আরএসপি পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভার বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তা নিয়ে তৃণমূল কেন সরব নয়, সেই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। আরএসপি-তৃণমূল যোগসাজশ থাকার অভিযোগও করেছেন কংগ্রেস নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র সহ অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ওই ‘আঁতাঁত’-এর অভিযোগ সামনে রেখে গোটা জেলায় প্রচারেও নেমে পড়েছে কংগ্রেস।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রের অভিযোগ, “বালুরঘাট পুরসভায় রাস্তাঘাট, পানীয় জল সহ নানা প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মর্জিমাফিক দরপত্র বিলি, নিম্নমানের কাজের অভিযোগও রয়েছে। আরএসপি, তৃণমূলের কিছু নেতা ঠিকাদারি পান বলে অভিযোগও আছে। সে জন্যই ওই দুই দলের আঁতাত রয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। না হলে বাম শরিক পরিচালিত পুরসবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল আন্দোলনে নামছে না কেন?” পাশাপাশি, আরএসপির রাজ্য নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর স্ত্রীর রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন হওয়ার বিষয়টি টেনে এনে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশের বিষয়টি দৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন ওমপ্রকাশবাবু। আরএসপির নেতা প্রশান্ত মজুমদার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতারা।
এই ঘটনায় আরএসপি-এর জেলা নেতারা কিছুটা হলেও বিব্রত। আরএসপি সূত্রের খবর, শীঘ্রই পুরসভার তরফে প্রকল্প ভিত্তিক কাজের খতিয়ান তুলে ধরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, দলের নেতারাও জেলা সদরের সভা-সমাবেশ করে পাল্টা প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরএসপি নেতা তথা প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, “ওমপ্রকাশের বক্তব্যের ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করব না। ওই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ জবাব আমরা দেব না।” জেলা স্তরের একাধিক নেতা জানান, তাঁর পুরকাজের তথ্য-পরিসংখ্যান শীঘ্রই জনসমক্ষে পেশের দাবি তুলেছেন।
আরএসপির সঙ্গে যোগসাজশের অবিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব খাঁ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন বলেই আরএসপি-র তরফে প্রশংসা করা হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “কংগ্রেস কোণঠাসা হয়ে প্রলাপ বকছে। অতীতে তৃণমূল পুরসভার দুর্নীতির বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন করেছে এবং এখনও করছে। আগে কংগ্রেস হাত গুটিয়ে বসেছিল কেন তার জবাব দিক।”
কংগ্রেস অবশ্য আসরে নেমে পড়েছে। গত বুধবার দুপুর ২টা থেকে শহর ও ব্লক থেকে কংগ্রেস কর্মীরা গিয়ে পুরসভা ঘেরাও করে। বিকেল ৪টা নাগাদ স্মারকলিপি দিতে গিয়ে প্রকল্প ধরে ধরে হিসাবের খতিয়ান জানতে চান জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। সদুত্তর না পেয়ে পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চেম্বারে ঘেরাও হয়ে থাকেন আরএসপি নেত্রী চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস। ১৫ দিনে হিসাবের খতিয়ান দেওয়ার শর্তে প্রায় ৩ ঘন্টা বাদে তিনি ঘেরাও মুক্ত হন। এ বিষয়ে চেয়ারপার্সন বলেন, “নিয়ম মেনে কাজ হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ ঠিক নয়। স্মারকলিপির নামে কংগ্রেস রাজনৈতিক শিষ্টাচার মানেনি।”
এই ব্যাপারে প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী থেকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, “গত বিধানসভা ভোটের সময় দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে আসন ভাগাভাগিতে একমাত্র কুশমন্ডি আসনটি পেয়েছিল কংগ্রেস। জোটের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাকি ৫ টি আসনে ভোটের প্রচার করলেও যাননি ওই কুশমন্ডির আসনটিতে। আরএসপি কুশমন্ডিতে জিতে যায়। বাকি ৫টি আসনে তৃণমূল পায়।”
সম্প্রতি বুনিয়াদপুরে একটি রেলের ওয়াগান কারখানার শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রকাশ সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কৃষক দরদী’ বলে মন্তব্য করেন বালুরঘাটের আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার। রাজ্যে ধান কেনা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি দরাজ সার্টিফিকেট দেন। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায় বলেন, “সিপিএম, আরএসপি সহ বামেদের বিরুদ্ধে কারা আন্দোলন করে, তার সার্টিফিকেট কংগ্রেসকে দিতে হবে না। বাংলার মানুষ তা জানেন।” বরং বামপন্থীদের সহযোগিতা নিয়ে কংগ্রেস রাজ্যে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে তৃণমূল নেতা প্রবীরবাবু পাল্টা অভিযোগ করেন। |