সড়ক-সেতুর নির্মাণে ত্রুটি রেখেছে রাজ্য, বলল রেল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
উদ্বোধন নিয়ে কাঁটা তো ছিলই। এ বার দুর্গাপুর-বাঁকুড়া হাইওয়েতে রেললাইনের উপরে তৈরি হওয়া সড়ক-সেতুর ‘নির্মাণগত ত্রুটি’ নিয়ে দেখা দিল সমস্যা।
তড়িঘড়ি সেতুটির উদ্বোধন করে রাজ্য সরকার প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে গেলেও এখন এই প্রশ্নেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাল্টা প্যাঁচে ফেলার কৌশল নিয়েছে রেল মন্ত্রক। রাজ্যের দায়িত্বে নির্মিত সেতুটির অংশে গঠনগত ত্রুটি রয়েছে এ কথা জানিয়ে আজ রাজ্য পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়েছেন আসানসোলের ডিভিশন্যাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম)।
রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, দুর্গাপুর-বাঁকুড়া হাইওয়েতে ওই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৭-এ। নিয়মানুযায়ী, এই জাতীয় ‘রোড ওভারব্রিজে’ নির্মাণের দায়িত্ব যৌথ ভাবে থাকে রেল ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাতে। সাধারণত লাইনের উপরের অংশটি রেল বানায়। আর দু’দিক থেকে সেতুতে ওঠার রাস্তা নির্মাণের ভার থাকে রাজ্যের। গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি সেতুর উদ্বোধন করে দিলেও রেল মন্ত্রকের অভিযোগ, তার একাধিক কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে।
এবং বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানিয়ে পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়েছেন আসানসোলের ডিআরএম এসএস গহলৌত। যদিও রাজ্য সরকার তা আদৌ করবে কি না, সে ব্যাপারে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী সংশয়ে রয়েছেন। তাঁর কথায়, “সেতু নির্মাণে রাজ্যের যে দায়িত্ব ছিল, তা তারা পালন করতে পারেনি। অথচ কৃতিত্ব নেওয়ার বেলায় এক পা এগিয়ে রয়েছে! মমতা সম্পূর্ণ তুঘলকি আচরণ করেছেন। উনি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করতে পারেন। রেল তো করতে পারে না! এর সঙ্গে মানুষের সুরক্ষা জড়িয়ে রয়েছে। তাই রাজ্যকে তাদের ত্রুটি সারিয়ে দিতে বলা হয়েছে।”
কিন্তু রাজ্য ত্রুটি না-সারালে? “সে ক্ষেত্রে আমাদেরই তা করতে হবে।” বলেন অধীরবাবু। ত্রুটি ঠিক কী রকম?
ডিআরএমের চিঠিতে বলা হয়েছে, সেতু নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য, পথচারীদের লাইন পারাপার নিরাপদ করা। তাই কথা হয়েছিল, লাইনের কাছ থেকে সেতুতে ওঠার জন্য সিঁড়ি বানিয়ে দেবে রাজ্য সরকার, চূড়ান্ত নকশায় থাকা সত্ত্বেও যা তৈরি হয়নি। ফলে সেতু নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে। মানুষকে সেতু পেরোতে গেলে দু’প্রান্ত থেকে উঠতে হচ্ছে, হাঁটতে হচ্ছে গাড়ি-লরির সঙ্গে। এবং সেতুর মাঝখানে (রেলের অংশে) পথচারীদের জন্য ফুটপাথ থাকলেও রাজ্যের বানানো দু’প্রান্তের ওই অংশে ফুটপাথ নেই। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা পুরোমাত্রায়।
ডিআরএমের বক্তব্য, “আপাতত রাস্তার দু’প্রান্তে বাঁশের ব্যারিকেড করে অস্থায়ী ফুটপাথ বানানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই ওই সমস্যার কথা জানিয়ে রাজ্যের পূর্ত দফতরকে দ্রুত নিজেদের কাজ শেষ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
গত ৯ ফেব্রুয়ারি কার্যত রেল মন্ত্রককে অন্ধকারে রেখে পানাগড়ের মাটি উৎসবের মঞ্চ থেকেই রিমোট কন্ট্রোলে সেতুটির উদ্বোধন করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুরু হয়েছে বিতর্ক। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন আচরণকে কংগ্রেস নেতৃত্বও ভাল ভাবে নেননি। অধীরবাবু জানিয়ে রেখেছেন, সব কাজ শেষ হওয়ার পরে নতুন করে সেতুটির উদ্বোধন হবে। |