সরকার অনুমোদিত একটি কৃষি সমবায় থেকে বীজ কিনে আলু চাষ করে সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ করলেন বর্ধমানের বহরপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা। বৃহস্পতিবার বৈদ্যপুরের কালনা সিএডিপি কৃষি সমবায়ে অভিযোগ জানান তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ওই সমবায়ের বীজ নিয়ে চাষ করে আলুতে কালো ছোপ ছোপ কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। শতকরা ২০ থেকে ৬০ ভাগ আলুতেই এই লক্ষণ দেখা দিয়েছে বলে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন চাষিরা। ব্যাঙ্ক থেকে যে চাষিরা ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরাও এতে সমস্যায় পড়েছেন। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রোগকে ‘পোটাটো স্ক্রাব’ বা বাংলায় দেদো রোগ বলা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে বহরপুরে গিয়ে দেখা গিয়েছে উদ্বিগ্ন মুখে খেত থেকে আলু তুলছেন চাষিরা। ধর্মদাস ঘোষ নামে এক চাষি বলেন, “আমি ৯ বিঘে জমিতে চাষ করেছিলাম। আলু তুলতে গিয়ে দেখি, সব আলুর গায়েই কালো ছোপ পড়েছে। ব্যাঙ্ক ও গ্রামের কয়েকজনের কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। এখন এই আলু কীভাবে বিক্রি করব?” দেবব্রত ঘোষ নামে অপর এক চাষিরও বক্তব্য, “এই আলু তো ছাট হিসেবেও বিক্রি হবে না!” তিনি জানান, গ্রামের প্রায় ২৫-৩০ জন চাষি প্রায় ৫০-৬০ বিঘা জমিতে ওই সমবায় থেকে বীজ নিয়ে চাষ করেছেন। |
তিনি নিজেও ৬ বিঘা জমিতে ওই বীজ দিয়ে চাষ করেছেন। অন্তত পাঁচ হাজার বস্তা আলু উঠেছে, যার দাম ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি। কিন্তু, তা বিক্রি হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। নন্দকিশোর ঘোষ নামে এক চাষির কথায়, ‘‘এই আলু কিছুতেই বাজারে বিক্রি করতে পারা সম্ভব নয়।” দেবব্রতবাবুও বলেন, “আগে কখনও এমন বিপর্যয়ে পড়েনি আমাদের গ্রাম।”
ফকিরপুর গ্রামের খেতেও উঠেছে এমন আলু। গ্রামের চাষি শেখ হামিদ বলেন, “কালনা-২ ব্লকের বৈদ্যপুরের সিএডিপি কৃষি সমবায় থেকে কয়েকটি গ্রামের চাষিরা প্রায় ১৮৫ বস্তা বীজ কিনেছিলেন। তার মধ্যে কুফরি জ্যোতি, কুফরি চন্দ্রমুখি বীজও ছিল। সূর্য জাতের আলুর বীজও কেনা হয়েছিল। সূর্য বীজে যারা চাষ করেছিলেন, তাঁদের ক্ষতি হয়নি। কিন্তু কুফরি জ্যোতি বা চন্দ্রমুখি বীজের চাষে অনেক ক্ষতি হয়েছে।”
কালনা সিএডিপি কৃষি সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি সন্তোষ সাহানা বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি, সমিতির বীজ দিয়ে চাষ করে এমন কালো আলু বেরিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা না বলে এই ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। চাষিরা আমাদের কাছ থেকেই ওই বীজ কিনেছিলেন, তা ঠিক।”
বর্ধমান-১ ব্লকের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক সুব্রত সিংহ বলেন, “আমি ইতিমধ্যেই গ্রামগুলি ঘুরে এসেছি। তবে মাটি পরীক্ষা করেই বোঝা যাবে, কালনার ওই সমবায়ের বীজ থেকেই ওই রোগ হয়েছে কি না। তবে এলাকার আলুগুলি যে রোগগ্রস্ত, আমি তার রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।” রাজ্য বীজ শংসাপত্র দফতরের অন্যতম আধিকারিক বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, “ অনেক সময়ে মাটিতে অম্লতা বেড়ে গেলে ওই রোগ দেখা যায়। আবার বীজ থেকেও এই রোগ হয়। এ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত দরকার। বীজের ত্রুটিতে চাষিদের ক্ষতি হয়ে থাকলে ওঁরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, তা অবশ্যই দেখব আমরা।” |