লেগেই আছে। ‘এখানে সাহায্য পাওয়া যায়?’ বলে কড়া নেড়ে প্রত্যাশীদের প্রশ্নে এখন নাজেহাল হালদার পরিবার।
পিন্টুবাবুর দেওয়া হুইল চেয়ারেই এখন স্কুলে যায় শিশুটি।—নিজস্ব চিত্র
“আসলে এও এক নেশা, জানেন। মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানোর নেশা। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়-টয় ঠিক আমার ধাতে নেই”, লাজুক হেসে কথাটা বলছেন পিন্টু। পাশে বসে প্রশ্রয়ের হাসি স্ত্রী শর্মিষ্ঠার মুখে। শর্মিষ্ঠা নিজে প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। সংসারের বাজেটের অনেকটাই স্বামীর শখ মেটাতে বরাদ্দ রেখেছেন। পিন্টুর সার কথা, “আমি যখন কিছুটা পাচ্ছি, তখন যার আরও কম, বাকিটা না-হয় তার কাজেই লাগুক।”
‘অমুকবাদ’ বা ‘তমুকইজ্ম’-এর তত্ত্বের বই থেকে উঠে আসেনি এই জীবন-দর্শন। “ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি তো! টানাটানির সংসারে বড় হয়েছি। জীবনে দুঃখ-কষ্ট দেখেছি বলেই অন্যের দুঃখে নিজেকে সামলাতে পারি না। লোকে খুশি হলে, আমার ভেতরে কী যে আনন্দ হয়, বলে বোঝাতে পারব না”, বলছেন ৫০ ছুঁই ছুঁই লোকটি।
কয়েক বছর আগের কথা। বন্ধ কারখানার শ্রমিক পরিবারের ১১ বছরের দেবজ্যোতি বাগচি হাঁটতে চলতে পারে না। রোজ বাবার কোলে চড়ে স্কুলে যায়। পিন্টুবাবু তার জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। “হুইলচেয়ার পেয়ে ছেলেটির মুখের হাসি দেখে মনে হয়েছিল, জীবনে যা পাওয়ার সব পেয়ে গিয়েছি।”
এমন প্রাপ্তি যদিও লেগেই থাকে। কার মেয়ের বিয়েতে টাকা দরকার, কার সামান্য রোজগারে সংসার চলে না। মুশকিল আসান পিন্টুবাবু। হোটেলকর্মী বিনয় তলাপাত্র, ইস্ত্রি করে সংসার চালানো গোপাল কর্মকার বা স্বামীর অকালমৃত্যুতে দুই মেয়েকে নিয়ে দিশাহারা পপি চক্রবর্তীর মতো অনেকের কাছেই ‘পিন্টুদা’ ভগবান!
আবার উল্টো অভিজ্ঞতাও হয়। মিথ্যে কথা বলে নেশা করার জন্যও অনেকে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পিন্টুবাবু বলে চলেন, “তখন খারাপ লাগে। কিন্তু কী করব বলুন?” নিজের টাকা বিলোনোর নেশায় মশগুল পিন্টু যে ঠেকে শেখবার পাত্র নন।
তবু এত দিন বেশি লোকে এই দান-ধ্যানের খবর জানতে পারত না। গত ২৩ জানুয়ারি লক্ষ্মীলাভের পরে কিন্তু খবরটা চেপে রাখা যাচ্ছে না। পিন্টুবাবুর বাল্যবন্ধু মিলন দেব বলছেন, “লটারির টাকা ফুরিয়ে গেলেও ওদের বাড়িতে সাহায্যপ্রার্থী আসার কমতি নেই।” অবশ্য এক জন প্রার্থীকে অনেক দিন ধরেই ঘোরাচ্ছেন পিন্টুবাবু। একমাত্র মেয়ে এমএসসি প্রথম বর্ষের দীপশিখার ছবি তোলায় আগ্রহ। অনেক দিন ধরে একটা টেলি-লেন্সের শখ তাঁর। মেয়ের আব্দার শুনে পিন্টুবাবু বলেছেন, “সবুর কর, টাকা জমলেই কিনে দেব।” বাবার টাকা জমার আশায় দীপশিখার প্রতীক্ষা কিন্তু এখনও জারি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.