প্রেম উদ্যাপনেও কদর বাড়ছে প্রযুক্তির। আরও স্পষ্ট করে বললে, তথ্যপ্রযুক্তির। তাই শুধু গয়নার দোকানের পসরা, শপিং মলে ছাড় বা রেস্তোরাঁর রোম্যান্টিক ডিনারে আটকে না থেকে এ বার ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র বাজার ছেয়ে গিয়েছে রকমারি অ্যাপস্-এ। ১৪ ফেব্রুয়ারির ‘হাওয়ায় ভাসা প্রেম’কে ক্যাশবাক্সে বন্দি করতে ঝাঁপিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়া।
মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ, গুগ্লের অ্যান্ড্রয়েড কিংবা অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম যে কোনও প্ল্যাটফর্মেই এখন হরেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপস্) রমরমা। সারা পৃথিবীতে এর বাজার বাড়ছে রমরমিয়ে। তবে বৃদ্ধির গতিতে ইউরোপ, আমেরিকাকেও বহু দিনই পিছনে ফেলে দিয়েছে এশিয়া। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০০৯-এ সারা বিশ্বে যত অ্যাপস্ ডাউনলোড হয়েছে, তার ৩৭ শতাংশই এশিয়ায়। পরের কয়েক বছরে অ্যাপস্-এর বাজার হিসেবে আরও আকর্ষণীয় হয়েছে এই মহাদেশ। আবার সেই এশিয়াতেও এই ব্যবসার অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হল ভারত।
ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালে দেশে ১৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে মোবাইল অ্যাপস্-এর বাজার। এর বিক্রি বৃদ্ধির নিরিখেও বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের হিসাব মাফিক, বর্তমানে ভারতে শুধু অ্যাপস্ তৈরির সংস্থার সংখ্যাই প্রায় ৯০০০। যার অধিকাংশই ডানা মেলেছে গত তিন বছরে। তাই এ হেন বাজারে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র মতো লোভনীয় উপলক্ষ্য ছেড়ে দিচ্ছে না কোনও সংস্থাই।
প্রায় সব ধরনের স্মার্ট ফোনে বিকোনোর জন্যই তৈরি হয়েছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ উদ্যাপনের অ্যাপস্। ফুল, চকোলেট, গয়না দেওয়া থেকে শুরু করে প্রেমের গানের তালিকা তৈরি। বাইরে খেতে যাওয়ার ‘প্ল্যানিং’ থেকে পছন্দের সিনেমা দেখা। প্রায় সব ক্ষেত্রেই মুশকিল আসান হিসেবে হাজির হচ্ছে অ্যাপস্। এর মাধ্যমে হৃদয় বিনিময় সেরে ফেলা যাচ্ছে পৃথিবীর দু’প্রান্তে বসেও। এমনকী কী ভাবে দিনটি কাটানো যাবে বা মান-অভিমান মেটানো যাবে, তার পরামর্শ দেওয়ার জন্য তৈরি অ্যাপস্ও নিমেষে হাজির হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে।
ভারতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র বাজার ধরতে সংস্থাগুলি কেন এত মরিয়া, তা অবশ্য স্পষ্ট গত কয়েক বছরে একে কেন্দ্র করে বাড়তে থাকা বাজারের বহরেই। রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালেই এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে সার্বিক উপহারের বাজারের পরিমাণ ছিল ১২০০ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে সেই অঙ্ক আড়ে-বহরে বহু গুণ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের মতে, এ বার এই বাজারের আয়তন অন্তত ১৫০০ কোটি। গ্রিটিংস কার্ড, গয়না, বৈদ্যুতিন পণ্য-সহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী থেকে শুরু করে বেড়াতে যাওয়ার প্যাকেজ ভ্যালেন্টাইন্স ডের বিপণন থেকে বাদ পড়ছে না প্রায় কোনও কিছুই। তাই প্রত্যাশিত ভাবেই এই বাজারের দখল নিতে অ্যাপস্-কে হাতিয়ার করে ঝাঁপিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। আজকের প্রজন্মের কাছে প্রেম নিবেদনের মতো ব্যক্তিগত বিষয়েও প্রযুক্তির এমন কদর কেন, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে তারা।
মাইক্রোসফটের দাবি, এ ধরনের অ্যাপস্-এর মাধ্যমে চটজলদি যোগাযোগ তৈরি করে ফেলতে পারে নতুন প্রজন্ম। অধিকাংশ অ্যাপস্ নির্মাতাই মনে করেন, এতে লাভ হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। যেমন, কলকাতায় বসে অ্যাপস্ তৈরি করা প্রজ্ঞাপারমিতা মিত্র বলেন, “এই সব অ্যাপস্-এর মাধ্যমে সহজেই নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে পৌঁছে যেতে পারে ছোট বিপণিগুলি। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর বয়স, পছন্দ ইত্যাদি জানা থাকায়, তাঁদের মন কাড়ার মতো অ্যাপস্ তৈরি করতে পারে তারা।” |