ঘর নেই, মিড-ডে’র রান্না পুকুরের জলে
ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপে বেহাল শিশু-শিক্ষাকেন্দ্র
লতি দশকের শুরুতে শিক্ষার অধিকার আইনের মাধ্যমে রাজ্যে জেলায় জেলায় তৈরি হয়েছিল শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে ওই সব কেন্দ্রের বেশিরভাগেরই দূরবস্থা। ফলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে। কোথাও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের ছাদ নেই। কোথাও নেই ভবন। কোথাও মিড-ডে মিলের রান্নার জল জোগাড় করা হয় পুকুর থেকে। সম্প্রতি ঘুরে দেখা গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলির বেশিরভাগের অবস্থা এমনই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সাল নাগাদ শুরু হয়েছিল এই প্রকল্প। মূলত যে সব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেই এলাকার ছেলে মেয়েদের স্কুলমুখী করাই ছিল উদ্দেশ্য। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলি দেখভালের দায়িত্বে আছে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি। এই সব কেন্দ্রে চুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ডায়মন্ড হারবার মহকুমার ডায়মন্ড হারবার ১ ও ২, ফলতা, মগরাহাট ১ ও ২, কুলপি, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর ১ ও ২ এবং কাকদ্বীপ মহকুমার কাকদ্বীপ, সাগর, নামখানা ও পাথরপ্রতিমা ব্লকে চলছে এই প্রকল্প। কিন্তু ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকে ২২টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে ১১টিরই নিজস্ব ঘর নেই। একই অবস্থা ডায়মন্ড হারবার ২-এর। এখানে ৩৩টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে ১০টির ঘর নেই। ফলতা ব্লকে ৩৫টির মধ্যে ১২টি, মগরাহাট ১ ব্লকে ৩১টির মধ্যে ২৯টি, মগরাহাট ২ ব্লকে ২৫টির মধ্যে ১৩টির নিজস্ব ঘর নেই।
ইনসিনবেড়িয়া গ্রামে শিশু-শিক্ষাকেন্দ্রের চেহারা।—নিজস্ব চিত্র।
কুলপিতে ৩৫টির মধ্যে ৩টি, মথুরাপুর ১ ব্লকে ৫০টির মধ্যে ২টি, মথুরাপুর ২ ব্লকে ৪৮টির মধ্যে ৫টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের একই হাল। কাকদ্বীপ মহকুমার ছবিটাও একই রকম। কাকদ্বীপ ব্লকে ৭৬টির মধ্যে ১০টি, সাগরে ৫৮টির মধ্যে ২৮টি, নামখানায় ৮০টির ১০টি ও পাথরপ্রতিমায় ১২৮টির মধ্যে ৩টির নিজস্ব ঘর নেই।
বেহাল পরিকাঠামোর জন্য শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্র ছাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। মথুরাপুরের ইনসিনবেড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল তেমনই ছবি। গ্রামে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ২০০১ সালে ইনসিনবেড়িয়া শিশু শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি অনুমোদন পায়। ওই শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকারা প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৮ শতক জমি কিনে মাটির ঘর তৈরি করে পড়ানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আয়লায় ঘর ভেঙে যায়। তারপর থেকে খোলা আকাশের নীচেই চলছে শিক্ষাদান। বর্তমানে এই কেন্দ্রটিতে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ৯৪ জন। শিক্ষিকা রয়েছেন ৩ জন। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই নেই শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা। চারপাশের ঝোপঝাড়ের মধ্যে একটি উঁচু জায়গা বেছে সেখানেই চলছে পঠন পাঠন। মিড ডে মিল রান্নার জন্যও নেই ভাল জায়গা। শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাওয়াজ খাতুন বলেন, “আয়লায় ঘর ভেঙে যাওয়ার পর ব্লকে আবেদন করে ত্রিপল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এখনও নিজস্ব ঘর তৈরি করা যায়নি।” তাঁর ক্ষোভ, “বর্ষার সময় দুর্ভোগের সীমা থাকে না।” সহকারী শিক্ষিকা সাবেরা খাতুন বলেন, “এই কেন্দ্রে আসতে গেলে ২০ ফুটের একটি খাল পেরিয়ে আসতে হয় শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের। পাকা সেতু না থাকায় আমরাই কাঠ ও বাঁশ দিয়ে কোনওরকম একটি সেতু তৈরি করে বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করেছি।”
শিশু শিক্ষাকেন্দ্র গুলির সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসক কৌশিক ভট্টাচার্য এবং কাকদ্বীপের মহকুমা শাসক অমিত নাথও। তাঁদের বক্তব্য, “অর্থের তেমন সমস্যা না থাকলেও শিক্ষাকেন্দ্রের ঘর তৈরির জন্য জমি পাওয়া নিয়ে সমস্যার কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘর তৈরি করা যাচ্ছে না।” তবে মথুরাপুরের বিডিও সৌমেন মাইতির আশ্বাস, “এই শিক্ষাকেন্দ্রের ঘর তৈরির জন্য টাকার অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।”
তত দিন অবশ্য ‘আশ্রয়হীন’ পড়ুয়ারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.