সঙ্গীত সমালোচনা...
ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন
কনকনে শীতেও সঙ্গীতের উষ্ণতা
নকনে শীতে কলকাতার সঙ্গীতরসিক মানুষকে উষ্ণতা এনে দেয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর। ডোভার লেন এদের মধ্যে অগ্রগণ্য। একষট্টি বছরে পড়লেও আজও নবীন। আপামর সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের ভালবাসায় এবং শুভেচ্ছায় এটা সম্ভব, বললেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ্তশঙ্কর সেন। বিশ্ববন্দিত শিল্পী রবিশঙ্করের স্মরণে প্রথম তিন দিন এবং শেষ দিন মানস চক্রবর্তীর স্মরণে এ বারের সম্মেলন উৎসর্গীকৃত।
প্রতি বছরের মতোই এ বারেও সম্মেলনের বৈশিষ্ট্যগুলির উপস্থাপনা ছিল যথারীতি। যেমন সম্মাননা জ্ঞাপন এবং নবীন প্রতিভার সন্ধানে প্রতিযোগিতায় কৃতী প্রার্থীদের পুরস্কার অর্পণ। মার্গসঙ্গীতের একজন বিদগ্ধ শিল্পীকে প্রতি বার ‘সঙ্গীত সম্মান’-এ ভূষিত করে সম্মেলন। এ বার এই পুরস্কার পেলেন মণিলাল নাগ। রৌপ্যস্মারক, শাল, মানপত্র দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেন যৌথ ভাবে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ও সংস্থার সভাপতি বি কে চন্দ। সংস্থার সম্পাদক বাপ্পা সেন ছিলেন ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দায়িত্বে।
মিতা পণ্ডিতের খেয়াল গায়নের মাধ্যমে সম্মেলনের শুভ সূচনা। কণ্ঠটি সুরেলা ও মিষ্টি। কড়ি মধ্যমের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহারে রাগ বেহাগ তাঁর কণ্ঠে শ্রুতিমধুর হয়ে ওঠে। বোলতানও ছিল বেশ উপভোগ্য। পরবর্তী নিবেদন গোয়ালিয়র অনুসারী কাফি অঙ্গের টপ্পা। শেষে সুখশ্রাব্য পিলু ঠুংরি। হারমোনিয়ামে প্রদীপ পালিত। তবলায় আনন্দগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন স্বস্তিদায়ক। প্রথম দিনের দ্বিতীয় উপস্থাপনা পণ্ডিত রবিশঙ্করের দুই যোগ্য উত্তরসূরি পার্থসারথি ও কার্তিক শেষাদ্রির সরোদ-সেতারে যুগলবন্দি। রাগ রবিশঙ্কর সৃষ্ট চারুকোষ। চারুকেশী ও মালকোষের সংমিশ্রণে এই রাগের উদ্ভব। রসঋদ্ধ আলাপে সুরের বিস্তৃতি ও ছন্দের বাহার ছিল। রেওয়াজি ধ্বনি, মাধুর্যে ভরা হাতে বোলবাণীর পরিণত প্রয়োগ আবেশ আনে। চার তাল কী সওয়ারি গতে ছিল ছোট ছোট বৈচিত্রময় তেহাইয়ের মানানসই প্রয়োগ। দ্রুত গতটিও ছিল মনোরম। তবলায় এঁদের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন অরূপ চট্টোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রনীল মল্লিক। যুগলবন্দির শেষে সঙ্গীত পরিবেশনে আসেন সঞ্জীব অভয়ঙ্কর। চয়নে ছিল রাগ মালকোষ।
স্বল্প আলাপের পর দরাজ কণ্ঠে নান্দনিক প্রয়োগে ম গ ম ধ ন ধ ম গ স মধ্যরাত্রির এক শান্ত গম্ভীর চেতনায় শ্রোতৃকুল আপ্লুত হয়ে ওঠে। মধ্যলয়ে বিভিন্ন ওজনদার তান ও গমক বিস্ময়াবিষ্ট করে। শিল্পী ক্রমান্বয়ে ভিন্ন ষড়জে শুদ্ধ গান্ধার ও মধ্যমের প্রয়োগে স গ ম ধ ন র্স এবং মুন্সিয়ানার সঙ্গে পঞ্চমের ব্যবহার করেন। তাঁর গুরুসৃষ্ট বন্দিশ সুখপ্রিয় শ্যাম সত্যিই প্রিয়সান্নিধ্য অনুভব করায়। সনাতন গোস্বামীর হারমোনিয়াম ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তবলা বাদনে অনুষ্ঠানটি মরমি হয়ে ওঠে। ক্রমে একতালে তারানা হোরি গীত এবং সব শেষে হিন্দি মীরার ভজন ‘রামনাম সুখদায়ী’ এক কথায় অনবদ্য উপস্থাপনা।
মধ্য রাতকে স্বাগত জানিয়ে মঞ্চে এলেন শাহিদ পারভেজ। বাজালেন রাগ দরবারি। নিমেষে সকলকে বিষণ্ণতায় আপ্লুত করেন। সুস্থিত আলাপের পর জোড় এবং ঝালা পরে সুরেলা ধ্বনির অনুরণনে যেন শান্ত শরীরী দরবারির প্রতিচ্ছবি প্রতিভাত হয়। জোড় অঙ্গে গমকের আন্দোলন অবাধ বিচরণে শিল্পী আদায় করে নেন শ্রোতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা। তাঁর বাঁ হাতের সূক্ষ্ম মিড়ের আবেদন সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই। এর পর সব শেষে মাঝ খাম্বাজে দু’টি ধুন ‘আও কঁহাসে ঘনশ্যাম’ এবং ‘মোরে নটঘট নন্দলাল’ বাজিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন তিনি। সাবির খানের তবলায় সরস সহযোগিতা এক কথায় অনবদ্য।
প্রথম রাতের শেষে মঞ্চে আসেন উল্লাস কোশলকর। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন কোমল ঋষভ আশাবরীতে। সুস্থির আলাপের পর বিচিত্র ছন্দের কত মনোজ্ঞ তেহাই। তিলুয়াড়ায় বাহারি সরগম, দ্রুতলয়ে ওজনদার তানকর্তবে তাঁর সুরেলা কণ্ঠ ও আবেগময় অভিব্যক্তিকে সুচারু রূপে ব্যবহার করেন। সহযোগী কণ্ঠে ওঙ্কার দাদারকার গুরুকে বিশ্বস্ত সহযোগিতায় তারিফ আদায় করেন। শেষের রাগ ভৈরব বাহার। বন্দিশটি অসাধারণের মাপকাঠিকে অতিক্রম করে যায়। স্বভাবসিদ্ধ দক্ষতায় প্রবীণ শিল্পী উন্মোচন করেন রাগের শান্ত ও চঞ্চল রূপ। ওঙ্কারের মতো তবলায় বাহবা আদায় করে নেন সুরেশ তলোয়ারকার। উল্লাসের শেষ নিবেদন ছিল ভৈরবী ঠুংরি।
দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম শিল্পী আরশাদ আলি। তাঁর শুদ্ধকল্যাণে আরোহণে ভূপালীর চলন এবং অবরোহণে ইমনের ছোঁয়ায় রাগের শুদ্ধরূপ প্রকাশিত হয়। শিল্পীর পরবর্তী নিবেদন দেশরাগে ‘করম কর যাই’ বন্দিশটিতে আরোহী অবরোহীতে শুদ্ধ নিষাদ ও কোমল নিষাদের ব্যবহার মনোজ্ঞ অনুভূতি আনে। নিখুঁত সুরেলা তানকারি মনে দাগ কাটে। তবলায় সমর সাহার সংযমী সরস বাদনশৈলী অনন্য প্রাপ্তি। অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তোলে রূপসী ভট্টাচার্যের হারমোনিয়াম।
এর পরের অনুষ্ঠান সন্তুরের। শিল্পী শিবকুমার শর্মা। তবলায় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। নির্বাচিত রাগ যোগকোষ। আলাপ জোড় ঝালার পর রূপকে নিবদ্ধ গত। শিবকুমার অনিন্দ্য মানে মণিকাঞ্চন যোগ। বাজনাতেও তার প্রত্যাশিত আনন্দের সঞ্চার। রূপক গতে সঙ্কীর্ণ জাতি ও তিন তালের ছন্দের অবতারণা এবং দ্রুত তিন তালে বন্দিশটি বারো মাত্রার মোকামে বাজনাটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। সাথ সঙ্গত সওয়াল জবাব শিবজির সঙ্গে অনিন্দ্যর অনিন্দনীয় ভূমিকা। দু’টি ধুন- পাহাড়ি ও জম্মু প্রদেশের বাজিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। বর্ণময় উপস্থাপনা।
কিরানা ঘরানার কণ্ঠশিল্পী কৈবল্যকুমার গুরব আভোগী দিয়ে উপচার সাজান। সীমিত পরিসরে আলাপটি নিষ্পন্ন হলেও বিন্যাস পরিকল্পনার নিরিখে তা ছিল সুগঠিত। ছুটতান, আটগুণের, তান সঙ্গতির বিচ্ছুরণ এবং সুস্থিত গমক উল্লেখযোগ্য। দ্বিতীয় নিবেদন রাগ বসন্ত। শুদ্ধমধ্যমের নান্দনিক প্রয়োগ ও পঞ্চমের ব্যবহার রাগরূপায়ণের অলঙ্কারে বৈচিত্রে অংশটি উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ‘এক সুর চরাচর ছায়য়ো’ ভজনটিতে কোমল ঋষভের ছোঁয়ার যে আমেজ তা হৃদয়কে স্পর্শ করে। কলাবতীর তারানাটিও শিল্পী সাজিয়ে নেন ছোট নানা তেহাইয়ে। হারমোনিয়ামে হিরণ্ময় মিত্র ও তবলায় সুজিত সাহা ছিলেন শুরু থেকে শেষ সুসহযোগী।
যন্ত্রের উপর অসাধারণ দখল দেখিয়ে গেলেন সেতারি নিশাদ খান। বাজালেন রামকেলী। আলাপ জোড় ঝালার পর বিলম্বিত তিনতালে শুদ্ধ ও তীব্র মধ্যমকে আরোহী ও অবরোহীতে অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। বিলায়েতি ঢঙের বাজনা। রামকেলির পর যোগিয়া মুখড়াকে সঙ্গী করে ছন্দের বিভাজন এবং বিদ্যুৎ গতিতে তান, লয়কারি একহারা তানের ডালি সাজিয়ে গতের মুখে ফিরে আসায় রাখেন অসম্ভব তৈয়ারির নিদর্শন। শেষে শিল্পী নিজসৃষ্ট বাংলা গান গেয়ে তা সেতারে বাজিয়ে দেখান। সব শেষে ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’। তবলায় রসিদ মুস্তাফা থেরাকুয়া-র সযত্ন সহযোগিতা শিল্পীকে আশ্বস্ত রাখে।
এ দিনের সমাপ্তি শিল্পী পরভিন সুলতানা। দিনের প্রথম আলোকে স্বাগত জানিয়ে কণ্ঠে নিলেন গুর্জরী টোড়ি। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও তাঁর মাধুর্যময় কণ্ঠের বিস্তারের নিমেষেই রাগরূপ পরিগ্রহ করে। ত্রিসপ্তকব্যাপী অনায়াস বিচরণ তানকারি দ্রুত অতিদ্রুত পঞ্চমকে আড়াল করে চকিত স্বরাবলির অতি তারায় নিক্ষেপণ সত্যিই বিস্ময়কর। মিশ্র কিরবানিতে সাঁই ভজন, শেষে ‘ভবানী দয়ানী ভৈরবী’তে তাঁর অনুষ্ঠান শেষ হয়। হারমোনিয়ামে দেবপ্রসাদ দে ও তবলায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় পরভিনের দুই বিশ্বস্ত সঙ্গীর ভূমিকা পালন করেছেন।
তৃতীয় অধিবেশনের নান্দীপাঠ হয় মিতা নাগের সেতারে। চয়িত রাগ নায়কী কানাড়া। বিষ্ণুপুর ঘরানার বিদ্যমান শৈলীতে ধ্রুপদাঙ্গের আলাপ জোড় ঝালার পর মূল অনুধ্যানে ফিরে আসা মন্দ্র ও মধ্যসপ্তকে বিস্তার শেষে পাহাড়ি তান তেহাই অসামান্য দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করে। পিলু রাগে একটি ধুন বাজিয়ে তাঁর বাদনশৈলীর ইতি টানেন। তবলা সহযোগিতায় চমক ছিল। মহিলা তবলিয়া অনুরাধা পাল (আল্লারাখা খান সাহেবের ছাত্রী)-এর সঙ্গত শ্রোতাদের আনন্দ দেয়।
মোহন বীণা নিয়ে আসরে এলেন বিশ্বমোহন ভাট। মারুবেহাগের সুবিন্যস্ত আলাপ জোড় ও ঝালার নিবেদনে রাগটি প্রাণপ্রতিষ্ঠা পেল। একহারা তানের দাপট, অসাধারণ লয় বিভাজন এবং কী অসাধারণ সব তেহাই। নানা ছকের দৃপ্ত তানের মূর্ছনায় চারপাশের পরিবেশ মুহূর্তে তাঁর আয়ত্তে এসে যায়। শেষে ধুন বাজিয়ে পরিবেশনের পরিসমাপ্তি ঘটান। সহযোগী তবলাবাদক রামকুমার মিশ্রকে কুর্নিশ জানাতে হয়। মূল শিল্পীর সঙ্গে সমঝোতা অসাধারণ।
বেনারসের ছান্নুলাল মিশ্র গানে ও কথায় তাঁর অনুষ্ঠানটিকে সাজিয়ে দেন। শ্যামকল্যাণে খেয়াল শুনিয়ে তিনি নানা ধরনের নানা যুগের ঠুংরি, দাদরা হোরী (কৃষ্ণ, শঙ্কর) শোনান। হারমোনিয়ামে রঞ্জন মুখোপাধ্যায় গানের মজা রাখতে সাহায্য করেন।
রমাকান্ত ও উমাকান্ত গুণ্ডেচা ভ্রাতৃদ্বয় ধীর স্থির মেজাজে রাগ ভৈরবের আবাহন করলেন। নোম তোম আলাপে রাগের চেহারাটি ফুটিয়ে তুলতে খুব একটা বেশি সময় নেননি। দুই ভাইয়ের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া। বোলবাট বাণী বিন্যাসে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ছিলেন দু’জনেই। পাখোয়াজে অখিলেশ গুণ্ডেচা গায়কদের অনিন্দ্য অনুসরণ করেন।
আর একটি শান্ত রসের রাগ নিয়ে আসরে এলেন হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। সংক্ষিপ্ত রাগালাপে রূপক তালে রাগ প্রভাতেশ্বরীর রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠল। পরে তিন তাল। তান ছন্দ লয় তেহাই সব কিছুই উপচে পড়েছিল এই পর্বে। ডি ভি পলুসকরের প্রখ্যাত ভজন ‘পাওজি ম্যায়নে রাম রতন ধন পাও’ বাজিয়ে আসর জমিয়ে দেন। জনপ্রিয় তবলিয়া শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সঙ্গতে। শুভঙ্করের সঙ্গতে চিন্তাভাবনা, বোলের স্পষ্টতা ও তৈয়ারি সম্পর্কে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
অন্তিম দিনের প্রথম শিল্পী ছিলেন মঞ্জুষা পাতিল। শোনান বেহাগ। বিলম্বিত তিন তালে ‘মায়াকী বিন্দিয়া উছড় গয়ী’ বন্দিশটি ওজস্বী কণ্ঠ, নিখুঁত স্বরচালনা, বিস্তারে মিড়ের অবতারণা এবং লয়কারির এক সুন্দর উপস্থাপনা। দ্রুত লয়ের তারানাটি এবং শেষে সোহিনী মুন্সিয়ানার পরিচয় রাখেন। তরুণ তবলিয়া সঞ্জয় অধিকারী সঙ্গতে প্রতিশ্রুতির পরিচয় দেন।
দরবারী নিয়ে মঞ্চে আসেন তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। আলাপ জোড় ঝালার পর বিলম্বিত ঝাঁপতালে বন্দিশটি নিবদ্ধ ছিল। আলাপের অংশটি ছিল জমজমাট এবং চিত্তাকর্ষক। বোলবাণীর দাপট, মিড়ের উদারা মুদারায় আন্দোলন সুখকর। শিল্পীর পরবর্তী নিবেদন চন্দ্রনন্দন। গায়কী অঙ্গে বিস্তার গতকারিত্বে অল্প পরিসরে রাগটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই পর্বে সওয়াল জবাব সাথ সঙ্গতের কারুকাজে তেহাইয়ের অবতারণায় তেজেন্দ্র অনন্য ভূমিকায় নেন। তবলায় স্বপন চৌধুরীর অনন্যসাধারণ সঙ্গত সহযোগ সত্যিই এক অনাস্বাদিত মাধুর্য বয়ে আনে। শেষে তিলক কামোদকে আশ্রয় করে রাগমালা। ভিন্ন ভিন্ন রাগের মালা গেঁথে শিল্পীর রঙিন কল্পনাপ্রবণ মনের পরিচয় রাখেন।
যন্ত্রের পরে কণ্ঠসঙ্গীত। শিল্পী শুভদা পারদকর। নির্বাচিত রাগ মালগুঞ্জী। শিল্পীর উপহারে রীতিবদ্ধ তালিমের পরিচয় পাওয়া গেল। বিস্তারের মিড়ের পরিচ্ছন্ন ব্যবহার স্বরের ক্রমবিন্যাস রাগরূপ মূর্ত করে। দ্বিতীয় নির্বাচন পরজে আশ্রিত ঝাঁপতাল ও তিনতালে বন্দিশ দু’টি সযত্ন গায়কীতে নতুন মাত্রা পায়। শেষে মাঝখাম্বাজে তারানাও সুখশ্রাব্য।
এ রাতের চতুর্থ শিল্পী গণেশ ও কুমারেশ রাজা গোপালন দ্বৈত বেহালাবাদন পেশ করেন। মধ্যলয়ে রাগ মালকোষ আশ্রিত তিনতালের গতের শুরু। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সওয়াল জবাবের আধিক্য। শিল্পীদ্বয়ের হাতদু’টি রেওয়াজি। একতালে রাগ কিরবানীতে গান গেয়ে বন্দিশ নিবেদনে নিজ নিজ যন্ত্রে সযত্ন বিচরণ শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এই পর্বে তন্ময় বসু ও শঙ্করা নারায়ণনের তানিয়া বর্তনম্ প্রশংসার দাবি রাখে। রাগ ভিন্নষড়জে তিন তালে পরিবেশনায় পরিপূর্ণ আমেজ ছন্দিত তেহাই প্রতিভার মূল্যায়ন করে। শেষ করেন হংসধ্বনি বাজিয়ে।
সম্মেলনের সমাপনে ছিলেন শিল্পী যশরাজ। মঙ্গলম ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করে বন্দিশ বাঁধলেন আহির ভৈরোতে। উদারা মুদারায় অবাধ বিচরণ ছিল রাগের বিস্তারে। গমকের কাজ ও সরগম এ ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা বহন করে। ছোট ছোট তান ও পরে বড় তান করে মুখড়ায় প্রত্যাবর্তন এক সুন্দর আবহের সৃষ্টি করে। দ্রুত তিন তালে সরগম, গমক ও তানকর্তবে ছিলেন সাবলীল। এর পর ভজনে প্রবেশ। প্রথমে কাহারবায় ‘হে বিশ্বনাথম প্রভু জগন্নাথম’, মাঝে ‘নিরঞ্জনী নারায়ণী’ এবং শেষে ‘মাতা কালিকা’। তাঁর উদাত্ত কণ্ঠের বৈচিত্রময় সুরবিন্যাসে হৃদয়স্পর্শী হয়ে উঠেছিল এই অংশটি। তবলায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও হারমোনিয়ামে মিলিন্দ কুলকার্নি সার্থক সহযোগিতা করেন। রাতকে বিদায় জানিয়ে আহির ভৈরোর আমেজ নিয়ে এসে গেল ভোর ও অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।

ছবি: রণজিৎ নন্দী, স্বাতী চক্রবর্তী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.