নন্দীগ্রামে মমতা
দুর্নীতির নালিশ, গোষ্ঠী কোন্দলের মধ্যেই আজ সভা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ, মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির তেখালিতে জনসভা করবেন বলে যুদ্ধকালীন তত্‌পরতায় মেরামত করা হচ্ছে খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট। কিন্তু তেখালির ঠিক গা ঘেঁষা ‘পরিবর্তনের আঁতুড়ঘর’ নন্দীগ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল বিন্দুমাত্র কমেনি। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের হাওয়াতেই ভর দিয়ে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। তারপর কেটে গিয়েছে পাঁচটা বছর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা হল, পঞ্চায়েতে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম কিছু হলেও তৃণমূলের নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দলও এই সময়ে চরমে উঠেছে। এমনকী, তেখালি লাগোয়া গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধান অশোক মণ্ডলের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে গাছ বিক্রির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছেন তৃণমূলেরই স্থানীয় কয়েকজন কর্মী। অশোকবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর-ও দায়ের হয়েছে নন্দীগ্রাম থানায়। এই পঞ্চায়েতের প্রথম প্রধান তৃণমূলের জহরলাল করের বিরুদ্ধেও দলেরই এক গোষ্ঠী দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। জহরলালবাবু যে জন্য শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন। এখন অশোকবাবুর উপরেও দলের ভিতর থেকেই চাপ তৈরি হয়েছে পদত্যাগ করার।
দলের এক স্থানীয় কর্মীর কথায়, “অনেক আশা নিয়েই মানুষ তৃণমূলকে এখানে ক্ষমতায় এনেছিল। কিন্তু দলের নেতাদের দুর্নীতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং দলের অনেক কর্মীই এখন হতাশ।” এক হাইস্কুলের শিক্ষক বলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষের চাহিদা ছিল পাকা রাস্তা, বিদ্যুত্‌, সেচের ব্যবস্থা, পানীয় জলের প্রকল্প এবং উন্নত স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু এত দিনে কিছু রাস্তা পাকা হয়েছে, নন্দীগ্রাম ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নতুন কিছু যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে এবং মহেশপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন বাড়ি তৈরি ছাড়া উন্নয়ন হয়নি।” স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত দেড় বছরে সেচের জন্য এলাকায় একটাও গভীর নলকূপ বসেনি। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নিরঞ্জন সিহি বলেন, “মানুষের ন্যূনতম চাহিদার অধিকাংশই এখানে অধরা থেকে গিয়েছে।”
গোকুলনগরের পাশেই সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ খুসনবির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলেরই নেতা তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শেখ সুফিয়ান। এই ঘটনা কেন্দ্র করে সুফিয়ান অনুগামীদের সঙ্গে খুসনিবর অনুগামীদের নন্দীগ্রাম বাজারে একাধিকবার সংঘর্ষও হয়েছে। লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে পুলিশকে। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন এই সব ঘটনাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, “ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন তা মিটে গিয়েছে।” তিনি দাবি করেন, “নন্দীগ্রামে বহু উন্নয়নের কাজ হয়েছে পঞ্চায়েত ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে।” সিপিএমের নিরঞ্জনবাবু অবশ্য বলেন, “খাস নন্দীগ্রামেই তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে চলে আসছে। তাই বিপদ বাড়ছে বুঝতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রী বারবার সেখানে আসছেন।” তাঁরা মনে করছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি ভরসা করেই পঞ্চায়েত ভোটের বৈতরণীও পার হতে নন্দীগ্রাম ও খেজুরি সীমানাবর্তী তেখালিকে এ বার বেছে নিয়েছেন মমতা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রাম হয়েই তেখালিতে যাবেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কুখ্যাত জননী ইটভাটার পাশেই তিনি জনসভা করবেন। তারপরে খেজুরির ভিতর দিয়ে হেঁড়িয়া হয়ে দিঘায় যাবেন তিনি। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সৈকতাবাসে রাত্রিবাস করে পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তাজপুর, মন্দারমণি, দেশপ্রাণ ব্লকের পেটুয়াঘাট মত্‌স্যবন্দর পরিদর্শন করারও কথা রয়েছে। এ দিকে, নন্দীগ্রাম আন্দোলন সংক্রান্ত মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা করুন মুখ্যমন্ত্রী, দাবি করল সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন। দলের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে জড়িত থাকায় তাঁদের ছয় কর্মী-সহ অনেকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা দেয় বাম সরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.