আগেও মুন্নার হয়ে পুলিশকে গাল ববির
গার্ডেনরিচের তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার মদতে চলা বেআইনি নির্মাণের ছবি তুলতে গিয়ে চূড়ান্ত অপমানিত হতে হয়েছিল পশ্চিম বন্দর থানার ওসি-সহ বেশ কয়েকজন অফিসারকে। মাসখানেক আগে ঘটা সেই ঘটনায় মুন্নার পক্ষ নিয়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমও পুলিশকে কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছিলেন বলে অভিযোগ। সাব ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী হত্যার ঘটনায় ববির নাম উঠে এসেছে মুন্নার অন্যতম ত্রাতা হিসেবে। তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান মুন্নার মাথায় ববির আশীর্বাদী হাত যে অনেক দিন ধরেই রয়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ বলে পুলিশের একাংশের মত। এত দিন ওই ঘটনা নিয়ে হইচই না-হলেও গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পরে ফের নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশের বড় কর্তারা।
কী হয়েছিল সে দিন?
পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, বন্দর এলাকায় বেআইনি নির্মাণের খোঁজখবর করতে একটি দল গড়ে দিয়েছিলেন বন্দর ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার সলোমন নেসাকুমার। তাঁর অফিসের এক অফিসারের নেতৃত্বে কয়েক জন পুলিশ কর্মী গত ৮ জানুয়ারি গার্ডেনরিচ থানা এলাকায় বেশ কয়েকটি বেআইনি নির্মাণের ছবি তুলে রাখছিলেন। এই সময় মুন্নার লোকজন তাঁদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ওই পুলিশ কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় রামনগর মোড়ে ১৫ নম্বর বরো অফিসে, মুন্না যে বরোর চেয়ারম্যান।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
অভিযোগ, গোড়ায় মুন্না নিজেই ওই পুলিশকর্মীদের এক প্রস্ত অপমান করেন। এমনকী, তাঁদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে ছবি তুলে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেবেন বলেও হুমকি দেন। মুন্নার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় ওই পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের।
ঘটনার খবর পেয়ে পশ্চিম বন্দর থানার ওসি-কে বরো অফিসে যাওয়ার নির্দেশ দেন ডিসি (বন্দর)। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি না-হওয়ায় তিনি নিজে যান। ইতিমধ্যে এসে পড়েন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। পুলিশের অভিযোগ, ফিরহাদ ওসি-সহ অন্য অফিসারদের হুমকি দিয়ে বলেন, মুন্না শুধু এক জন কাউন্সিলর নন, তিনি বরো চেয়ারম্যান-ও। মুন্নার বিরুদ্ধাচরণ করলে তাঁরই বাড়িতে সান্ত্রীর কাজ (সেন্ট্রি ডিউটি) করানো হবে। তখন ওই পুলিশ অফিসারদের মুন্নাকে স্যালুট করতে হবে। পুলিশ সূত্রের আরও অভিযোগ, মন্ত্রী তাঁদের পেশাকে চূড়ান্ত অপমান করে সে দিন ওই অফিসারদের ‘দু’টাকার পুলিশ’ বলেছিলেন। গোটা ঘটনাটি ঘটে ডিসি (বন্দর) এবং এক জন সহকারী কমিশনারের সামনে।
ফিরহাদ হাকিম নিজে অবশ্য এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। শনিবার ডোমজুড়ের এক সভায় প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলবেন না। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ কর্মীরা কয়েকটি স্পশর্কাতর এলাকায় গিয়ে ফটো তুলছিলেন। যা নিয়ে মহিলারা আপত্তি তোলেন। তাই তাঁদের বরো অফিসে, চেয়ারম্যানের ঘরে নিয়ে গিয়ে মৃদু তিরস্কার করা হয়। ঘনিষ্ঠ মহলে ফিরহাদের আরও বক্তব্য, খবর পেয়ে তিনি নিজেও সেখানে পৌঁছন ও পুলিশকে ‘সদুপদেশ’ দেন।
এই ঘটনার পরে পুলিশের তরফে একটা মামলা রুজু করা হয় ঠিকই। কিন্তু নেহাতই দায়সারা ভাবে। ৮ জানুয়ারি পশ্চিম বন্দর থানার কেস নম্বর ৫-এ বলা হয়, কয়েক জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছে। ওই মামলাটি বর্তমানে গার্ডেনরিচ থানায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কারণ, বরো অফিসটি পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার মধ্যে পড়লেও পুলিশ যে সব এলাকায় বেআইনি নির্মাণের ছবি তুলছিল, সেগুলি গার্ডেনরিচ থানা এলাকার মধ্যে।
এই ঘটনাটি নিয়ে নতুন করে নাড়াচাড়া শুরু হয় তাপস চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে মুন্নার নাম উঠে আসার পরে। ওই ঘটনার পরেও মুন্নার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ফিরহাদ। ঘটনার পরের দিনই মহাকরণে তিনি বলেন, মুন্না ওই ঘটনায় যুক্ত, এটা তিনি বিশ্বাস করেন না। লালবাজার সূত্রের মতে, এক জন শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রীর এমন কথা বলাটা পুলিশের উপর প্রবল চাপ তৈরি করে।
কিন্তু ঘটনার দিনই তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা যখন গার্ডেনরিচ থানায় যান, তখন তাঁর সামনেই সেই সময়ে অফিসারদের একাংশ ওই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ক্ষোভ উগরে দেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর। সিপি-কে তাঁরা বোঝাতে চেষ্টা করেন, কী ভাবে মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতাদের আজ্ঞাবহ হয়ে তাঁদের চলতে হচ্ছে ও মুখ বুজে চূড়ান্ত অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। ঘনিষ্ঠ মহলে পচনন্দার দাবি, মাসখানেক আগের ওই ঘটনার কথা তিনি জানতেন না। গার্ডেনরিচ থানায় গিয়েই প্রথম জানতে পারেন।
কিন্তু পচনন্দার কাছে ক্ষোভ উগরে দিলেও পশ্চিম বন্দর থানায় রুজু হওয়া মামলায় কেন ববি ও মুন্নার নাম অভিযুক্ত হিসেবে থাকল না? বিষয়টি তদানীন্তন সিপি-কেই বা জানানো হয়নি কেন? বন্দর ডিভিশনের এক অফিসারের বক্তব্য, “ঘটনার সময়ে উপস্থিত ছিলেন ডিসি (বন্দর), এসি-র মতো অফিসারেরা। যা হয়েছে, তা তাঁরা দেখেছেন। সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশ মতোই মামলা করা হয়েছে। আমরা নির্দেশ পালন করেছি মাত্র।”
শনিবার এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ডিসি (বন্দর) বলেন, “আমি এ ব্যাপারে মন্তব্য করব না।” আর পচনন্দা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, বন্দর এলাকা জুড়ে যে ভাবে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাতে পুলিশের পক্ষেও অতটা সক্রিয় হয়ে মুন্না বা ববির বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব ছিল না। তবে গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে ফেরার মুন্নাকে আর রেয়াত করতে চাইছে না পুলিশ। তাঁদের ধারণা, রাজ্য-রাজনীতির জল এত দূর গড়িয়েছে যে, পুরমন্ত্রীর পক্ষে আর তাকে সরাসরি আড়াল করা সম্ভব হবে না। তাই ৮ জানুয়ারির মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির জায়গায় এখন মুন্নার নাম জোড়ার প্রক্রিয়া শুরু করছেন তাঁরা। মুন্নাকে যে রেয়াত করা হচ্ছে না, তার আরও ইঙ্গিত মিলেছে শনিবার রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়। ইকবাল ও মোক্তার দু’জনকে ধরার চাপ থাকলেও এ দিন তিনি বলেন, “যার বিরুদ্ধে সরাসরি খুনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ আছে, তাকে (এ ক্ষেত্রে মুন্না) ধরাটাই অগ্রাধিকার পাবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.