|
|
|
|
প্রসঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন |
ভাঁওতা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী: রেজ্জাক |
শুভাশিস ঘটক • ভাঙড় |
আরাবুল ইসলামের হাতে ‘আক্রান্ত’ হওয়ার ৩৯ দিন পরে ময়দানে প্রত্যাবর্তন ঘটল প্রবীণ সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার।
যে ভাঙড়ে গত ৬ জানুয়ারি তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা জনসভা করলেন রেজ্জাক। বেশির ভাগটা জুড়েই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন সংক্রান্ত দাবির বিরোধিতা।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতে চেষ্টার কসুর করছেন না মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে তিনি ইমাম-ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। মাদ্রাসা-ছাত্রীদের সাইকেল বিলি করছেন। ভাঙড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সংখ্যালঘুদের বহু অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যাচ্ছে। বহু বার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজের ৯৯% তিনি করে ফেলেছেন। এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী যখন সংখ্যালঘুদের মন জিততে চাইছেন, তখন সিপিএমও ময়দানে নামাল সংখ্যালঘু নেতা রেজ্জাক মোল্লাকে।
ভাঙড়ের ঘটকপুকুরে এ দিনের জনসভায় রেজ্জাক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যখন-তখন ইফতারে যাচ্ছেন। মাথায় ফেট্টি বাঁধছেন। কলমা পড়ছেন। কিন্তু উনি মুসলিম ধর্মাচরণের কিছু জানেন না। এ ভাবে মুসলিম-দরদী হওয়া যায় না।” মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করে তিনি বলেন, “উনি বলেছেন, দু’লক্ষ মুসলমানের চাকরি দিয়েছেন। উনি ভাঁওতা দিচ্ছেন। আমি ওঁর কাছে সেই তালিকা চাইছি। উনি তালিকা দিতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে বনবাসে চলে যাব। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় উনি কোনও কাজই করেননি।” |
ফের ভাঙড়ে। আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রথম জনসভায় লাঠি হাতে রেজ্জাক মোল্লা। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র |
ভাঙড়ের চণ্ডীপুরে যে জমিতে সংখ্যালঘুদের জন্য রাজ্য সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিকল্পনা করেছে, সেই জমিতে বসবাসকারী ৩০০টি পরিবারের জন্য আগে পুনর্বাসনেরও দাবি তোলেন রেজ্জাক। কিছুটা হুমকির সুরেই তিনি বলেন, “পুনর্বাসন না হলে ওখানে জমি দেওয়া যাবে না। কী করে কী করতে হয় তা আমরা জানি।” দিন কয়েক আগে চণ্ডীপুরে সরকারি অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমকে ‘ভাগাড়ের শকুন’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে রেজ্জাকের সংযোজন, “উনি ভাঙড়টাকে সত্যিই ভাগাড় মনে করেন। ধাপার মাঠে আর ময়লা ফেলা যাচ্ছে না। সেই জন্য ভাঙড়ে চার হাজার বিঘা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করে ময়লা ফেলার জায়গা করবেন বলে ঠিক করেছেন। ভাঙড়ের মানুষ তা করতে দেবে না।”
আক্রান্ত হওয়ার পরে ২৩ দিন হাসপাতালে ছিলেন রেজ্জাক। এ দিন কর্মী-সমর্থকদের সামনে লাঠি হাতে আসেন। সভায় ভিড়ও ভালই হয়েছিল। ছিলেন বহু মহিলা ও বৃদ্ধা। অধিকাংশ সময় বসেই ছিলেন রেজ্জাক। এখনও যে তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন তা-ও স্বীকার করেছেন রেজ্জাক। তাঁর কথায়, “কোমরে যন্ত্রণা আছে। তা সত্ত্বেও আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। যত ক্ষণ না কবরে যাচ্ছি, লড়াই চালিয়ে যাব।” তাঁর আক্রান্ত হওয়ার বর্ণনা দিয়ে রেজ্জাক বলেন, “আমাকে যে তেজি নেতা মেরেছিল, তিনি এখন জেল আর হাসপাতাল করছেন।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “আরাবুল ইসলামের অসুস্থতা কোথায় তা খুঁজতে গিয়ে চিকিৎসকেরা পাগল হয়ে যাচ্ছেন। এখন তো শুনলাম ওঁকে নাকি মনোবিদ দেখানো হবে। তার পরে জানা যাবে কে পাগল, চিকিৎসকেরা না কি আরাবুল!”
দুপুরে আড়াইটে নাগাদ এ দিনের সভা শুরু হয়। তার আগে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে আসার সময়ে মিনাখাঁয় কয়েক জন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
রেজ্জাকের সুরেই এ দিন নলহাটিতে উপ-নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন সংক্রান্ত দাবির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে ১৯৭৭-এ সংখ্যালঘুদের সরকারি চাকরি ছিল ৯%। বাম আমলে তা ২%-এ নামে। আর এই কুড়ি মাসের সরকারে তা দাঁড়িয়েছে ১.৫%-এ।” তাঁর দাবি, “সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করছে একমাত্র কেন্দ্রই। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে সংখ্যালঘুদের ভাঁওতা দিচ্ছেন, প্রতারিত করছেন।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “ইমাম ভাতা দিয়ে সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই ভাতাও ইমাম-মোয়াজ্জেমরা পাচ্ছেনও না। সংখ্যালঘুদের আর্থিক-সামাজিক পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নয়ন দরকার। সেই কাজ কেন্দ্র সরকার করছে।” |
|
|
|
|
|