বনধ-সংস্কৃতি বাসা বেঁধেছে মনে: প্রধান বিচারপতি
নধ-ধর্মঘট ও ছুটির সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে যে ভাবে বাসা বেঁধেছে, হাইকোর্টের কড়া নির্দেশও তাতে দাওয়াইয়ের কাজ করবে না বলে মনে করছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র। শুক্রবার বনধ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির সময় এমনই আক্ষেপ করেছেন তিনি।
আগামী ২০ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি যে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, তা বাতিলের নির্দেশ দিতে হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তৃণমূলের আইনজীবী সেলের ইদ্রিশ আলি। ওই মামলার শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে। এ দিন শুনানির সময় বিচারপতি মিশ্র বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে কমসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা যায় না। বিষয়টা মানুষের অন্তর থেকে আসতে হয়। অন্তর সায় না দিলে কাজ করার সংস্কৃতি আসে না।”

অরুণকুমার মিশ্র
প্রধান বিচারপতি বলেন, বন্ধ হলে এ রাজ্যের কিছু মানুষ খুশি হন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষেরই ক্ষতি হয়। আবেদনকারীর উদ্দেশে বিচারপতি মিশ্র বলেন, “আইনজীবী বা চিকিৎসকেরা যদি কাজ করতে না চান, তা হলে হাইকোর্ট কড়া নির্দেশ দিয়েও কিছু করতে পারবে না।” আগামী সপ্তাহে ওই মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, হাইকোর্ট বনধের বিরুদ্ধে রায় দিলেই তার ফল ইতিবাচক হবে না। কারণ জোর করে মানুষের স্বভাব বদলানো যায় না।
কর্মসংস্কৃতি যে চাপিয়ে দেওয়া যায় না, সে কথা বোঝাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বার বার চিন ও জাপানের প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) এত কম কেন? তার মূলে কর্মসংস্কৃতির অভাব। চিন এখন অর্থনীতির শিখরে। তাদের জিডিপি ঈর্ষা করার মতো। এর মূলে রয়েছে, সে দেশের মানুষের কাজ করার ইচ্ছা। বিচারপতি মিশ্র বলেন, কর্মক্ষেত্রে কাজ ও ছুটি দু’টিই দরকার। কিন্তু চিন, জাপানের লোকেরা কাজের সময় কাজ করেন অন্তরের তাগিদে। হাইকোর্ট বা বাইরে থেকে এই সংস্কৃতির আমদানি করা যায় না।
এ রাজ্যে কর্মসংস্কৃতির হাল কী, তা কলকাতা হাইকোর্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শুনে এসেছিলেন বিচারপতি মিশ্র। নতুন কোনও বিচারপতি বা প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেওয়ার দিন আদালতের দ্বিতীয় পর্বের কাজ বন্ধ রেখে সংবর্ধনা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। সেই রেওয়াজ বন্ধ করতে উদ্যোগী হন বিচারপতি মিশ্র। আদালতের কাজ যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বিরতির সময়ে করার অনুরোধ জানান তিনি। বিরতির সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলেও, তা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সে দিন দ্বিতীয় পর্বে আদালতের কাজ আর হয়নি। এতে যে তিনি অসন্তুষ্ট, ঠারেঠোরে উদ্যোক্তাদের সে কথা জানিয়েও দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।
ছুটির সংস্কৃতি নিয়ে ফের আইনজীবীদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বিরোধ বাধে ২১ জানুয়ারি। ২০ জানুয়ারি ছিল হাইকোর্টে সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। তার জেরে পরের দিন, অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি হাইকোর্ট বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। প্রধান বিচারপতি মিশ্র সেই আর্জি খারিজ করলেও, আইনজীবীরা কাজ করেননি। তবে হাইকোর্টের সব বিচারপতি সে দিন এজলাসে বসে বুঝিয়ে দেন, হুটহাট ছুটি বন্ধে তাঁরাও প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে সামিল।
বিচারপতি মিশ্রের কড়া মনোভাব অবশ্য একেবারে বিফলে যায়নি। ২২ জানুয়ারি কলকাতার প্রাক্তন মেয়র কমল বসুর মৃত্যুতে কিন্তু ছুটি নেননি আইনজীবীরা। সে দিন হাইকোর্টে পুরো সময় কাজ হয়। কোনও কর্মরত বা প্রাক্তন আইনজীবীর মৃত্যু হলে শোক প্রকাশের জন্য এক দিনের ছুটি নেওয়ার যে রীতি চালু ছিল, তারও পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। মাসের কোনও একটা দিন দ্বিতীয়ার্ধে শোকজ্ঞাপনের রীতি চালু হতে চলেছে হাইকোর্টে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.