স্কুলে থিমপুজোর চল দীর্ঘদিনের। কিন্তু ক্রমশ যেন তা পড়ুয়াদের কাছে সম্মানের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে বেড়েছে শিল্পের উৎকর্ষতা। কৃষ্ণনগরের স্কুলগুলির পড়ুয়াদের মধ্যে পুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই তৈরি হয়ে যায় হার না মানা মানসিকতা।
বৈচিত্র্য আর সৃজনশীলতায় তারা ছাপিয়ে যেতে চায় একে অপরকে। এবারও তার কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি। কোনও স্কুলের সরস্বতী পুজোর থিম যামিনী রায়ের ১২৫ তম জন্মদিন তো, কোনও স্কুলের থিম সুকুমার রায়ের ১২৫ তম জন্মদিন। কারও বৌদ্ধ মঠ আবার কারও থিম সৌরজগৎ। কারা শ্রেষ্ঠওই প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে শহরবাসী মুগ্ধ বৈচিত্র্য আর সৃজনশীলতায়। অন্যান্য বারের মত এবারও শহরের সরস্বতী পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল। তাদের বিষয় যামিনী রায়ের জন্মের ১২৫ বছর পূর্তি। পটচিত্রের আদলে সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেন স্কুলেরই শিক্ষক। আর যামিনী রায়ের ছবি মণ্ডপের গায়ে ফুটিয়ে তুলেছে স্কুলেরই ছাত্ররা। আবার কৃষ্ণনগর এভি হাইস্কুলের পুজোর থিমের বিষয় মঙ্গলগ্রহে অভিযান। ছাত্রদের তৈরি বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহে অভিযানের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে সৌরজগৎ। তবে ওই স্কুলের প্রধান আকর্ষণ দশম শ্রেণির ছাত্র আমির হোসেনের তৈরি সুদৃশ্য প্রতিমা।
অন্য দিকে ঘূর্ণী হাইস্কুলের এবারের থিম সুকুমার রায়ের জন্মের ১২৫ বছর পূর্তি। তুলে ধরা হয়েছে আবোল তাবোলের প্রচ্ছদ। বকচ্ছপ, খুড়োর কল কিংবা কুমড়ো পটাশ। তবে প্রধান আকর্ষণ মণ্ডপ চত্বরে ভারতীয় নৃত্যকলা সম্পর্কিত বিশেষ প্রদর্শনী। ওই প্রদর্শনীতে ভারতীয় নৃত্যের সাতটি কলার ছবি-সহ বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের ছাত্রদের তৈরি বৌদ্ধমঠ মুগ্ধ করেছে। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ থেকে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি আর সেই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক চিত্রকলা। আর মণ্ডপে সর্বক্ষণ উচ্চারিত হয়েছে বৌদ্ধ প্রার্থনা মন্ত্র। আবার কৃষ্ণনগর দেবনাথ হাইস্কুলের থিমের বিষয় ইন্টারনেট।
কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “স্কুলগুলির মধ্যে এই থিমের প্রতিযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেই ভাল। কারণ, এর মাধ্যমেই প্রকাশ পাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীল প্রতিভা।” আর নাতির হাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ৬৫ বছরের সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনকার ছাত্ররা কত রকম প্রতিভার অধিকারী। চিন্তার কত বৈচিত্র্য তাদের মধ্যে। আমাদের সময়ে এসব ভাবাই যেত না।” |