সিনেমা সমালোচনা...
হাসতে হাসতে দেখার মতো
নীরজ পাণ্ডে ইজ ব্যাক। আ ওয়েডনেসডের মতো একটা ঘটনা ঘটানোর পর এত দিনে আস্তিন থেকে পরের তাস বের করলেন তিনি। স্পেশাল ছাব্বিশ। এবং এ বারেও তুরুপ।
এবং এ বারেও হিরো কিন্তু সেই স্টুপিড কমন ম্যান। যে কিনা আসলে একেবারেই স্টুপিড নয়। ওয়েডনেসডে-তে কমন ম্যান পুলিশকে একদম হিলিয়ে দিয়েছিল। টেররিজমের সঙ্গে কমন ম্যানের একার লড়াই। এ বারে কয়েক জন কমন ম্যান মিলে ঘোল খাইয়ে দিল সিবিআইকে। কিন্তু এ বারেরটা কোনও ধর্মযুদ্ধ নয়। একেবারেই জাল-জুয়াচুরির কারবার। আর সে কারণেই স্পেশাল ছাব্বিশ ওয়েডনেসডের মতো সিরিয়াস মেজাজের ছবি নয়। একটা দুর্ধর্ষ কমেডি থ্রিলার। এখানে সাসপেন্স আছে, টুইস্ট আছে। কিন্তু গা শিরশিরানো আতঙ্ক নেই। মারামারি রক্তারক্তি নেই। একদম হাসতে হাসতে হইহই করে দেখার মতো ছবি।
রেট্রোলুক ব্যাপারটা এখন খুব চলছে। স্পেশাল ছাব্বিশ-এও সেটা একশোয় দু’শো আছে। শুধু তাই নয়। এই ডিপার্টমেন্টে ছবিটা একশোয় দু’শো নম্বরও পাবে। সিপিয়া টোনড্ কালার এফেক্টের জন্য নয়। পুরোনো জিঙ্গল-ফিল্ম পোস্টার, পুরোনো নোট, পুরোনো গাড়ি ইত্যাদি নিখুঁত ভাবে ব্যবহার করার জন্যও শুধু নয়। নম্বর পাবে এই জন্য যে, ১৯৮৭ সালের গল্প বলতে গিয়ে নীরজ রেট্রো রেফারেন্সগুলো শুধু অলঙ্কারের মতো ওপর থেকে সাজিয়ে দেননি। ছবির শরীর এবং আত্মার মধ্যে ওই পুরোনো সময়টাকে চারিয়ে দিতে পেরেছেন। ছাব্বিশে জানুয়ারির রিপাবলিক ডে প্যারেড-এর ফুটেজ রাজীব গাঁধী আর জৈল সিংহ আপনাকে সেই যে ওই সময়টাকে মনে করিয়ে দেবে, পরের আড়াই ঘণ্টা আপনি আর তার থেকে বেরোতে পারবেন না। এই নস্টালজিয়াটা স্পেশাল ছাব্বিশকে আরও বেশি ভালবাসতে বাধ্য করবে আপনাকে।
স্পেশাল ২৬
অক্ষয়কুমার, মনোজ বাজপেয়ী, অনুপম খের
কলকাতার অংশটা সম্পর্কে যদিও দু’টো কথা বলার আছে। কলকাতাকে এস্টাব্লিশ করতে হাওড়া ব্রিজ আর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখানো হয়েই থাকে। নীরজও দেখিয়েছেন। তার সঙ্গে কাস্তে-হাতুড়ি লাল পতাকাকেও কলকাতার একটা চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নীরজের কলকাতা পতাকায় মোড়া। সে না হয় হল। কিন্তু বাঙালি মহিলা বলে সবাই রাস্তাঘাটে এয়ারপোর্টে আটপৌরে ঢঙে শাড়ি পরে ঘুরবেন! এটা তাঁর কেন মনে হল? নীরজ তো কলকাতায় ছিলেন। এমনটা দেখেছিলেন কি?
এ বার আসা যাক অভিনেতাদের কথায়। জনপ্রিয় বাণিজ্যসফল অভিনেতাদের মধ্যে একটা প্রবণতা বেশ কমন। ক্রমাগত ফর্মুলা ছবি করতে করতে একটা বয়সের পর তাঁদের মনে হয়, অব কুছ অলগ হো যায়ে...। অক্ষয় কুমার সম্ভবত সেই রকম একটা পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। পরেশ রাওয়ালের সঙ্গে ‘ওহ্ মাই গড’ করার পর এ বার তিনি স্পেশাল ছাব্বিশ-এ।
কিন্তু অক্ষয় কুমার তো আর আমির খান নন। একার অভিনয়ের জোরে একটা ছবি টেনে নিয়ে যাবেন এমন প্রত্যাশা তাঁর কাছে কেউ করে না। ‘ওহ্ মাই গড’-এ সেই দায়িত্বটা ছিল পরেশের। এই ছবিতে অক্ষয়কে ঘিরে আছেন অনুপম খের, মনোজ বাজপেয়ী, জিমি শেরগিল, রাজেশ শর্মারা। অক্ষয় আছেন তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্সটুকু নিয়েই। এবং তাঁকে রাখাও হয়েছে সে ভাবেই। সেটুকু হলেই যথেষ্ট হত। কিন্তু হাজার হোক, অক্ষয় কুমার বলে কথা! ফলে তাঁর জন্য নায়িকা (কাজল অগ্রবাল) চাই, না হোক দু’টো গান চাই। অবান্তর এই মেদগুলো না থাকলেই ভাল হত নীরজ।
এ ছবির আসল নায়ক অনুপম খের। এক দিকে নকল সিবিআই অফিসার। অন্য দিকে মাঙ্কি টুপি পরা গেরস্ত। দু’টো সত্তার বডি ল্যাঙ্গোয়েজ কতটা পালটে ফেলতে হয় একই গল্পের ভেতরে, সেটি দর্শনীয় এবং শিক্ষণীয়। শুধু ইংরেজি বলার তফাতটা একটু বেশিই প্রকট, এই যা। সেটা সংলাপ লেখার সময়ই খেয়াল রাখা উচিত ছিল। অথবা এমন একটা ইঙ্গিত রাখা দরকার ছিল, যাতে মনে হয়লোকটা ওই সময়ের জন্য ওইটুকু রপ্ত করে নিয়ে, সঠিক বাচনটা গলায় তুলে নিয়ে কথা বলছে। ওটা আসলে ওর ভেতর থেকে আসছে না।
মনোজের কথা বাদ দিলাম কেন ভাবছেন? ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন, সুকৌশলে নীরজ এ ছবির সিক্যুয়েলের সম্ভাব্য ধরতাইটা দিয়েই রেখেছেন। ছেলেকে কাঁধে করে স্কুলবাসে তুলে দেওয়া, যেখানে সেখানে নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়া সিবিআই অফিসারটি নিশ্চয়ই সেখানেও বদলা নিতে ফিরে আসবেন। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম। থ্যাঙ্ক ইউ মনোজ। আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন, সময় সময় সিবিআই অফিসারও আমাদের মতোই। স্টুপিড কমন ম্যান!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.