|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ১... |
|
তিনি অফুরান, তাঁকে জানা ফুরোয় না |
শিলাদিত্য সেন |
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কম লেখালেখি হয় না, তবু তাঁকে নিয়ে লেখার বিষয় ফুরোয় না। এই যে তাঁর দেড়শো বছর উপলক্ষে তো বিস্তর লেখালেখি হল, তবু তাঁকে নিয়ে কাজ চলছেই। নতুন-নতুন বই, নতুন-নতুন ভাবনা। আসলে তিনি অফুরান, তাঁকে জানা ফুরোয় না বলেই তাঁকে কেবলই নতুন ভাবে আবিষ্কার করার চেষ্টা করি।
পিনাকেশ সরকার যেমন তাঁর রবীন্দ্রচর্চার নানা প্রসঙ্গ-এ (এবং মুশায়েরা, ৩০০.০০) কবির বিবিধ সৃষ্টি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কবিকে এক সামাজিক ব্যক্তিত্বের নিরিখেও দেখার চেষ্টা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের বন্ধুবৃত্ত, শিক্ষাচিন্তা, সম্প্রীতি ও সংহতি ভাবনা, বা এমন নানাবিধ বিষয়ে আলোচনা তাঁর। আবদুশ শাকুরও চান কবির অন্তর্গত মানুষটিকে আবিষ্কার করতে, রবীন্দ্রনাথও মানুষই ছিলেন (দীপ, ৩০০.০০) বইয়ের ভূমিকায় লিখছেন তিনি, ‘রবীন্দ্রনাথকে সঠিক সম্পাতে দেখার, চেনার এবং জানার অজেয় অন্তরায়টি হল যুগের পর যুগ ধরে বাঙালির মগজের ভাঁজে ভাঁজে রক্ষিত ও মজ্জার খাঁজে খাঁজে গচ্ছিত তাঁর দুরপনেয় একটি ভাবমূর্তি তিনি মানবিক ত্রুটির উর্ধ্বে, এমনকি সকল দোষেরই উর্ধ্বে।’ দিগ্বিজয় দে সরকার তাঁর রবীন্দ্রনাথ ও বিদেশিনীগণ-এ (এন ই পাবলিশার্স, ২০০.০০) কবির নিঃসঙ্গ জীবনে যে বিদেশিনীরা এসেছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে জানিয়েছেন ‘এই বিদেশিনীরা কবিকে সস্নেহে ও সশ্রদ্ধায় আশ্রয় দিয়েছেন... তাঁদের কথা না জানা হলে রবীন্দ্রনাথ থাকবেন এক অসম্পূর্ণ পাঠ।’
অনিতা সাহা ও সুশান্তকুমার সামন্ত তাঁদের সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ: আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার-এ (আশাদীপ, ২০০.০০) জানাচ্ছেন যে রবীন্দ্রনাথের ‘শিক্ষা-চিন্তা, সংস্কৃতি-ভাবনা, দর্শন-চিন্তা, বিজ্ঞান-ভাবনা এককথায় তাঁর মানব উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রকৃষ্টভাবে আমাদের আচার-আচরণে, কর্ম-ভাবনায় এখনো যথেষ্ট ভাবে ব্যবহার করতে পারিনি।’ বিপ্লব মাজী’র ওরিয়েন্টালিজম, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য (সহজপাঠ, ৬০.০০) পড়লে বোঝা যায় কবিকে তিনি মনস্বী সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে দেখতে চাইছেন। লিখছেন ‘বর্তমান বিশ্বায়নে রবীন্দ্রনাথের আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়েছে।’ সুবিমল মিশ্র সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকায় প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনা (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ৮০.০০) আর পরিষৎ থেকেই বেরল প্রবীরকুমার বৈদ্য-র দুর্লভ চিত্রশোভিত পত্রিকার জগতে রবীন্দ্রনাথ (১০০.০০)। বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চায়ও কবির সৃষ্টিশীল মন থেকে তাঁর সামাজিক ব্যক্তিত্বের বিচার। আবুল হাসনাত সম্পাদিত সার্ধশতজন্মবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি/ বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা-র (নয়া উদ্যোগ, ৪০০.০০) প্রবন্ধাদিতে তারই প্রমাণ। রণেশ দাশগুপ্ত থেকে আনিসুজ্জামান এখানে কলম ধরেছেন। সন্জীদা খাতুনের মন্তব্য, ‘ভাষা-সাহিত্যের ঐতিহ্য খুঁজতে গিয়ে বাঙালি এ ধারার প্রধানপুরুষ রবীন্দ্রনাথের দিকে তাকিয়েছে।’
মালা ভট্টাচার্যের চরিত্রের অতল গহনে (পুস্তক বিপণি, ২০০.০০) রবীন্দ্রনাথের মনোবিশ্লেষণমূলক উপন্যাস নিয়ে গবেষণা। ইংরেজি অনুবাদ ও ভূমিকা-সহ কবির নৃত্যনাট্যগুলি অ-বাংলাভাষী পাঠকের কাছে পৌঁছে দিলেন উৎপল কে ব্যানার্জি: টেগোরস ড্যান্স-ড্রামা অমনিবাস (নিয়োগী বুকস, ৩৯৫.০০)। রয়েছে তাসের দেশ, শাপমোচন, চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা, চণ্ডালিকা, মায়ার খেলা। নিয়োগী বুকস থেকেই বেরল কবির গানের নির্বাচিত অনুবাদ। অরুণ চক্রবর্তী-কৃত এই সংস অব টেগোর (২৯৫.০০) বইটির ভূমিকা লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ডিভোশন, লাভ, মাদারল্যান্ড, সিজনস, মুডস এমন নানা পর্যায়ে রবীন্দ্রগানকে ভাগ করেছেন অরুণ।
কবির জীবনবৃত্তান্ত ভারী চমৎকার ছবি আর লেখায় ছাপা হয়েছে ঢাকা-র প্রতীক থেকে। একটি হায়াৎ মামুদের সম্পাদনা ও আলমগীর রহমানের চিত্রিত সংস্করণ রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা (২৫০.০০)। অন্যটিও আলমগীরের পরিকল্পনায় কিশোরদের জন্যে লেখা কবির চিত্ররূপময় জীবনী হায়াৎ মামুদের কলমে: রবীন্দ্রনাথ (৪০০.০০)। রবীন্দ্রজীবনের শেষ এক বছর নিয়ে বিরাটি থেকে একটি বিশেষ সংখ্যাও বের করেছে কবিতাবাসর (সম্পা: প্রভঞ্জন হালদার)। গৌরচন্দ্র সাহা সংকলন করেছেন রবীন্দ্রজীবনপ্রবাহ/ কালানুক্রমিক বর্ষপঞ্জি (পত্রলেখা, ৩৫০.০০), আর তাঁরই সংকলন ও সম্পাদনায় শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয় নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিঠি ভূপেন্দ্রনাথ সান্যালকে (১৫০.০০)। রবীন্দ্রনাথের মানসলোকে বিভিন্ন ঋতুর যে বিশেষ স্থান ছিল, তাই নিয়েই কেতকী সর্বাধিকারীর বই ঋতুর দরবারে রবীন্দ্রনাথ (পুস্তক বিপণি, ১২০.০০)।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জ্ঞানদানন্দিনী, স্বর্ণকুমারী, মাধুরীলতা কেউই বাদ ছিলেন না গল্প লেখায়। তাঁদের সৃষ্টি নিয়েই বেরিয়েছে ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের গল্প (সংকলন ও সম্পা: প্রত্যুষকুমার রীত। পুনশ্চ, ৩০০.০০)। |
|
|
|
|
|