আনন্দবাজারে অসি-যুদ্ধের দুই কিংবদন্তি
ঈশ্বর যদি শেষ অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও রানটা দিতেন
স্ট্রেলিয়া দল ভারতের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে গেল ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দামামা। প্রায় দেড় মাসের আসন্ন সিরিজের উত্তাপের আঁচ পাচ্ছি এখন থেকেই।
আমার সৌভাগ্য যে, অস্ট্রেলীয়দের বিরুদ্ধে আমি বেশির ভাগ সময়েই সফল হয়েছি এবং অনেকেই আমাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করে থাকেন। কিন্তু ঠিকঠাক উত্তর দিয়ে তাঁদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। কারণ, সঠিক উত্তরটা আমার নিজেরই জানা নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের মধ্যে যে ব্যাপারটা আমার সব সময়ই ভাল লেগেছে, তা হল ওদের অদম্য সাফল্যের খিদে। পরিস্থিতি যতই প্রতিকুল হোক, ওরা কিন্তু সব সময়ই জয়ের জন্য মরিয়া। যে কোনও অবস্থাতেই ওদের বিরুদ্ধে খেলতে নামা মানে, নিজেকে সেরা ফর্মে রাখতেই হবে। এক মুহূর্তের ভুলে সেই জায়গা থেকে সরে এলেই বিপদ। তার ফায়দা ওরা তুলবেই তুলবে। সর্বদাই নিজেকে সেরা ফর্মে রাখার এই তাগিদটাই আমার কাছে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জটাই বরাবর উপভোগ করেছি আমি। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ আমার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে যথেষ্ট মানানসই। ওদের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে আমি বড় ও দ্রুত রান করার প্রচুর সুযোগ পেয়েছি।
বনাম অস্ট্রেলিয়া

টেস্ট: ২৯
রান: ২৪৩৪
সেঞ্চুরি:
সর্বোচ্চ: ২৮১
গড়: ৪৯.৬৭
১৯৯৪-এ সেই ম্যাচটার কথা বোধহয় কোনও দিনই ভুলতে পারব না। অস্ট্রেলিয়ার যুব দলের বিরুদ্ধে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল আমাদের, অনূর্ধ্ব ১৯ দলের। হায়দরাবাদে সেই ম্যাচে খেলেছিল ব্রেট লি, জ্যাসন গিলেসপি, ম্যাথু নিকলসন, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, মাইক হাসি-রা। ম্যাচটা আমাদের পক্ষে মোটেই ভাল যায়নি। তিন দিনের মধ্যে ওরা আমাদের ইনিংসে হারিয়ে দেয়। ওই পর্যায়ের মারাত্মক পেস বোলিংয়ের সঙ্গে আমার সেই প্রথম পরিচয়। এর আগে কখনও এমন ধারালো বোলিংয়ের মুখোমুখি হইনি। সে বার প্র্যাক্টিস ম্যাচ আর ‘টেস্ট’ (অনূর্ধ্ব ১৯) ম্যাচের মধ্যে যে দীর্ঘ সময়টা ছিল, সেই সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম ভিজে টেনিস বল ও প্লাস্টিক বলে প্র্যাক্টিস করে। টেস্টে কী আসছে, তা আন্দাজ করেই সেই প্রস্তুতি। তখন সন্দীপ পাটিল আমাদের কোচ। উনি যত রকম ভাবে পারলেন, আমাদের মনোবল তুঙ্গে রাখার চেষ্টা করে গেলেন। গোটা সিরিজটাতেই আমি ভাল খেললাম। সবচেয়ে বেশি রান আমারই ছিল এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরারের চেয়ে আমার দেড়শোরও বেশি রান ছিল।
সেই সিরিজেই আপনারা অনেকে আমাকে চিনতে শুরু করলেন। পাটিল স্যর মিডিয়ার কাছে যে ভাবে আমার প্রশংসা করলেন, তাতে আমার ব্যাপারে অনেক কিছু জানতেও পারলেন সবাই। ১৯৯৬-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টে ভারতীয় দলের প্রথম এগারোয় জায়গা পেলাম না ঠিকই, তবে মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়, মার্ক ওয় এবং গ্লেন ম্যাকগ্রা-দের সেই প্রথম এত কাছ থেকে খেলতে দেখাটা ছিল এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ১৯৯৮-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমার প্রথম মাঠে নামা। মনে আছে, ইডেনে ওপেন করতে নেমে ৯৫ রান করেছিলাম। সেই প্রথম শেন ওয়ার্নকে খেললাম। তবে সেই সিরিজ নয়, প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরই আমার ক্রিকেট জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
১৯৯৯-২০০০-এর সেই সফর আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছিল। আমরা ০-৩-এ সিরিজ হেরেছিলাম বটে, তবে আমার কাছে সেই সিরিজ স্মরণীয়। কারণ, সিডনিতে, সিরিজের শেষ ইনিংসে জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি (১৬৭) পেয়েছিলাম। প্রচুর তৃপ্তি ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম সে বার।
২০০১-এ ইডেনে যে স্মরণীয় ইনিংসটা খেলেছিলাম, তা সেই আত্মবিশ্বাসের ভিতের ওপরই গড়া। আমার সেই ২৮১ রানের ইনিংসই যে ইডেন টেস্টের ছবিটা পুরো বদলে দিল, সেই ইতিহাস তো এখন সারা ক্রিকেট-বিশ্বেরই জানা। সেটাই আমার খেলা সেরা টেস্ট সিরিজ। প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে ১৬৭-র সেই ইনিংসটা আমার ক্রিকেট দর্শনকে বদলে দিয়েছিল। আর ইডেনের ইনিংসটা ক্রিকেট দুনিয়ায় ভারতের গুরুত্ব বদলে দেয়। ওই টেস্টের পর থেকে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া ভারতকে অন্য নজরে দেখতে শুরু করে। সেই সময়ের সেরা বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে আমার ওই ব্যাটিং আমাকে যে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল, তা তুলনাহীন। কিন্তু ২০১১-১২-র শেষ সফরটায় কেন রান পেলাম না তা ঈশ্বরই জানেন। তিনি যদি আমার শেষ অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও ব্যাটে রান দিতেন! কিন্তু তা আর হল কই?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.