আদালতে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন, পুরো ভেঙে পড়লেন এবং শেষে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, বান্ধবী রিভা স্টিনক্যাম্পকে জেনেশুনে খুন করেনইনি, বরং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা আছে।
তাঁকে ঘিরে পুরো ঘটনাচক্রে এ ভাবেই নাটকীয় মোচড় এনে ফেললেন অস্কার ‘ব্লেড রানার’ পিস্টোরিয়াস।
শুক্রবার তাঁকে আদালতে তোলার পরপর যার শুরু। পিস্টোরিয়াস কাঠগড়ায় উঠেই জানিয়ে দেন যে, সবার আগে তিনি রিভা আর তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাতে চান। প্রার্থনা করতে চান রিভা আর তাঁর পরিবারের জন্য। সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার জানাতে চান। রিভাকে খুনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করছেন, এবং প্রবল ভাবে!
যা শুনে নড়েচড়ে বসেছে খেলার দুনিয়া। |
প্রিটোরিয়া পুলিশ যতই পিস্টোরিয়াসের জামিন আটকানোর চেষ্টা করুক, আসাফা পাওয়েল থেকে এটো বল্ডনকারওরই বিশ্বাস হচ্ছে পিস্টোরিয়াস এই কাজ করে থাকতে পারেন বলে। এ দিন তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পিস্টোরিয়াস আদালতে ওর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগকে চরম অস্বীকার করেছে। বরং ও রিভা আর তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।”
কথা বলবেন কী, এ দিন কাঠগড়ায় উঠেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন অলিম্পিকের কিংবদন্তি। মুখ ঢেকে ফেলেন হাত দিয়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী পিস্টোরিয়াসের মুখচোখ দেখেও বোঝা যাচ্ছিল, কী প্রবল ঝড় চলছে তাঁর মনের উপর দিয়ে। প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট ডেসমন্ড নায়ারই প্রথমে পিস্টোরিয়াসকে বলেন, “শান্ত হও।” চেয়ার দেখিয়ে বলেন, “এসো, বসো এখানে।” যতক্ষণ শুনানি চলেছে, বারবার মানসিক স্থিতি হারিয়েছেন পিস্টোরিয়াস। যখন ম্যাজিস্ট্রেট ‘প্রিমেডিটেটেড মার্ডার’-এর প্রসঙ্গ তোলেন, যন্ত্রণায় বেঁকেচুরে যান পিস্টোরিয়াস। কাঁপতে থাকেন। সঙ্গে অঝোর কান্না।
আদালতে ছিলেন পিস্টোরিয়াসের বাবা হেনকে। ছিলেন ভাই কার্ল, বোন আইমে। এক সময় দেখা যায়, পিস্টোরিয়াসকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁর বাবা। কাঁধে হাত রেখে ভাই কার্ল।
পরে হেনকে বলে ফেলেন, “ঈশ্বর যেন ওকে সমস্ত কিছু সামলানোর শক্তি দেন।” যেমন মহানায়কের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর চেনা দুনিয়া। অলিম্পিকের কিংবদন্তি ‘রানার’ আসাফা পাওয়েল বলেছেন, “নিজের বান্ধবীকে খুনের ঘটনা খুব দুর্ভাগ্যজনক। পিস্টোরিয়াসের মতো অ্যাথলিট সত্যিকারের আদর্শ। সবার কাছেই এটা খুব দুঃখের।” চার বারের অলিম্পিক পদকজয়ী এটো বল্ডনও বলেছেন, “পিস্টোরিয়াসকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। ওর মতো মানুষ খুন করতে পারে, বিশ্বাস হচ্ছে না।”
তবু তো মন ভিজছে না পুলিশের।
তিনি জেনেশুনে নাকি অনিচ্ছাকৃত ভাবে প্রেমিকাকে খুন করেছেন, জানা নেই। পুলিশ এখনও বার করে উঠতে পারেনি। কিন্তু পিস্টোরিয়াসের জামিনের ব্যাপারে বিরোধিতা করা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পুলিশি রিপোর্টে ভুল বোঝাবুঝির কথাই উঠে আসছিল। পিস্টোরিয়াস নাকি মাঝরাতে চোর ভেবে গুলি চালিয়েছেন বান্ধবীর শরীরে। কিন্তু এ দিন আদালতে চত্বরে পিস্টোরিয়াসকে দেখতে পাওয়ার পরপরই অন্য জল্পনা চালু হয়ে যায়। বলাবলি হতে থাকে, ঘটনার দিন পিস্টোরিয়াসের প্রতিবেশীরা নাকি চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। যার পরেই ঘটে নির্মম হত্যাকাণ্ড। যা শুনে পুলিশ জানিয়ে দেয়, পিস্টোরিয়াসের জামিনের যে কোনও আর্জির বিরোধিতা করবে তারা। মঙ্গলবার পর্যন্ত হাজতে থাকতে হবে পিস্টোরিয়াসকে। বুধবার আবার শুনানি। |