|
|
|
|
|
|
বটানিক্যাল |
অব্যবস্থার বাগান |
শ্রীজীব মুখোপাধ্যায় |
ফের ভরসা সেই পায়েই!
বিগড়ে গিয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দেখানোর ব্যাটারিচালিত গাড়ি। রয়েছে আরও নানা সমস্যা। বটানিক্যাল গার্ডেনে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, পরিকাঠামোগত অসুবিধা, কম কর্মীর মতো নানা সমস্যা ছিলই। নতুন সংযোজন ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলির দুরবস্থা। বিশাল এই বাগান পর্যটকদের ঘুরে দেখাতে ২০১০-এর জুলাইয়ে দূষণহীন ব্যাটারিচালিত গাড়ি চালু করেন বাগান কর্তৃপক্ষ। মাথাপিছু ২৫ টাকা ভাড়ায় ৪৫ মিনিট বাগান ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থাও চালু হয়। অভিযোগ, মাত্র আড়াই বছরেই শিকেয় উঠেছে এই পরিষেবা। বেশ কিছু দিন ধরে ১৪টি আসন বিশিষ্ট তিনটি গাড়ি খারাপ হয়ে পড়ে আছে। গাড়িগুলি খারাপ হওয়ায় ক্ষুব্ধ পর্যটকেরা। যেমন, বেহালা থেকে বেড়াতে এসেছিলেন দেবাশিস মিত্র। তাঁর কথায়: “আমরা পাঁচ জন বয়স্ক মানুষ এসেছিলাম। ব্যাটারিচালিত গাড়ি খারাপ। ঘুরতে খুব কষ্ট হয়েছে।” |
|
বটানিক্যাল গার্ডেন সূত্রে খবর, এ বছর থেকে বাগানে ঢোকার টিকিট ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে। বিদেশিদের দিতে হবে ১০০ টাকা। ক্যামেরা এবং ক্যামেরা-সহ মোবাইলের জন্যও ২০ টাকার টিকিট কাটতে হচ্ছে। অথচ পরিষেবার উন্নতি হয়নি বলেই অভিযোগ। ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা সন্দীপ হালদার বললেন, “পরিষেবার অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। বাগানে নানা অব্যবস্থা।” বটানিক্যাল গার্ডেন ডেইলি ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সমরজিৎ মণ্ডল বলেন, “বাগানের ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। ব্যাটারিচালিত গাড়ি বন্ধ। গাছ ভেঙে পড়ে আছে। শুকনো পাতা, জঞ্জাল ডাঁই করা। বাগানের ভিতরে পানীয় জল পর্যাপ্ত নয়। শৌচাগারও খুবই নোংরা।” অভিযোগ, ২৭৩ একর বাগানে মাত্র আটটি শৌচাগার রয়েছে।
বটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার যুগ্ম অধিকর্তা হিমাদ্রিশেখর দেবনাথ বলেন, “বাগানের ভিতরে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে ২৬ জন পুলিশকর্মী থাকার কথা। কিন্তু ২-৩ জনের বেশি থাকেন না। অথচ, পুলিশ ফাঁড়ির জন্য গার্ডেন কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারকে বছরে ৯০ লক্ষ টাকা দেন।” যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “বটানিক্যাল গার্ডেনে নিরাপত্তার কোনও অভাব নেই। যথেষ্ট পুলিশকর্মী আছেন। ফাঁড়িতে পুলিশকর্মী কম থাকলে বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের জানাননি কেন? ওঁরা ক’টা অভিযোগ আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন?” |
|
সমস্যা আছে আরও। অভিযোগ, অধিকাংশ বেঞ্চ ভেঙে গিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে মাটিতে বসা ছাড়া উপায় নেই। বন্ধ ক্যাফেটেরিয়া। বাগানের এক কর্মী বলেন, “কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও সমস্যা। ডিসপেনসারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” অভিযোগ, বাগানের ভিতরের জলাশয়গুলিতে গঙ্গার জল ঢোকা এবং বেরনোর দু’টি পাইপলাইন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লকগেটগুলিও অকেজো।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, “গার্ডেনের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ২০০২-এ কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলাম। মামলা চলছে। বাগানের ২৪টি লেকের মধ্যে সংযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গঙ্গার সঙ্গে সংযোগ নেই। গাছ-গুনতি হচ্ছে না। শুকনো পাতা, ডালপালা পরিষ্কার করা দরকার। এর থেকে কয়েক বার আগুন লেগেছিল।” |
|
সমস্যার কথা স্বীকার করে বটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার যুগ্ম অধিকর্তা বলেন, “জলাশয়গুলির সংস্কার ও গঙ্গার সঙ্গে সংযোগের জন্য ৪ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। লকগেটগুলি সারানো হবে। এ বছরের মধ্যে সিপিডব্লিউডি-কে কাজ শেষ করতে হবে। পড়ে থাকা গাছগুলি ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন নিলাম করেছে। তবে কর্মীর অভাবে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। নতুন লোক নিয়োগ হচ্ছে না।”
|
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
|
|
|
|
|